চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) পোষ্য কোটা বাতিলসহ ৯ দফা দাবিতে ক্যাম্পাসে আন্দোলন করছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পোষ্য কোটার বিষয়ে সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত হতে পারে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সাথে আলোচনা করে মতামতের ভিত্তিতে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বলে মনে করেন অনেকে।শনিবার (৪ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ সিন্ডিকেটের সভা শুরু হয়েছে। এই সভায় পোষ্য কোটা বাতিলের বিষয়টি উত্থাপন করা হবে। চবিতে পোষ্য কোটা থাকবে কি না সেই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবে বলে জানা গেছে।
পোষ্য কোটা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বেশ কিছু দিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। অপরদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা পুরোপুরি বাতিল করা হয়েছে। এ নিয়ে কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। তবে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে পাল্টা কর্মসূচি দিয়েছে রাবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা রবিবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে কমপ্লিট শাটডাউনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এ ঘটনায় পদত্যাগ করেছেন আইসিটি সেলের পরিচালক।
চবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিক্ষার্থীরা পোষ্য কোটা নিয়ে কোন ধরনের আপস করবে না। তারা মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা চাকরি করেন তাদের অন্তত একটা চাকরি আছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এমন হাজারো শিক্ষার্থী আছে যাদের বাবা নেই, অনেকের বাবার কোনো চাকরিও নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্যকোটাসহ সকল ধরনের অযৌক্তিক কোটা পুরোপুরি বাতিলের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে আলোচনায় বসেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. শামীম উদ্দিন খান পোষ্য কোটা বাতিলের আশ্বাস দিয়ে বলেন, প্রশাসন চাইলেই পোষ্য কোটা বাতিল করতে পারে না।
এই বিষয়টির সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার জড়িত রয়েছে। তবে আমরাও চাই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ধরনের কোটা না থাকুক।বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় অনুষদের ডিন অধ্যাপক নছরুল কদির বলেন, পোষ্য কোটার ব্যাপারে গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি, ডিন, প্রভোস্ট, প্রক্টর, শিক্ষক সমিতি সবার উপস্থিতিতে বিশদ আলোচনা হয়েছে। তবে এর পক্ষে-বিপক্ষে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রশাসন এ ব্যাপারে খুব একটিভ। এর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য একটি কমিটি করার কথা বলা হয়েছে। যেহেতু এটা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে, তাই বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সাথে আলোচনা না করে বাতিল করা সম্ভব না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এবিএম আবু নোমান বলেন, আমাদের শিক্ষক সমিতি থেকে পোষ্য কোটার ব্যাপারে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। তবে আমি মনে করি যেহেতু এই কোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণি থেকে শিক্ষক পর্যন্ত সবাই ভোগ করে। তাই সবার সাথে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। আবার শিক্ষার্থীরা যেহেতু আন্দোলন করছে প্রশাসনের উচিত এ বিষয়ে যৌক্তিক সমাধানে পৌঁছানো।কর্মচারী সমিতির সভাপতি সুমন মামুন বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় চাকরি করি একটা আশাতেই যে আমাদের সন্তানেরা লেখাপড়ার সুযোগ পাবে। কারণ আমাদের যে বেতন দেওয়া হয় এই টাকা দিয়ে আমরা নিজেরা চলতেই হিমশিম খাই। সেখানে আমাদের সন্তানদের লেখাপড়া করানো দুঃসাধ্য। আমরা চাই না পুরোপুরি কোটা বাতিল করে দেওয়া হোক। সীমিত পরিসরে হলেও যাতে পোষ্য কোটা রাখা হয় প্রশাসনের কাছে এটাই অনুরোধ।