
পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নম্বর রোড থেকে ১০ কাঠা আয়তনের প্লটটির মালিক টিউলিপ সিদ্দিক। রাজধানীর গুলশান ফ্ল্যাট নং বি/২০১, বাড়ি নং-৫এ ও ৫বি (পুরাতন), বর্তমানে ১১৩, ১১বি (নতুন), রোড-৭১ এর ফ্ল্যাটটির মালিকও টিউলিপ সিদ্দিক। বাংলাদেশে এ রকম অন্তত পাঁচটি সম্পদের মালিকানা থাকার সুনির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে তিনি ব্রিটিশ নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও প্রথমোক্ত প্লটটির মালিকানা অর্জন করেন ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার ভাগ্নি হিসেবে। বাংলাদেশের দুর্নীতিবিরোধী রাষ্ট্রীয় সংস্থা ‘দুর্নীতি দমন কমিশন’ (দুদক) টিউলিপ সিদ্দিকের এসব সম্পত্তি অর্জনের বেআইনি প্রক্রিয়া উল্লেখ করো মামলা দিয়েছে। মামলার তদন্ত অভিযোগের সত্যতা মেলায় চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। অথচ যুক্তরাজ্যের সাবেক দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী, ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির এমপি এবং শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিক দুদকের মামলাকে ‘কল্পনাপ্রসূত অভিযোগ’ বলে উল্লেখ করেছেন।
তবে যুক্তরাজ্যে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস এমন আভাস দিয়ে এসেছেন যে, আইন অনুসারে যদি প্রয়োজন হয় তাহলে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিককে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণের জন্য আবেদন করতে পারে।
গত ১৩ জুন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাজ্য সফরে গেলে ‘বিবিসি’ তার সাক্ষাৎকার নেয়। এ সময় ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিবিসি করেসপনডেন্ট এবং প্রেজেন্টার রাজিনি বৈদ্যনাথন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সামনে টিউলিপ প্রসঙ্গ টানেন। চেষ্টা করেন শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিককে তার খালার কারণে রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করা হচ্ছেÑ মর্মে প্রতিষ্ঠা করার। ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘কিং তৃতীয় চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড’ গ্রহণের আগ মুহূর্তে এ সাক্ষাৎকার দেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এতে টিভি উপস্থাপক রীতিমতো বাংলাদেশের আইনি প্রক্রিয়াকে হেয় করার প্রয়াস চালান। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সাক্ষাৎ দেননিÑ এ প্রাসঙ্গিক সাক্ষাৎকারে বিবিসির সাংবাদিক রুলিং পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ইউনূস প্রশাসন রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে, এটিই বারবার বোঝাতে চাইছিলেন। ওই সাক্ষাৎকারে প্রশ্নকারী রাজিনি বৈদ্যনাথন টিউলিপ সিদ্দিকের মতো করেই ‘বাংলাদেশ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনতে পারেনি’-মর্মে পুনঃপুনঃ উল্লেখ করেন। তবে রাজিনি বৈদ্যনাথন এবং টিউলিপ সিদ্দিকের দাবি জোরালোভাবে নাকচ করে দিয়েছে তদন্ত সংস্থা দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
গতকাল রোববার সংস্থার মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন ইনকিলাবকে টিউলিপ প্রসঙ্গে বলেন, এখানে দু’টি বিষয় : একটি হচ্ছেÑ বাংলাদেশে টিউলিপ সিদ্দিকের মালিকানাধীন একাধিক সম্পত্তি রয়েছে। তার বেশ কয়েকটি ঠিকানা খুঁজে পেয়েছি। ঠিকানাগুলোতে তিনি বসবাসও করেন। এসব ঠিকানায় দুদক টিম যোগাযোগ করেছে। চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি কোনো উত্তর দেননি। টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করা হয়নিÑ এ তথ্য সঠিক নয়। দুদকের তদন্তে দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে। অথচ যুক্তরাজ্যে থেকে তিনি দাবি করছেন, তার অভিযোগগুলো কাল্পনিক। সেখানে থেকে তিনি কি করে বুঝলেন? দুদক মামলার তদন্তে সত্যতা মিলেছে বিধায় চার্জশিট দেয়া হয়েছে। অভিযোগ ‘কল্পনাপ্রসূত’ হলে চার্জশিট হতো না। দ্বিতীয়তÑ দুদক একটি সংবিধিবদ্ধ স্বশাসিত স্বাধীন সংস্থা। নিজস্ব আইন ও বিধি অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করে। এটির কার্যপ্রক্রিয়া সম্পর্কে সরকার প্রধানের কাছে জানতে চাওয়াটাই বরং অবান্তর। তা ছাড়া টিউলিপের বিরুদ্ধে করা একটি মামলা বিচারার্থে আদালতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন এটি বিচারাধীন বিষয়।
রাজউকে প্লট প্রাপ্তির মামলায় বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও অসৎ উদ্দেশ্যে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর রাস্তার ছয়টি প্লট বরাদ্দ নেয়া হয়েছে। এ মামলায় টিউলিপ আসামি। আসামিদের বিরুদ্ধে দ-বিধি, ১৮৬০ এর ১৬১/১৬৩/১৬৪/৪০৯/১০৯ ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা প্রয়োগ করা হয়। সুতরাং এগুলো কোনো মিডিয়ার প্রপাগান্ডা নয়।
এর আগে মহাপরিচালক আকতার হোসেন টিউলিপের বিরুদ্ধে একটি মামলার প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন, টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সাবেক সহকারী আইন উপদেষ্টা শাহ মো. খসরুজ্জামান এবং সাবেক সহকারী আইন উপদেষ্টা-১ সরদার মোশারফ হোসেনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোনো টাকা পরিশোধ না করেই অবৈধভাবে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের গুলশান-২ এর ফ্ল্যাট (ফ্ল্যাট নং বি/২০১, বাড়ি নং ৫এ ও ৫বি (পুরোনো), বর্তমানে-১১৩, ১১বি (নতুন), রোড নং ৭১) দখল নেন ও পরে রেজিস্ট্রি করেন। সরকার থেকে ইজারা নেয়া জমিতে জালজালিয়াতির মাধ্যমে এই ভবন তৈরি করা হয়েছে। সেই ভবন থেকে অবৈধভাবে ফ্ল্যাট দখল করেন টিউলিপ সিদ্দিক।
এদিকে যুক্তরাজ্যের এমপি টিউলিপ সিদ্দিক যে বাংলাদেশে সম্পদের মালিক-এটি শুধু স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমই বলছে না, খোদ যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যমও শিরোনাম করেছে।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে টিউলিপের সম্পত্তির মালিকানা এবং বসবাস নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। শিরোনাম করেছেÑ ‘গুলশানে বিলাসবহুল ভবনের বাসিন্দার তালিকায় ছিল টিউলিপের নাম।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার একটি বিলাসবহুল ১০তলা টাওয়ারের বাসিন্দা হিসেবে টিউলিপ সিদ্দিকের নাম তালিকাভুক্ত ছিল। সম্পত্তিটির নামকরণ করা তার পরিবারের নামে। যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ এ তথ্য জানতে পেরেছে।
টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের সাবেক দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী। তিনি দেশটির ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির পার্লামেন্ট মেম্বার (এমপি)। তার খালা শেখ হাসিনা।
ঢাকার কর্মকর্তাদের ধারণা, ‘সিদ্দিকস’ নামে ঢাকার এই অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে ২০১৪ সালে টিউলিপের ‘স্থায়ী ঠিকানা’ ছিল। তখন তিনি যুক্তরাজ্যের উত্তর লন্ডনের ক্যামডেনের কাউন্সিলর ছিলেন। অ্যাপার্টমেন্ট ভবনটির অবস্থান ঢাকার গুলশানে। এই এলাকায় বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের পাশাপাশি বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
আদালতের নথিপত্র বা সংবাদ প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, এ নিয়ে বাংলাদেশে টিউলিপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পঞ্চম সম্পত্তির খোঁজ পাওয়া গেল।
পক্ষান্তরে যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশে টিউলিপের কোনো সম্পত্তি নেই। তাই এ বিষয়ে কোনো প্রশ্নের জবাব দেয়ারও নাকি কোনো দায় নেই।
‘বিবিসি বাংলা’র ওই সাক্ষাৎকারটি যতটা ছিল ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে হেয় প্রতিপন্ন করার, ততটাই ছিল ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিট সিদ্দিককে সতিসাধ্যি প্রমাণের চেষ্টা। নেটিজেনরা বলছেন, এটি শেখ হাসিনা ও আ.লীগের হয়ে ভারতের মদদপুষ্ট হয়ে প্রপাগান্ডা মাত্র। সাক্ষাৎকারটির অধিকাংশ অংশেই ফুটে উঠেছে এই চেষ্টা। যদিও নোবেলবিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের ডিপ্লোম্যাটিক জবাবের কাছে পরাভূত হয়েছে রাজিনি বৈদ্যনাথনের অপচেষ্টা।
যুক্তরাজ্যের লন্ডনবারে প্রাক্টিস করছেন বাংলাদেশি কৌঁসুলি ব্যারিস্টার আকবর আমীন। তিনি বলেন, দুদক কেন ব্রিটেনে টিউলিপের আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে যাবে? টিউলিপ যদি প্রয়োজন মনে করেন তাহলে তার আইনজীবী দুদকে এসে কথা বলতে পারেন। যদিও টিউলিট এ সুযোগ হারিয়েছেন। কারণ মামলাটি বিচারার্থে চার্জশিট দাখিল হয়ে গেছে। এখন বিচার প্রক্রিয়ায় সামনে একটাই সুযোগ রয়েছেÑ এ দেশে এসে টিউলিপ এটি ফেস করুন। আইনজীবী নিয়োগ দিন। প্রধান উপদেষ্টার কাছে দুদকের প্রফেশনালিজম নিয়ে প্রশ্ন তোলার তো কিছু নেই-মর্মে মনে করেন সিনিয়র এই কৌঁসুলি। ব্যারিস্টার আমীন বলেন, হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালে দুর্নীতির মাধ্যমে অন্তত ২৩৪ বিলিয়ন ডলার (১৭৪ বিলিয়ন পাউন্ড) বাংলাদেশ থেকে পাচার করা হয়েছিল। এই পাচারের অর্থ এখন আন্তর্জাতিক লবিস্টের পেছনে খরচ করা হচ্ছে।
এর আগে টিউলিট সিদ্দিক তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, মিডিয়ার কাছে কোনো প্রমাণ ছাড়াই, কাল্পনিক অভিযোগের ভিত্তিতে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে, তিনি (ইউনূস) সে প্রতিহিংসার কেন্দ্রে রয়েছেন। যদি এটি প্রকৃত আইনি প্রক্রিয়া হতো, তবে তারা আমার আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করত। ঢাকায় এমন এক ঠিকানায় ভুয়া চিঠিপত্র পাঠাত না, যেখানে আমি কখনো থাকিনি।
তিনি জানান, বেশ আগে তিনি যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে পদত্যাগ করলেও এখনো সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়সহ বাংলাদেশে তার খালা শেখ হাসিনার স্বৈশাসনের সঙ্গে যোগসূত্র নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দেয়া সাক্ষাৎকারটি প্রচারিত হয়েছে বিবিসির ‘দ্য ওয়ার্ল্ড টু নাইট’ অনুষ্ঠানে। ইংরেজিতে দেয়া প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎকারটির ‘টিউলিপের দুর্নীতি’ সংক্রান্ত অংশ ছিল এরকম :
রাজিনি বৈদ্যনাথন : এটি আপনার আনুষ্ঠানিক সফর, কিন্তু ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সাথে কেন কোনো সাক্ষাৎ হয়নি?
ড. মুহাম্মদ ইউনূস : তার সাথে বৈঠক হলে আমরা খুব খুশি হতাম, সম্ভবত তিনি ব্যস্ত আছেন বা অন্য কিছু হতে পারে।
কিন্তু এটি আমার জন্যও একটি দারুণ সুযোগ এনে দিয়েছে, এখন তিনি ব্যস্ত। আমি তাকে বাংলাদেশে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানাই। তখন আমাদের হাতে সময় থাকবে এবং আমরা এখানে (বাংলাদেশে) কী ঘটেছিল, আমরা কী করতে চাইছি তা দেখাতে পারব এবং তিনি পরিস্থিতি বুঝতে পারবেন এবং আমরা একটি ঐতিহাসিক মুহূর্তের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।
এটি একটি অনন্য জিনিস, যেখানে আপনি অতীতকে বাদ দিয়ে একটি নতুন ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।
রাজিনি বৈদ্যনাথন : কিয়ার স্টারমারের এমপিদের একজন, লেবার এমপি টিউলিপ সিদ্দিক সম্পর্কে একটু কথা বলি। অবশ্যই, তিনি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি। বাংলাদেশের আদালত তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে জমি গ্রহণের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে, যা তিনি অস্বীকার করেছেন। আমরা একটি চিঠি দেখেছি, যেখানে তিনি আপনাকে লিখেছেন, আপনি এখানে থাকাকালীন তিনি আপনার সাথে দেখা করতে চেয়েছেন। আপনি কি তার সাথে দেখা করবেন?
ড. মুহাম্মদ ইউনূস : না, দেখা করব না। কারণ এটি একটি আইনি প্রক্রিয়া। আমি আইনি প্রক্রিয়া ব্যাহত করতে চাই না। প্রক্রিয়াটি চলতে থাকুক।
রাজিনি বৈদ্যনাথন : যুক্তরাজ্য সরকারের মন্ত্রীদের মান-বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে তদন্ত করেছে এবং তাকে খালাস দিয়েছে। টিউলিপ সিদ্দিকও দাবি করেছেন, বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। এরপরও কেন দুদক এখনো তার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে?
ড. মুহাম্মদ ইউনূস : এটি আদালতের বিষয়, আদালতের বিষয়ে আদালত সিদ্ধান্ত নেবে যে, মামলাটির জন্য পর্যাপ্ত তথ্য উপাত্ত আছে কি-না, এর প্রক্রিয়া চালু থাকবে নাকি বাতিল করা হবে।
রাজিনি বৈদ্যনাথন : কিন্তু আপনি বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা, আপনি এসেই বলেছিলেন দুর্নীতি নির্মূল করতে চান। তাই আমি আবারো প্রশ্নটি করছি। কারণ দুদকের প্রধান বলছেন, এটি কোনো ভিত্তিহীন তদন্ত নয়। আমি এখানে তার উদ্ধৃতিটিই তুলে ধরছিÑ তিনি বলেছেন, অভিযোগগুলো কোনোভাবেই কাউকে লক্ষ্যবস্তু করে নয় এবং ভিত্তিহীন নয়। এরপরও টিউলিপ সিদ্দিকের আইনিজীবীরা দাবি করেছেন, তারা কোনো প্রমাণ দেখতে পাননি এবং এ তদন্তের কোনো ভিত্তি নেই। এমনকি দুদক তার সাথে কোনো কথাও বলেনি।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস : চলমান আইনি প্রক্রিয়ায় আইনজীবীদের সামনাসামনি আসতে হয়। একত্রিত হতে হয় এবং একে অপরের সাথে তথ্য বিনিময় করতে হয়।
রাজিনি বৈদ্যনাথন : তিনি (টিউলিপ সিদ্দিক) বলছেন, এখানে তেমনটি হয়নি।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস : এখনো তো খুব বেশি দেরি হয়নি। আইনি প্রক্রিয়া সর্বদা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। বাংলাদেশ তো অস্বীকার করেনি, বলেনি যে আমরা আপনাকে কিছু দেবো না। তাহলেই না কোনো আইনি প্রক্রিয়া হবে না। কোর্টই এটি সিদ্ধান্ত নেবে।
রাজিনি বৈদ্যনাথন : কিন্তু এই নির্দিষ্ট অভিযোগে তাকে গ্রেফতারের জন্য ইতোমধ্যেই একটি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে এবং তিনি (টিউলিপ সিদ্দিক) ও তার আইনজীবী স্পষ্টভাবে বলছেন, গ্রেফতারি পরোয়ানার পুরো প্রক্রিয়াটিই অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও গোলমেলে এবং মিজ সিদ্দিক আরো বলেন, তিনি বা তার আইনজীবীদের সাথেও কেউ যোগাযোগ করেনি।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস : দেখুন, এটি আইনজীবী বনাম আইনজীবীদের তর্ক। আমি নিশ্চিত যে, বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবীরা এ প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিতে পাবেন।
রাজিনি বৈদ্যনাথন : অবশ্যই, কিন্তু আমি প্রশ্নটি আরেকটু সহজভাবে করতে চাইছি। তিনি বলছেন যে, তার আইনজীবীদের সাথে দুদকের তরফ থেকে যোগাযোগ করা হয়নি এবং তিনি বলছেন, এতে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে না।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস : তাহলে এখানে দুর্নীতি দমনের আইনজীবীরা ব্যাখ্যা করবেন যে, কীভাবে এই আইনি প্রক্রিয়া কাজ করে।
রাজিনি বৈদ্যনাথন : আমি বুঝতে পেরেছি, কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে আপনি কি এখন আপনার দুর্নীতি দমন কমিশনকে আরো স্বচ্ছ হওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন? আপনি কি এখন ‘অন রেকর্ডে’ এটি বলবেন যে, তাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তথ্য সরবরাহ করা উচিত, যাতে এই অভিযোগগুলো সম্পর্কে কোনো সন্দেহ না থাকে, যা টিউলিপ সিদ্দিক অস্বীকার করছেন?
ড. মুহাম্মদ ইউনূস : প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে, দুর্নীতি কমিশনের ওপর আমার পূর্ণ আস্থা আছে, তারা সঠিক কাজটি করছে।
রাজিনি বৈদ্যনাথন : অবশ্যই, টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে, যেমনটি আমরা আলোচনা করেছি। যদি এই অভিযোগের প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়, এরপর কি আপনি তাকে প্রত্যর্পণও করতে চাইবেন?
ড. মুহাম্মদ ইউনূস : আবারো বলছি, এটি আইনি প্রক্রিয়া। এটি এমন একটি বিষয় যা ধাপে ধাপে এগিয়ে যায়। একটি ধাপের পর আরেক ধাপ।
রাজিনি বৈদ্যনাথন : এটিই তাহলে প্রক্রিয়ার অংশ?
ড. মুহাম্মদ ইউনূস : যদি এটি আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হয়, তাহলে অবশ্যই তাই।
রাজিনি বৈদ্যনাথন : তাহলে, যথেষ্ট প্রমাণ থাকলে, দুদক তাকে প্রত্যর্পণের জন্য আবেদন করতে পারে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস : যদি আইন অনুসারে তা প্রয়োজন হয়।