Image description
 

উত্তরের জনপদ রাজশাহীতে জেঁকে বসেছে শীত। বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। বুধবার থেকে বইয়ে যাওয়া হিমেল বাতাসে কাঁপছে মানুষ। এ অবস্থায় রাজশাহী শহরের ফুটপাতের দোকানগুলোতে শীতের কাপড় কিনতে আসা মানুষের ভিড় বেড়েছে। তারা রয়েছেন কষ্টে। সরকারিভাবে শীতার্তদের জন্য যে কম্বল বরাদ্দ এসেছে তা অপ্রতুল বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল ৬টায় (৩ জানুয়ারি) রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন বৃহস্পতিবার দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ডিসেম্বর মাসের শুরুতে তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রিতে নেমেছিল। তখন হিমেল হাওয়া ছিল না। এখন আবার কয়েকদিন থেকে কনকনে ঠান্ডা বাতাস বইছে। এ কারণে তাপমাত্রা বেশি নিচে না নামলেও শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে।’এদিকে, শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া মৃদু শৈত্যপ্রবাহে নিম্নআয়ের মানুষের কষ্ট বেড়েছে। খড়কুটো জ্বালিয়ে সকাল-সন্ধ্যা শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন তারা। জেলার ৯ উপজেলা ও ১৪টি পৌরসভায় কম্বল বরাদ্দ হয়েছে শীতার্তদের মাঝে বিতরণের জন্য। তবে বেশির ভাগ এলাকায় কম্বল বিতরণ শুরু হয়নি। কম্বল পড়ে আছে গুদামে। অথচ শীতে ছিন্নমূল মানুষরা কষ্টে দিনযাপন করছেন।

রাজশাহী নগরীর দড়িখড়বোনা এলাকার গৃহিণী মনিরা বেগম বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে ঠান্ডা বেশি পড়ছে। তাই ফুটপাত থেকে আরও কয়েকটা গরম কাপড় সাহেববাজার থেকে কিনে এনেছি।দুর্গাপুর উপজেলার কৃষক মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘ঠান্ডার কারণে ক্ষেতে কাজ করতেও অসুবিধা হচ্ছে। তারপরও জীবন তো থেমে থাকবে না।’ঠান্ডা বাতাস বইছে। রোদ ওঠেনি। শুক্রবার সকালে রোদের আশায় বাড়ির সামনে বসেছিলেন বৃদ্ধা তাসলিমা বেওয়া। গায়ে ছেঁড়া সোয়েটার আর একটা কাপড়। শীতে কাতর তাসলিমা বেওয়া বললেন, ‘খুব জাড় বাপ। একখান কম্বল পাইলি ভালোই হইতো। কে দিবে? কেউ তো দেওয়ার নাই। তাই সূর্য উঠার দিকে তাকাছি। চেয়ারম্যান-মেম্বাররা যদি আসে, একটা কম্বল দিলে ঠান্ডাডা কাটতো।’

ফুটপাতের দোকানগুলোতে শীতের কাপড় কিনতে আসা মানুষের ভিড় বেড়েছেতাসলিমা বেওয়ার বাড়ি রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার নিমপাড়া ইউনিয়নের ভাটপাড়া গ্রামে। তিনি জানান, চার বছর আগে এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য একবার একটা কম্বল দিয়েছিলেন। সেটা নষ্ট হয়ে গেছে। দুই বছর ধরে পরছেন একটা সোয়েটার।রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার নিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জানালেন, তার ইউনিয়নে জনসংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি। এবার তাদের জন্য ৩০০টি কম্বল বরাদ্দ হয়েছে। এখনও কম্বল আসেনি। তিনি বলেন, ‘৩০০ কম্বল কার কাছে কীভাবে বিতরণ করবো? প্রতিদিনই ৩০০ জনের বেশি মানুষ আসে কম্বলের দাবি নিয়ে। আমিই এখন বিপদে।’

চারঘাট উপজেলায় সরকারিভাবে ২ হাজার ৬০০ কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হলেও তা পৌঁছায়নি হতদরিদ্র শীতার্তদের মাঝে। দুই সপ্তাহ আগে কম্বলের বরাদ্দ এলেও তা উপজেলা পরিষদের গুদামেই পড়ে আছে বলে জানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যানেরা। এখন পর্যন্ত একটি কম্বলও তারা হাতে পাননি বলে জানিয়েছেন।চারঘাট উপজেলার ইউসুফপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম মাখন বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের অধিকাংশ বাসিন্দা পদ্মার নদীর পাড়ে বসবাস করেন। একটু বাতাসেই তীব্র শীত অনুভূত হয়। গত দুই সপ্তাহ ধরে শুনছি কম্বলের বরাদ্দ এসেছে, কিন্তু এখনও হাতে পাইনি।’

চারঘাট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফরহাদ লতিফ বলেন, ‘কম্বলের বরাদ্দ দুই সপ্তাহ আগে পেয়েছি। এতিমখানাসহ কিছু জায়গায় আনুমানিক ৫০০ বিতরণ হয়েছে। ইউনিয়ন প্রতি ৩০০টি করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ইউনিয়নগুলোতে তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।’রাজশাহী জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সালাহউদ্দীন আল ওয়াদুদ বলেন, ‘পুরো জেলার জন্য ১০ হাজার কম্বল পাওয়া গিয়েছিল। এ ছাড়া ৭৮ লাখ টাকা বরাদ্দ আসে। এ টাকায় আরও প্রায় ৩৫ হাজার কম্বল কেনা হয়েছে। সেগুলো বিতরণের জন্য ইউনিয়ন ও পৌরসভা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। আরও পাঁচ হাজার কম্বল পাওয়া যাবে বলে চিঠি পেয়েছি। এই কম্বলও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। কখনোই তো চাহিদার সবটা পাওয়া যায় না। এভাবেই চালিয়ে নিতে হয়।’ সামনে আরও কিছু কম্বল বিতরণের জন্য আসতে পারে বলে জানান তিনি।