Image description
 

ঈদুল আজহায় নতুন আনন্দ হলো স্রষ্টার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি দেওয়া ও মানুষের মাঝে গোশত বিতরণ করা। কিন্তু এরপরও প্রত্যন্ত এলাকার অনেক মানুষ এক টুকরো গোশতও পান না। সমাজের প্রত্যেক মানুষের কাছে যেন কোরবানির গোশত পৌঁছানো যায় এবং ঈদের আনন্দ যেন সবাই ভাগ করে নিতে পারেন সে জন্য কাজ করছে আলেমসমাজের নেতৃত্বে আস-সুন্নাহ ও হাফেজ্জি চ্যারিটেবল সোসাইটি অব বাংলাদেশসহ বিভিন্ন সংস্থা।

সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রত্যন্ত এলাকার মানুষদের কাছে ঈদের আনন্দ পৌঁছে দিতে ২০১৯ সাল থেকে দেশব্যাপী কাজ করছে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন। সংস্থাটি এ পর্যন্ত সারা দেশে ২ হাজার ২৬৪টি কোরবানির পশু জবাই করে দুস্থদের মাঝে গোশত বিতরণ করেছে। গত বছরই ৬৪ জেলায় ১৪৭টি গরু এবং ৬২৪টি ছাগল জবাই করে প্রত্যন্ত এলাকার প্রায় ২৫ হাজার দরিদ্র পরিবারের মাঝে বিতরণ করে। সংস্থাটি এ বছর দেশব্যাপী ৫০ হাজার দরিদ্র পরিবারের মাঝে গোশত বিতরণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।

হাফেজ্জি চ্যারিটেবল সোসাইটি অব বাংলাদেশ ১১ বছর ধরে কোরবানির গোশত বিতরণ করে। সংস্থাটি গত বছরও আট হাজার পরিবারের মাঝে কোরবানির গোশত বিতরণ করেছে। এ বছর বাংলাদেশে ১৫ হাজার ও ফিলিস্তিনে ৫ হাজার পরিবারের মাঝে গোশত বিতরণে পরিকল্পনা করেছে। ইতোমধ্যে ৩০টি গরু ও ২০টি খাসি বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে গেছে। সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ফিলিস্তিনের গাজায় পশু কেনা হয়েছে ১২টি। মিসরে শরণার্থী শিবিরে দুটি গরু ও দুটি দুম্বা কেনা হয়েছে। দাতাদের দানে প্রতিনিয়ত বাড়ছে কোরবানির পশুর সংখ্যা।

তাকওয়া ফাউন্ডেশন বাংলাদেশে গত বছর দুই হাজার পরিবারের মাঝে কোরবানির গোশত বিতরণ করেছে। এ বছর তিন হাজার পরিবারের কাছে সহায়তা পৌঁছানোর লক্ষ্য সংস্থাটির।

মাস্তুল ফাউন্ডেশন ২০১৫ সাল থেকে অসহায়, সুবিধাবঞ্চিত ও দুস্থ মানুষদের মাঝে কোরবানির গোশত পৌঁছে দিচ্ছে। গত বছর সংস্থাটি ১২ হাজার পরিবারের মাঝে কোরবানির গোশত পৌঁছে দিয়েছে। এ বছর ২৫ হাজার পরিবারের মাঝে কোরবানির গোশত পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

পিপলস ইমপ্রুভমেন্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশ (পিসব) গত ১৩ বছর ধরে দরিদ্রদের মাঝে কোরবানির গোশত বিতরণের কাজ করছে। গত বছর ১ হাজার ২০০ পরিবারের মাঝে তারা গোশত বিতরণ করেছে। এবার তাদের লক্ষ্য ৩ হাজার ৫০০ পরিবারে কোরবানির গোশত পৌঁছানো।

এদিকে আল-মারকাজুল ইসলামী কোরবানি উপলক্ষে দুটি প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করে থাকে। এর একটি ‘সবার জন্য মেহমানদারি’। এ প্রকল্পের অধীনে প্রতি বছর বিভিন্ন মাদরাসাসহ আরও অসংখ্য অসচ্ছল এলাকায় গরু-ছাগল কোরবানি করে গোশত বিতরণ করা হয়। গত বছর ১২টি মাদরাসায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীসহ আরো অন্যান্য অসচ্ছল এলাকায় প্রায় ১০ হাজার পরিবারের মাঝে কোরবানির গোশত বিতরণ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি এবার আরও বড় আকারে কোরবানির গোশত বিতরণ করতে চায়।

মারকাজুল ইসলামীর দ্বিতীয় উদ্যোগটি হলো ‘আপনার কোরবানি আমাদের দায়িত্ব’। প্রতিষ্ঠানটি গত ৫ বছর ধরে ঢাকা শহরের বিভিন্ন বাসায় অবস্থানরত সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী, যাদের পুরুষ মাহরাম অসুস্থ, প্রবাসী তাদের কোরবানির দায়িত্ব নিয়ে গরু কেনা থেকে শুরু করে ঈদের দিন পর্যন্ত লালন পালন, জবাই, গোশত কাটা, ভাগ করা, বাসায় পৌঁছানোসহ যাবতীয় কার্যক্রম করে থাকে।

এদিকে আলেমসমাজের এই উদ্যোগে খুশি উপকারভোগী প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ। জানতে চাইলে নীলফামারীর রহিমা আক্তার বলেন, ‘হুজুরদের দেওয়া এই গোশত ছাড়া সারা বছরও আর কোনো গোশত চোখেও দেখি নাই। পোলা মাইয়াডি গোশত খাইতে চায় অভাবের সংসারে টাকার জন্য কিনে খাইতে পারি নাই। প্রতি বছর এ দিনটার অপেক্ষায় থাকি।’

কুড়িগ্রামের ফিরোজ শাহ বলেন, ‘আমি মানুষের কৃষিজমিতে কাজ করি, যা উপার্জন করি তা দিয়ে কোনো মতে দিন পার করি। মাঝে মাঝে ঈদের দিনেও মানুষের জমিতে কাজ করতে হয়। কিন্তু কোরবানির দিনে মাদরাসার ছাত্ররা আমাদের বাড়ি বাড়ি এসে কোরবানির গোশত দিয়ে যায়।’

উদ্যোগের বিষয়ে মাস্তুল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক কাজী রিয়াজ রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে আমরা সব সময় ছিলাম এবং থাকব। তবে এই মুহূর্তে গাজার মুসলিম ভাই-বোনেরা চরম দুর্দশার মধ্যে জীবন কাটাচ্ছেন। আমরা বিশ্বাস করি, এই কোরবানির মাধ্যমে আমরা তাদের মুখে সামান্য হলেও হাসি ফোটাতে পারব এবং এই কঠিন সময়ে তাদের পাশে দাঁড়াতে পারব।’

আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চ্যারিটি অ্যান্ড সোশ্যাল সার্ভিসের প্রজেক্ট ম্যানেজার মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ইসলামে ফরজ ইবাদাতের পরপরই আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় কাজ হলো মানুষের সেবা করা। সেবামূলক কাজের মাধ্যমে দরিদ্রদের কষ্টলাঘবের পাশাপাশি তাদের দ্বীনি জ্ঞান শেখানোরও সুযোগ পাওয়া যায়।’

হাফেজ্জি চ্যারিটেবল সোসাইটি অব বাংলাদেশের মহাপরিচালক নওমুসলিম মুহাম্মাদ রাজ বলেন, ‘এমন অনেক পরিবার আছে যারা সারা বছর গোশত কিনে খাওয়ার সামর্থ্য রাখে না, আবার অনেক সম্মানিত আলেম বা মধ্যবিত্ত পরিবার আছে যারা কোরবানি করতে পারেন না এবং কাউকে বলতেও পারেন না। তাদের খুঁজে আমরা কোরবানির তিন দিন গোশত পৌঁছে দিই।’

জানতে চাইলে কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের মহাসচিব মুফতি মাহফুজুল হক বলেন, ‘ইসলাম শুরু থেকেই মানবিক ধর্ম। নবী রাসুলগণ সবসময় মানুষের সেবা করে গেছেন। এ যুগের আলেমসমাজও সৃষ্টির প্রতি দয়ায় অনেক তৎপর, আলহামদু লিল্লাহ।’