
ঈদ মানেই আনন্দ, মিলন এবং পারিবারিক উষ্ণতার এক অনন্য উৎসব। তবে সময়ের পরিবর্তনে এই আনন্দযাত্রার রূপ, রীতি এবং অনুভবেও এসেছে বিস্তর পরিবর্তন। শৈশবের গ্রামীণ ঈদের প্রাণময়তা আর আধুনিক শহুরে জীবনের একাকীত্বঘেরা ঈদের মধ্যে ব্যবধান যেন দিন দিনই বেড়ে চলেছে। ঈদুল আজহার স্মৃতি, পরিকল্পনা ও পারিবারিক অনুভূতি নিয়ে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. জাহিদুল ইসলাম।
দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস: এবারের ঈদ কোথায় উদযাপন করবেন? কিভাবে উদযাপন করবেন?
অধ্যাপক ড. জাহিদুল ইসলাম: আমি পরিবারসহ ঢাকায় থাকি, তাই এবারের ঈদ ঢাকাতেই উদযাপন করব। তবে ঈদের পরদিনই গ্রামের বাড়িতে যাব, সেখানে ৪-৫ দিন থাকব। গত বছর বাড়ির কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, তাই এবার কিছুটা সংস্কার কাজ করব। ভবিষ্যতে বাড়ি নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে।
দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস: শৈশবের ঈদ আর বর্তমান সময়ের ঈদের মধ্যে কী পার্থক্য দেখেন? কেমন অনুভূতি হয়?
অধ্যাপক ড. জাহিদুল ইসলাম: শৈশবের ঈদ ছিল অনেক বেশি আনন্দময়। আত্মীয়তা, সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধনের যে গভীরতা ছিল, তা এখন আর নেই। বিশেষ করে কুরবানির ঈদে গ্রামের ঈদের যে সম্মিলিত আয়োজন যেমন একসাথে মাংস কাটা, সবার অংশগ্রহণ তা শহরে পাওয়া যায় না। এখন অনেক কিছুই এককভাবে করতে হয়। শহরের একাকীত্ব আর দায়িত্ববোধ মিলে ঈদের আনন্দ অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে। শৈশবের দিনগুলো ছিল সত্যিই অসাধারণ।
দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস: শৈশবের ঈদের কোনো বিষয় কি মিস করেন? কোনো বিশেষ স্মৃতি আছে?
অধ্যাপক ড. জাহিদুল ইসলাম: হ্যাঁ, অনেক স্মৃতি আছে। সবচেয়ে বেশি মিস করি বাবা-মাকে। বাবা-মা না থাকলে বিশেষ দিনগুলোতে শূন্যতা আরও বেশি অনুভূত হয়। গ্রামে গিয়েই ঈদের আনন্দ উপভোগ করতাম, এখন সেই বন্ধন অনেকটা শিথিল হয়ে গেছে। আধুনিক প্রযুক্তির কারণে অনেক কিছুই এখন ঘরে বসে করা যায় যেমন গরু কেনা। আগে গরু কিনে একসাথে হাট থেকে লাঠি হাতে নিয়ে নিয়ে আসার যে আনন্দ ছিল, তা এখন আর নেই।
দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস: পরিবার ছাড়া কোনো ঈদ কাটানোর অভিজ্ঞতা আছে? কেমন ছিল সেই ঈদগুলো?
অধ্যাপক ড. জাহিদুল ইসলাম: হ্যাঁ, পরিবার ছাড়া অনেক ঈদ কাটাতে হয়েছে, বিশেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য বাইরে থাকাকালে। সেই সময়ের ঈদগুলো অনেক কষ্টের ছিল। পরিবারের সবার থেকে দূরে একা ঈদ উদযাপন করা খুবই কষ্টদায়ক। ভার্সিটি জীবন থেকেই পরিবার ছাড়া ঈদ কাটানো শুরু হয়, যদিও স্কুল-কলেজ জীবনে পরিবারের সঙ্গেই ঈদ কাটাতাম।
দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস: ঈদ উদযাপন কীভাবে আপনার শিক্ষা জীবনকে প্রভাবিত করেছে?
অধ্যাপক ড. জাহিদুল ইসলাম: ঈদ উদযাপন সরাসরি শিক্ষা জীবনকে প্রভাবিত করেছে বলব না। তবে ঈদের সময়গুলোতে তেমন পড়াশোনা হয় না মানসিকভাবে ছুটির আমেজে ডুবে থাকি। তবে যদি ঈদের সময় কোনো পরীক্ষা পড়ে, তখন বাধ্য হয়েই পড়তে হয়। সামগ্রিকভাবে বললে, ঈদ উদযাপন আমার শিক্ষা জীবনের উপর তেমন কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলেনি।
দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস: শৈশবের ঈদ উদযাপনের সময় আপনার পরিবার বা গ্রামের কোনো বিশেষ রীতি বা পরম্পরা ছিল কি?
অধ্যাপক ড. জাহিদুল ইসলাম: এটা আসলে আমাদের বাঙালি মুসলিম সংস্কৃতির অংশ। গ্রামে ঈদের রীতিনীতি শহরের তুলনায় বেশি স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়। খালার বাড়ি, মামার বাড়িতে যাওয়া, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করা এসব ছিল নিয়মিত ব্যাপার। আমাদের গ্রামে কুরবানির দিনে চালের পিঠা তৈরির একটা বিশেষ রেওয়াজ ছিল। এখন ঢাকায় থাকলেও এই ঐতিহ্যটা বজায় রাখি প্রায় ৪০০ পিঠা বানিয়ে আত্মীয়স্বজনদের বাসায় পাঠাই, নিজেরাও খাই।
দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আপনার ঈদ শুভেচ্ছা বার্তা কী?
অধ্যাপক ড. জাহিদুল ইসলাম: সকল শিক্ষার্থীকে জানাই আন্তরিক ঈদ শুভেচ্ছা। আশা করি সবাই পরিবার-পরিজনের সঙ্গে নিরাপদে ঈদ উদযাপন করবে এবং ঈদের ছুটি শেষে সুস্থভাবে ক্যাম্পাসে ফিরে এসে একাডেমিক কার্যক্রমে যুক্ত হবে।