
অর্থ পাচার এবং সন্ত্রাসে অর্থায়ন রোধে আরও কঠোর এবং কার্যকর ব্যবস্থা নিতে নতুন একটি জাতীয় কৌশল গ্রহণের পথে হাঁটছে দেশের অন্তর্বর্তী সরকার। চার বছর (২০২৫ থেকে ২০২৮) মেয়াদি এই ‘জাতীয় কৌশলপত্র’ তৈরির সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ কৌশলপত্র প্রণয়নে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিচ্ছে, যাতে দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। এর আগেও তিনটি কৌশলপত্র প্রণয়ন করে জাতীয় সমন্বয় কমিটির অনুমোদন নেওয়া হয়। এসব কৌশলপত্র প্রণয়নে নেতৃত্ব দেয় আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
বর্তমানে তিন বছর (২০১৯-২০২১) মেয়াদের কৌশলপত্রের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম বাস্তবায়নাধীন। এ কৌশলপত্রে ১১টি কৌশল এবং ১৩৭টি ‘অ্যাকশন আইটেম’ ছিল, যার মধ্যে ৬৯ শতাংশ ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নতুন কৌশলপত্রে বেশ কিছু কঠোর ও ফলপ্রসূ ব্যবস্থা যুক্ত হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে- বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ও সম্পদ উদ্ধারের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ; অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন তদন্তের দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে আনা; একটি কার্যকর বিচারব্যবস্থা গড়ে তোলা; দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান এবং দেশে কার্যরত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহে অর্থ পাচার এবং সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধবিষয়ক নীতিমালা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের এক কর্মকর্তা জানান, নতুন কৌশলপত্রে অপরাধের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ যাতে আর্থিক ব্যবস্থায় মিশে না যেতে পারে বা বিদেশে পাচার না হয়, তা নিশ্চিত করতে আধুনিক তদন্ত ও সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার কার্যকর পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।
এর আগে নেওয়া তিন বছর (২০১৫-২০১৭) মেয়াদি কৌশলপত্রের ১৩৮টি অ্যাকশন আইটেমের বেশির ভাগই বাস্তবায়ন হয়নি বলে জানা গেছে। কর্মকর্তাদের মতে, দীর্ঘসূত্রতা ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে আগের সরকার সময়মতো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। তবে অন্তর্বর্তী সরকার আগের দুই কৌশলপত্রে অনিষ্পন্ন থাকা আইটেমগুলো নতুন কৌশলে অন্তর্ভুক্ত করে সেগুলোর বাস্তবায়নে তৎপরতা চালাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ ও সম্পদ বিদেশে পাচার হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে, তা উদ্ধারকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
এ লক্ষ্যে গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের নেতৃত্বে ১১ সদস্যবিশিষ্ট একটি আন্তসংস্থার টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। এ টাস্কফোর্সের সুপারিশ অনুযায়ী ১১টি যৌথ তদন্ত দল গঠিত হয়েছে, যাদের কাজ হচ্ছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ মামলার অনুসন্ধান ও ব্যবস্থা গ্রহণ। এ ছাড়া চলতি বছরের মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে এ ইস্যুতে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সব শেষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান যুক্তরাজ্যে সফর করেন, যেখানে পাচার হওয়া অর্থ ও সম্পদ ফেরত আনার বিষয়টি আলোচনার অন্যতম এজেন্ডা ছিল।