
লস অ্যাঞ্জেলেসের পারামাউন্ট শহরের একটি হোম ডিপো হার্ডওয়্যার স্টোরকে কেন্দ্র করে ছড়িয়ে পড়া অভিবাসী ধরপাকড়ের গুজব কয়েকদিনের মধ্যেই শহরের শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে রূপ দিয়েছে সহিংস বিক্ষোভে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ন্যাশনাল গার্ড পর্যন্ত মাঠে নামাতে বাধ্য হয় ফেডারেল সরকার। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। শনিবার পারামাউন্টের এই স্টোরে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযানের গুজব ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দাদের কেউ কেউ দেখেছেন বলে দাবি করেন অভিবাসন দপ্তরের (আইসিই) গাড়ি এলাকায় ঘুরছে। এরপরই গুজব রটে যে স্টোরের বাইরে কাজের অপেক্ষায় থাকা ডে-লেবার (দিনমজুর) অভিবাসীদের আটক করা হয়েছে। সাধারণত এই হোম ডিপোর পার্কিং লটে প্রতিদিন ডজনখানেক দিনমজুর জড়ো হন, যারা নির্মাণ, রঙ বা মেরামত কাজের জন্য শ্রম বিক্রি করেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই অনিবন্ধিত অভিবাসী। কিন্তু গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর রবিবার সেই জায়গায় ছিল নিস্তব্ধতা- কেবল দুটি ছোট পিকআপ ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। সেটা অভিযানের জন্য প্রস্তুতির সংকেত দিচ্ছিল। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয়দের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিবাদ শুরু হয়, যা ধীরে ধীরে রূপ নেয় সহিংসতায়। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের দিকে ছুঁড়ে দেয় ইট-পাথর ও ককটেল। জবাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবহার করে পিপার স্প্রে, রাবার বুলেট ও স্মোক বোম। যদিও পরবর্তীতে মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট (ডিএইচএস) বিবৃতি দিয়ে জানায়, লস অ্যাঞ্জেলেসের কোনও হোম ডিপোতে কোনও অভিযান হয়নি। তারা একে সম্পূর্ণ মিথ্যা গুজব বলে অভিহিত করে। তবে এই গুজব ও তৎপর বিক্ষোভই আকার নেয় শহরজুড়ে দাঙ্গার। সহিংসতা রুখতে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ক্যালিফোর্নিয়ায় মোতায়েন করেন ন্যাশনাল গার্ড। এটা সাধারণত একটি অঙ্গরাজ্যের গভর্নরের সিদ্ধান্তে ঘটে। হোম ডিপোর বিপরীত দিকের একটি ব্যবসায়ী পার্কে দেখা যায় সশস্ত্র সৈন্য ও হামভি গাড়ি অবস্থান নিচ্ছে। অনেক বিক্ষোভকারী মেক্সিকোর পতাকা হাতে নিয়ে, বিভিন্ন স্লোগান ও অপমানসূচক কথাবার্তা বলতে থাকে সেনা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশ্যে। একজন প্রতিবাদকারী লিখে দেয়, আইসিই এখানে অপ্রয়োজনীয় এবং অপমানজনক। আরেকজন সেনাদের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলেন, তোমাদের এখানে স্বাগত জানানো হবে না!
ডিএইচএস জানিয়েছে, লস অ্যাঞ্জেলেসে অঞ্চলে তারা এ সপ্তাহে ১১৮ জন অনিবন্ধিত অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করেছে। তার মধ্যে পাঁচজন গ্যাং সদস্য বলেও দাবি করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে রয়েছে মাদক পাচার, হামলা ও ডাকাতির মতো অপরাধের অভিযোগ।
এদিকে, পারামাউন্ট শহরের বাসিন্দা ডোরা সানচেজ বলেন, এই শহর আমাদের ঘরের মতো। আমরা সবাই একে অপরকে চিনি, সাহায্য করি। গতরাতের ছবি দেখে এখনও আমি স্তব্ধ। তিনি রোববার স্থানীয় একটি গির্জায় জড়ো হন প্রতিবেশীদের সঙ্গে। সেখানে আলোচনায় উঠে আসে- এই ঘটনার মাধ্যমে যেন অভিবাসী সম্প্রদায়ের ওপর এক ধরনের চাপ সৃষ্টি হলো। এ শহরের শতকরা ৮২ ভাগ মানুষই হিস্পানিক। লস অ্যানজেলেস নিজেও একটি ‘সাংচুয়ারি সিটি’। অর্থাৎ এটি অভিবাসন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা করে না। তাই অভিবাসী ধরপাকড়ের গুজব সহজেই আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়। পারামাউন্টে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া মারিয়া গুতিয়েরেজ বলেন, এটা ছিল আমাদের প্রতিবাদের সময়। আমি মেক্সিকোতে জন্মালেও এখানে ছোটবেলা থেকে থাকি। আমার আত্মীয়স্বজনদের অনেকেই বৈধ কাগজ ছাড়াই এখানে আছেন। এটা শুধু একজনের না, আমাদের সবার ব্যাপার। তিনি আরও বলেন, এটা লস অ্যাঞ্জেলেস। এখানে প্রায় সবাই কাউকে না কাউকে চেনে- যার কাগজ নেই। তাই এমন গুজব পুরো কমিউনিটিকে নাড়িয়ে দেয়।