Image description
 

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল করতে এসে হয়রানির শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সম্প্রতি সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। আলফাডাঙ্গা পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের কুসুমদী গ্রামের দবির শেখের ছেলে সেনাসদস্য আব্বাস শেখ সাংবাদিকদের দেখে এগিয়ে আসেন। তিনি জানান, তিনি একটি জমি ক্রয় করে রেজিস্ট্রেশন করার জন্য এসেছেন। দলিল লেখক সেলিমের কাছে সরকার নির্ধারিত ফি না নিয়ে অতিরিক্ত টাকা দাবি করেন। ১ লাখ ৮৯ হাজার টাকা দাবি করা হয় তার কাছে।

আব্বাস বলেন, ‘আমি সাব-রেজিস্ট্রার সুজন বিশ্বাসের কাছে গিয়ে অভিযোগ দিলে তিনি আমাকে বলেন, ‘দলিল লিখে নিয়ে আসেন। আমি স্বাক্ষর করে দেব; কিন্তু আমি দলিল লেখক সমিতিতে কিছু বলতে পারব না।’ পরে আমি (আব্বাস) সেলিমের কাছে ফের অনুরোধ করলে তিনি (সেলিম) বলেন, ‘সাব-রেজিস্ট্রার সুজন বিশ্বাসের সঙ্গে আলাপ করে কিছু করা যায় কি না দেখুন।’ সেলিম সাব-রেজিস্ট্রারের সঙ্গে আলাপ করতে যান। সেখান থেকে ফিরে এসে আমাকে বলেন, ‘১ লাখ ৭৮ হাজার টাকার নিচে দলিল করতে পারব না।’সরকার নির্ধারিত ফি ১ লাখ ৩০ হাজার ৬৭৪ টাকা এবং ১৫ হাজার টাকা সম্মানী দিতে চান আব্বাস; কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। বরং তার সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়। পরে তিনি নিজেকে সেনাসদস্য বলে পরিচয় দিলে দলিল লেখক ৯ হাজার টাকা কম নিতে রাজি হন।

একজন দলিল লেখক কালবেলাকে বলেন, সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে তারা লাখে ৪ হাজার টাকা বেশি নেন। এর থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা সাব-রেজিস্ট্রারকে দিতে হয়। অবশিষ্ট টাকা সমিতির তহবিলে জমা করা হয়। সপ্তাহ শেষে সব লেখকের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়।দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম বলেন, ‘সমিতির নির্ধারিত ফির বদলে কোনো দলিল লেখক কম টাকা নিলে সেটা লেখকের পকেট থেকে সমিতিতে জমা দিতে হয়।’ তিনি বলেন, ‘বাপের দলিল হলেও দলিল লেখকরা ব্যক্তিগতভাবে কম নিতে পারবে না। আমরা যদি কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে সাব-রেজিস্ট্রার নির্ধারিত টাকার চেয়ে কম নিই, তাহলেও আমাদের কাছ থেকে সাব-রেজিস্ট্রার এক টাকাও কম নেন না। তাই আমরা একটি টাকা কমেও দলিল করতে পারি না।’

 

সাব-রেজিস্ট্রারকে ১ হাজার ২০০

টাকা দিলেও আরও ২ হাজার ৮০০ টাকা কেন সমিতির নামে নেওয়া হয় এবং দলিল লেখকরা সেটা কোন নিয়মে নেন, এমন প্রশ্নের তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি।এ বিষয়ে সাব-রেজিস্ট্রার সুমন বিশ্বাস বলেন, ‘আমার কাছে সেনাসদস্য এসেছিলেন। সমিতির সঙ্গে মীমাংসা করে এলে আমি দলিল করে দেব বলেছি। আমাকে কোনো টাকা দিতে হবে না। আর তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে লিখিত অভিযোগ দিন। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’ সুমন বিশ্বাস নিজে কোনো টাকা নেন না বলে দাবি করেন।এ বিষয়ে আলফাডাঙ্গার ইউএনও (ভারপ্রাপ্ত) এ কে এম রায়হানুর রহমান কালবেলাকে বলেন, ‘আমার কাছে একজন সেনাসদস্য এসে অভিযোগ করেছেন। তার অভিযোগ পেয়ে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ফোন করেছিলাম। সাব-রেজিস্ট্রার বিষয়টি সমাধান করেননি বলে আমি জেনেছি। আমি অল্প কিছুদিন হয়েছে এই উপজেলায় যোগ দিয়েছি। যোগদানের পর থেকে সাব-রেজিস্ট্রার ও দলিল লেখক সমিতির বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ পাচ্ছি। আমি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ পাঠিয়ে দিয়েছি। তারা যে নির্দেশনা দেবেন, আমি সেভাবে ব্যবস্থা নেব।’

উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে আসা ভুক্তভোগীরা বলেন, এভাবে প্রতিদিন প্রত্যেকের কাছ থেকে জুলুম করে টাকা নেওয়া হয়। জমি ক্রেতারা অবিলম্বে এই সমিতি থেকে রক্ষা পেতে চান।