Image description
মাঠ প্রশাসন » যুগ্ম সচিব হলেও ২১ ডিসিকে তিন মাসেও প্রত্যাহার করা হয়নি । » রদবদলে জনপ্রশাসন- বিষয়ক কমিটির দিকে তাকিয়ে মন্ত্রণালয় । » তফসিলের আগে ডিসি-ইউএনওদের ব্যাপক রদবদলের গুঞ্জন ।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে মাঠ প্রশাসন ঠিক করতে পারে অন্তর্বর্তী সরকার । এমনটাই ধারণা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের । তাঁরা বলছেন , এমন ভাবনার কারণেই ২১ জন জেলা প্রশাসক ( ডিসি ) তিন মাস আগে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেলেও তাঁদের ডিসি পদ থেকে প্রত্যাহার করা হয়নি । মাঠ প্রশাসনে রদবদলের কোনো উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে না । ডিসি পদায়নে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একক কর্তৃত্ব বর্তমানে নেই । অর্থ উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন জনপ্রশাসন - বিষয়ক কমিটির মতামত ছাড়া মন্ত্রণালয় ডিসি পদে রদবদল করতে পারবে না । এই কমিটি পদোন্নতি পাওয়ার পরও ডিসিদের আগের পদে সর্বোচ্চ কত দিন বহাল রাখা হয়েছিল , সেই তথ্যও মন্ত্রণালয় থেকে নিয়েছে । মন্ত্রণালয় ডিসি রদবদলে তাকিয়ে আছে কমিটির সিদ্ধান্তের দিকে ।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন , মন্ত্রণালয়ের অনেক বিষয় ঝুলে থাকলেও উপদেষ্টাদের ব্যস্ততার কারণে জনপ্রশাসন কমিটির সভা ঠিকমতো হচ্ছে না । শোনা যাচ্ছে , জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সময়কে আমলে নিয়ে ডিসি - ইউএনও পদে ব্যাপক রদবদল করা হবে ।

কারণ , তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনসংশ্লিষ্ট মাঠ প্রশাসনের সব পদায়ন-বদলির একক এখতিয়ার থাকবে নির্বাচন কমিশনের ( ইসি ) । সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন , লন্ডনে গত শুক্রবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড . মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর দেওয়া যৌথ বিবৃতি অনুযায়ী , সবকিছু সম্পন্ন হলে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি জাতীয় নির্বাচন হতে পারে । সে ক্ষেত্রে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে আগামী ডিসেম্বরে । সে হিসাবে তফসিলের বাকি আছে ছয় মাস । তাই আরেকটু অপেক্ষা করে ডিসিসহ মাঠ প্রশাসনে রদবদল করতে চায় সরকার ।

দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফিরোজ মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন , তফসিল ঘোষণার আগে আগে মাঠ প্রশাসনে রদবদল নিরপেক্ষ নির্বাচন কতটুকু নিশ্চিত করবে, সেই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে । অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকার থাকবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা । তবে কোনো ডিসিকে নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো আপত্তি জানালে নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নিতে পারবে । সরকার এবং নির্বাচন কমিশন যদি নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় তাহলে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে, এরা না চাইলে কোনোভাবেই নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না । প্রশাসন ক্যাডারের উপসচিব বা সমপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয় । জাতীয় নির্বাচনে বিভাগীয় শহরে বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলায় ডিসিরা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন । সাধারণত কোনো ডিসি যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেলে তাঁকে আর ওই দায়িত্বে রাখা হয় না ।

সর্বশেষ গত ২০ মার্চ যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেয় সরকার । ডিসির দায়িত্বে থাকা ২১ কর্মকর্তা যুগ্ম সচিব হয়েছেন । সূত্র জানায় , এই ২১ ডিসি এবং ২৪ তম বিসিএস ব্যাচের পাঁচ কর্মকর্তাকে ডিসির পদ থেকে প্রত্যাহার করতে জনপ্রশাসন - বিষয়ক কমিটির কাছে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ , পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগ ( এপিডি উইং ) । কিন্তু কমিটি এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত দেয়নি ।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন , যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়ার পর এর আগে ডিসিদের সর্বোচ্চ কত দিন পর্যন্ত আগের দায়িত্বে রাখা হয়েছিল সেই তথ্য চেয়েছিল জনপ্রশাসন - বিষয়ক কমিটি । মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয় , যুগ্ম সচিব হওয়ার পর কয়েকজনের ১০ মাস পর্যন্ত ডিসির দায়িত্বে থাকার নজির আছে । এরপর যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়া ডিসিদের প্রত্যাহারের বিষয়টি আর এগোয়নি । মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন , জাতীয় নির্বাচনের আগে সব সরকারই ডিসি পদে দেখেশুনে পদায়ন করে । অন্তর্বর্তী সরকার দক্ষ ও সৎ কর্মকর্তাদেরই ডিসি পদে পদায়ন করতে চাইবে । তবে এ ক্ষেত্রে কারও ব্যক্তিগত পছন্দকে প্রাধান্য দেওয়া যাবে না ।

তিনি শুনেছেন ডিসি পদায়ন নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে ব্যাপক চাপ রয়েছে । বর্তমানে ২৪ তম ব্যাচের ২৬ জন , ২৫ তম ব্যাচের ২৫ জন এবং ২৭ তম ব্যাচের ১৩ কর্মকর্তা ডিসির দায়িত্বে আছেন । ২৫ ও ২৭ তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ডিসি নিয়োগ দিতে তাঁদের ফিট লিস্টও তৈরি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় । তবে জনপ্রশাসন বিষয়ক কমিটির সিদ্ধান্ত না পাওয়ায় ডিসি পদে রদবদল করতে পারেনি । জেলা প্রশাসক , বিভাগীয় কমিশনার , যুগ্ম সচিব ও তার ওপরের পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের নিয়োগ, বদলি ও শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ দিতে অর্থ উপদেষ্টাকে প্রধান করে গত ৮ জানুয়ারি জনপ্রশাসন - বিষয়ক কমিটি করে অন্তর্বর্তী সরকার ।

ডিসি পদায়নের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ , পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো . এরফানুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন , “ আমরা উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি । ’ ডিসি পদে একজন কর্মকর্তাকে কত দিন রাখা যাবে , সে বিষয়ে কোনো নিয়ম নেই । ফলে সরকার চাইলেই যেকোনো সময় যেকোনো ডিসিকে পদ থেকে প্রত্যাহার করতে পারে বা রেখে দিতে পারে । বিগত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ডিসি পদে ব্যাপক রদবদল করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার । এতে নিয়োগের এক মাসের মধ্যেও কাউকে কাউকে ডিসির পদ থেকে প্রত্যাহারের ঘটনা ঘটেছিল ।

জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন , জনপ্রশাসন - বিষয়ক কমিটি মতামত না দেওয়ায় মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে অনেক সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না । তিনি বলেন , যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়া ডিসিরা বদলির অপেক্ষায় থাকায় আগের মতো কাজ করতে পারছেন না । গুরুত্বপূর্ণ কাজে হাত দিয়ে শেষ করতে পারবেন না মনে করে সেসবে হাত দিচ্ছেন না । আবার নতুন কোনো কাজে কেউ বিরাগভাজন হলে খারাপ পোস্টিং বা ওএসডি হওয়ার শঙ্কাও তাঁদের মধ্যে রয়েছে ।