Image description

২০২১ সালে করোনাকালে শ্বাসকষ্টে মারা যান লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের উত্তর-পূর্ব তোরাবগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক ওবায়েদ উল্লাহ। চার বছর পার হলেও পেনশনের টাকা বুঝে পায়নি তার পরিবার। একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জয়নাল আবেদীনও মারা গেছেন ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। তার পরিবারের সদস্যরাও পেনশনের টাকা তুলতে পারেননি। পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন জয়নালের স্ত্রী।

শুধু ওবায়েদ উল্লাহ কিংবা জয়নাল আবেদীন নন, তাদের মতো এমন উদাহরণ অনেক। যেসব শিক্ষক অবসরে কিংবা মারা গেছেন, তাদের পেনশন সংক্রান্ত জটিলতা কাটেনি। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে পেনশনের অর্থ তুলেছেন বটে, তবে দুটি টাইম স্কেল বাদ দিয়ে। ফলে প্রাপ্য অর্থের চেয়ে লাখ লাখ টাকা কম পেয়েছেন তারা। মাসিক পেনশনও কম পাচ্ছেন।

 

ওবায়েদ উল্লাহর ছেলে অর্ণব মামুন বলেন, ‘চার বছর ধরে পেনশনের জন্য ঘুরছি। বলা হচ্ছে, টাইম স্কেল সংক্রান্ত মামলার নিষ্পত্তি না হওয়ায় টাকা দেওয়া যাচ্ছে না। আদালতের আদেশ কার্যকর হলে এ ভোগান্তি দূর হতো।’

 

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বারোখাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজিবুর রহমান ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবর অবসরে যান। তিনি জানান, ‘দুটি টাইম স্কেল বাদ দিয়ে পেনশন তুলতে হয়েছে। এতে প্রায় ৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকা কম পেয়েছি। প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা করে কম পেনশন পাচ্ছি।’

অন্য অনেক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সরকার চাইলে এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় বিষয়টি আটকে আছে। জাতীয়করণ হওয়া স্কুলগুলোর বহু শিক্ষক এখন দুশ্চিন্তায় আছেন।

 

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক কল্যাণ সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক ও রাজশাহীর গাঙ্গোপাড়া বাগমারার প্রধান শিক্ষক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘২০১৩ সালে জাতীয়করণ হওয়া ২৬ হাজার ১৯৩টি বিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত প্রায় ৪৮ হাজার ৭২০ জন শিক্ষক এই জটিলতার মধ্যে রয়েছেন। আমরা উচ্চ আদালতে রিট করে আমাদের পক্ষে রায় পেয়েছি। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর রায় বাস্তবায়ন না করায় আমরা আদালত অবমাননার মামলা করেছি।’

তিনি আরও জানান, অর্থ মন্ত্রণালয় ২০২০ সালের ১২ আগস্ট এক আদেশে টাইম স্কেল বাতিল করে অতিরিক্ত অর্থ ফেরত নেওয়ার নির্দেশ দেয়। এ আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। আদালত প্রাথমিকভাবে ছয় মাসের জন্য আদেশ স্থগিত করেন। এরপরও অর্থ মন্ত্রণালয় আবারও একই আদেশ জারি করে মহাহিসাব নিয়ন্ত্রককে অর্থ ফেরত নেওয়ার নির্দেশ দেয়।

মামলার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে হাবিবুর রহমান বলেন, ‘হাইকোর্টের রায়ের পর সরকার পক্ষে আপিল করা হয়েছে। আপিল দ্রুত শেষ হলে এ সমস্যা কেটে যাবে। তবে সরকার চাইলে সময়ক্ষেপণ হতো না। কারণ হাইকোর্টের রায়ে আমরা যা বুঝেছি, আপিল বিভাগের রায় আমাদের পক্ষেই আসবে।’

পেনশন জটিলতার মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে টাইম স্কেল সংক্রান্ত আইনি জটিলতাকে। ২০১৩ সালে প্রণীত চাকরি শর্তাবলির আলোকে শিক্ষকরা টাইম স্কেলসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পেয়ে আসছিলেন। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের নতুন আদেশ সেই সুবিধা বাতিল করে দেয়।

শিক্ষকদের দাবি, অবিলম্বে আদালতের রায় বাস্তবায়ন করে টাইম স্কেল ও পেনশন সংক্রান্ত জটিলতা দূর না হলে, আরও হাজার হাজার অবসরপ্রাপ্ত ও মৃত শিক্ষকের পরিবার অর্থকষ্টে দিন কাটাতে বাধ্য হবে।’

বিষয়টি নিষ্পত্তির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান বলেন, আদালতের রায় অনুযায়ী অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপিল বিভাগের রায় আসলে আমরা ব্যবস্থা নেবো।

কবে নাগাদ এই সমস্যার সমাধান হতে পারে জানতে চাইলে আবু নূর মো. শামসুজ্জামান বলেন, ‘মামলার সর্বশেষ পরিস্থিতি জেনে জানাতে হবে।’