Image description

শেখ মাসউদ

৫ আগস্টে ফ্যাসিস্ট খুনী হাসিনার পলায়নের পর হাসিনা বিরোধী শক্তি সমূহের মধ্যে কুরুচিপূর্ণ কাদাছুড়াছুড়ি চলছে। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও চলছে টানাটানি। বিশেষকরে সোশ্যাল মিডিয়ায় যাদের নিয়ে বেশী আলোচনা হচ্ছে মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাদের মধ্যে অন্যতম। উনার মেয়ে জামাইরা পর্যন্ত বাদ যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে কিছু বলা দরকার মনে করে এ লেখা। গত ১৫ বছরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবের সাথে অসংখ্য বার দেখা হয়েছে, একান্তে কথা বলার সুযোগ হয়েছে। ফ্যাসিস্ট খুনী হাসিনা বিরোধী আন্দোলনের কঠিন সময় গুলোতে নানা জায়গায় নানা ভাবে মিলিত হয়েছি। মূলতঃ জামায়াত নেতৃবৃন্দের সাথে মিটিং গুলোতে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানের সাথে আমাকে যেতে হতো। মিটিং এর জন্য উনি আমার অফিসেও এসেছেন, জামায়াতের মেসেজ পৌছে দেওয়ার জন্য উনার বাসায়, অফিসে একান্তে দেখা করেছি। আন্দোলনের কঠিন সময় গুলোতে পুলিশের চোখ এড়ানোর জন্য উনাকে হোন্ডায় করেও আসতে হয়েছে। সর্বশেষ ৫ তারিখে সেনা সদরে, বঙ্গভবনে দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। সেনা সদর থেকে বঙ্গভবনে সারা পথ একই গাড়িতে ছিলাম। গত ১৫ বছর উনাকে যতটকু দেখেছি তাতে আমার যে অবজারভেশন তা তুলে ধরার চেষ্টা করবো। বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে কয়জন ভদ্র বিনয়ী সজ্জন ব্যক্তি আছে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার মধ্যে অন্যতম। তবে আওয়ামী লীগের মত এরকম একটা বেহায়া ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলনে রাজপথে নেতৃত্ব দেওয়াটা উনার মত ভদ্র লোকের জন্য আসলেই ছিল অসম্ভব। একে তো শিক্ষক মানুষ আবার পারিবারিক ভাবেও অভিজাত। উনি ছাত্র ইউনিয়ন করে কেন বিএনপিতে আসলেন জানার আগ্রহ আমার ছিল। কথা প্রসঙ্গে উনি জানিয়েছিলেন, ১৯৮৮ সনে চাকুরী ছেড়ে রাজনীতিতে আসার সিদ্ধান্ত নিয়ে উনি প্রথমে আওয়ামী লীগে যোগ দিতে চেয়েছিলেন, সিপিবির মনজুরুল হাসান সাহেবের সাথে পরামর্শের জন্য গেলে তিনি পরামর্শ দেন বিএনপিতে যোগ দিতে। কারণ হিসাবে জনাব আহসান বলেন, আওয়ামী লীগে ভ্যাকুয়াম নেই, বিএনপিতে ভ্যাকুয়াম আছে, ওখানে ভালো করার সুযোগ আছে। তবে তিনি মনে করেন কলেজ শিক্ষক থাকা অবস্থায় উনি এস এ বারীর পিএস হিসাবে কাজ করার সুবাদে বিএনপি গঠনের শুরু থেকেই বিএনপির সাথে উনার সম্পর্ক। কারণ বিএনপি গঠনে এস এ বারী শুরু থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। উনার পিতা মির্জা রুহুল আমীনের ৭১ এ পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নেওয়া কে উনি কিভাবে দেখেন এটা নিয়েও আমার কৌতুহল ছিল। উনার বক্তব্য ছিলো পিতার সাথে এটা নিয়ে দ্বন্দ তবে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভারতের লুন্ঠন, হস্তক্ষেপ দেখে উনার পিতার সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা উনি বুঝতে পেরেছিলেন। তরুন হিসাবে উনি যা বুঝতে পারেননি পিতা প্রজ্ঞাবান হিসাবে তা বুঝেছিলেন। উনার আজকের এই অবস্থানে আসার পিছনে প্রথম আলোর বিশেষ অবদান আছে। প্রথম আলোই উনাকে লাইম লাইটে এনেছে যে কারণে প্রথম আলোর প্রতি উনার দুর্বলতা থাকা মানবিক। সর্বশেষ ৫ তারিখে সেনা সদরে ওয়েটিং রুমে একপর্যায়ে আমাকে জিজ্ঞেসা করলেন কোন কোন দল এসেছে। আমি বললাম বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি, ইসলামি আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, গণ সংহতি। উনি জিজ্ঞেসা করলেন সিপিবি আসে নাই, আমি বললাম না। উনি ছাত্র ইউনিয়ন করা মানুষ সিপিবির প্রতি একটু টান থাকা স্বাভাবিক। আমরা একটা জিনিস ভুলে যাই যে দিন শেষে আমরা ব্যক্তি মানুষ, আর ব্যাক্তিগত সম্পর্ক আমাদের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডকে নানা ভাবে প্রভাবিত করে। তবে ইসলামপন্থীদের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি , প্রথম আলোকে সমর্থন, আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আনার চেস্টা ইত্যাদি সব কিছুর জন্যই উনি দায়ী এরকমটা মনে করার কোন কারণ নেই। আমর ধারণা উনি দলের হাইকমান্ডের পলিসির আলোকেই সব সময় কথা বলেন। তবে পলিসি নির্ধারণে উনার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকতে পারে। সেজন্য রাজনীতিবিদদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক জীবন নিয়ে কাদা ছুড়াছুড়ি না করে দলের পলিসির সমালোচনা করা উচিৎ। দলাদলি কে আমরা যেন গালাগালিতে পরিণত না করি। তাহলে ভদ্রলোকদের রাজনীতিতে আসা আরও কঠিন হয়ে যাবে। এমনিতেই আমাদের রাজনীতিতে ভদ্রলোকের বড়ই অভাব। (মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবের পিতার পরিচিতি - মির্জা রুহুল আমিন (২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯২১ - ১৯ জানুয়ারি ১৯৯৭) পঞ্চগড় জেলায় জন্মগ্রহণকারী একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ, ক্রীড়ানুরাগী, প্রাক্তন মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য। তিনি এরশাদ সরকারের মন্ত্রীসভার একাধিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ছিলেন। তিনি মুসলিম লীগের মনোনয়নে ১৯৬২-৬৬ সালে দিনাজপুর-৪ ও ঠাকুরগাঁও-২ আসন থেকে পরপর দুই বার পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক আইন সভার সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ঠাকুরগাঁও পৌরসভায় দীর্ঘ ১৭ বছর মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে পাকবাহিনীর সহযোগী ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে স্বাধীন বাংলাদেশে গ্রেপ্তার হন এবং খুন, লুন্ঠন ও অগ্নিসংযোগে অভিযোগ থাকায়, বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা ও তার কারামুক্তি লাভ হয় নি, কিন্তু জেনারেল জিয়াউর রহমানের নির্বাহী আদেশে কারামুক্তি হলে পুনরায় রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ১৯৭৯ সালে তিনি দিনাজপুর-৪ ও ১৯৮৮ সালে ঠাকুরগাঁও-২ আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীসভার কৃষিমন্ত্রী, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী এবং মৎস্য ও পশু সম্পদ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।)