Image description
 

আর দশটা দিনের মতোই স্কুলের ব্যাগ কাঁধে দিদার হাত ধরে বেরিয়েছিল রোশনি পাল। ছোট্ট মনে হয়তো তখন নতুন কিছু শেখার আগ্রহ ছিল। বন্ধুদের সঙ্গে খেলার আনন্দ জেগেছিল। কে জানত, যে রাজপথ দিয়ে রোশনি প্রতিদিন স্কুলে যেত, সেই পথই তার শেষ ঠিকানা হয়ে উঠবে!

রোশনির মা ও বাবার সঙ্গে গত ৫ জুন কথা হয় প্রথম আলোর। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী মা চৈতি রানী পাল প্রথম আলোকে বলেন, ২৫ মে ছিল শনিবার। সেদিন তাঁর সাপ্তাহিক ছুটি ছিল। মেয়েকে নিয়ে সারা দিন বাসায় ছিলেন। সেদিন রাতে মেয়েকে তিনি গল্প শুনিয়েছিলেন। মেয়ে গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়েছিল।

মা আরও বলেন, পরদিন (২৬ মে) মেয়ের স্কুল ছিল। মা সেদিন ঘুম থেকে মেয়েকে উঠিয়ে দেন। খাওয়াদাওয়ার পর দিদা (নানি) রেখা বিশ্বাস সকাল সাতটার দিকে রোশনিকে নিয়ে মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের উদ্দেশে বের হন। এই স্কুলে রোশনি পড়ত প্রথম শ্রেণিতে।

মতিঝিল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু সালেহ শাহীন প্রথম আলোকে বলেন, সেদিন স্কুল থেকে বেরিয়ে রশনি তার দিদার হাত ধরে কমলাপুরের দিকে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছিল। হঠাৎ বিআরটিসির দ্বিতল একটি বাস রশনিকে ধাক্কা দেয়। তখন রশনি রাস্তায় ছিটকে পড়ে। পরে সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায়। চালক শাজাহানকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি এখন কারাগারে।

ময়নাতদন্ত শেষে রশনিকে নিয়ে যাওয়া হয় নরসিংদীতে। পারিবারিক শ্মশানে তার সৎকার হয়।

মা চৈতি রানী পাল বললেন, ‘যখন আমি ঢাকা মেডিকেলে আমার মেয়ের মৃত মুখ দেখতে পাই, তখন আমার মনে হচ্ছিল, আমার মা রশনি ঘুমিয়ে আছে। অনেকবার আমি রশনি মা, রশনি মা বলে চিৎকার করি।...আমার মা চিরদিনের জন্য ঘুমিয়ে আছে।’

রোশনির সঙ্গে মায়ের এই ছবি এখন কেবল স্মৃতি
রোশনির সঙ্গে মায়ের এই ছবি এখন কেবল স্মৃতিছবি: পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া

রশনির বাবা পলাশ পাল এক যুগের বেশি সময় ধরে কর্মসূত্রে ব্রাজিলে বসবাস করছেন। এক বছর আগে তিনি বাংলাদেশে আসেন। বাবা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার মেয়েই ছিল আমার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। আমি কোনো দিন কল্পনাও করিনি আমাকে মেয়ের মৃত মুখ দেখতে হবে। আমি বড় দুর্ভাগা, আমি বেঁচে আছি, আমার রশনি পৃথিবীতে বেঁচে নেই।’

রশনিকে যাঁরা চিনতেন, তাঁদের চোখে এখনো ভাসছে তার হাসিমাখা মুখ। ক্লাসের চঞ্চল মেয়েটি আর কোনো দিন স্কুলে আসবে না। টিফিনের বিরতিতে বন্ধুদের সঙ্গে তার খুনসুটি আর শোনা যাবে না। রোশনির অকালমৃত্যুতে কেবল তার পরিবারই নয়, স্কুল, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও সহপাঠীরাও বাক্‌রুদ্ধ।

রশনি তার মায়ের কাছে থেকেই লেখাপড়া করত। রশনি ছিল মায়ের সব কষ্টের উপশম, তার একমাত্র অবলম্বন। মায়ের চোখেমুখে এখন কেবলই শূন্যতা।