
বাতাসে আর্দ্রতার ওঠানামার কারণে ভাইরাসজনিত জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই আক্রান্ত হচ্ছে জ্বরে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, টাইফয়েড ও মৌসুমি জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে বেশির ভাগ মানুষ। সব কয়টি জ্বর ভাইরাসজনিত। উপসর্গও প্রায় একই রকম। অনেক ক্ষেত্রে উপসর্গ বুঝে পরীক্ষা করেও নেগেটিভ ফল পাওয়া যাচ্ছে।
কয়েক দিন ধরে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল ও চিকিৎসকের চেম্বারগুলোতে এসব জ্বরের রোগীর সংখ্যা বাড়তে দেখা গেছে। বেশির ভাগ রোগী আসছে, সাধারণ ভাইরাসজনিত ও শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত জ্বর নিয়ে।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. ফজলে রাব্বি চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, আগে করোনা রোগীদের জ্বরের সঙ্গে কাশি, গন্ধ না পাওয়া, শ্বাসকষ্ট—এসব উপসর্গ ছিল।
ডা. মো. ফজলে রাব্বি চৌধুরী বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির চিকুনগুনিয়ার চেয়ে গায়ে ব্যথা কম হয়। চিকুনগুনিয়ায় হাড়ের জয়েন্টে ব্যথা, মাংসের পেশিতে অনেক বেশি ব্যথা হয়ে থাকে। গায়ে র্যাশ চলে আসে দ্রুত।
যে কারণে জ্বর হয় : চিকিৎসকরা বলেন, জ্বর আসলে কোনো রোগ নয়; বরং এটি রোগের একটি লক্ষণ বা উপসর্গ। ফলে জ্বর হওয়াকে শরীরের ভেতরের কোনো রোগের সতর্কবার্তা বলা যেতে পারে। অনেক কারণে জ্বর হতে পারে। সবচেয়ে বেশি হয় ঠাণ্ডা লেগে জ্বর হওয়া বা সর্দি-কাশির কারণে জ্বর।
এর বাইরে শরীরের ভেতরে কোনো কারণে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের আক্রমণ হলে, অর্থাৎ সংক্রমণ হলে জ্বর হতে পারে। করোনাভাইরাস, ডেঙ্গু, টাইফয়েড, ম্যালেরিয়ার মতো রোগেরও প্রাথমিক লক্ষণ জ্বর। এ ছাড়া টিকা নিলে, ফোঁড়া বা টিউমার হলে, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, প্রস্রাবের রাস্তায় ইনফেকশন হলে, পিরিয়ডের কারণে, আকস্মিক ভয় পেলে বা মানসিক আঘাত পেলেও জ্বর হতে পারে।
জ্বর হলেই অ্যান্টিবায়োটিক নয় : প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, বাইরের প্রচণ্ড গরম থেকে ফিরে অনেকে বাসায় বা অফিসে গিয়ে এসির নিচে বসে যান। অথবা বাইরে প্রচণ্ড গরম থেকে এসে ঠাণ্ডা পানি পান করেন। এই ঠাণ্ডা-গরমের সংমিশ্রণ থেকে জ্বর-সর্দি চলে আসতে পারে। আবহাওয়া পরিবর্তনের এই গরম-ঠাণ্ডার মধ্যে প্রায় প্রতিটি পরিবারে মৌসুমি জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। আবার বন্যাকবলিত এলাকায় পানিবাহিত রোগ—বিশেষ করে টাইফয়েড, পেটের অসুখও হচ্ছে। এসব রোগীর একটু জটিলতা বেশি দেখা দিচ্ছে।
তিনি বলেন, এসব জ্বরে প্যারাসিটামল খেলেই হয়। কোনো অ্যান্টিবায়োটিকের দরকার নেই। তবে সপ্তাহ খানেকের বেশি সময় ধরে জ্বর দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের বহির্বিভাগের দৈনন্দিন পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, কয়েক দিন ধরে জ্বর-সর্দি-কাশি এবং শরীর ব্যথার উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। বহির্বিভাগে সাধারণ সময়ে একজন চিকিৎসক গড়ে ৭০ জন রোগী দেখলেও এখন তাদের রোগী দেখতে হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ জন করে।
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের এপিডেমিওলজিস্ট ডা. এ বি এম মাহফুজ হাসান আল মামুন বলেন, বেশির ভাগ রোগী দুই-তিন দিনের জ্বর নিয়ে আসছে। অনেক শিশুর গরমের কারণে ঘেমে ঠাণ্ডা লেগে জ্বর হচ্ছে। অনেক রোগীর ডেঙ্গুর উপসর্গ থাকলেও পরীক্ষায় নেগেটিভ পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ভাইরাল জ্বরের এই সময়ে শিশুর ঠিকমতো প্রস্রাব হচ্ছে কি না এবং তার পরিমাণ ও রং কেমন—তা খেয়াল করতে হবে। একনাগাড়ে আট ঘণ্টা প্রস্রাব না হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এ ছাড়া পুষ্টিকর খাবার ও পানি বেশি বেশি পান করতে হবে।