
নির্বাচনি বিধিমালা সংশোধনের পরেই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও প্রতীক দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। গতকাল বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জামায়াতের নিবন্ধন ও ইশরাক ইস্যু নিয়ে রুদ্ধদার বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কক্ষে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন, নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ, তাহমিদা আহমদ ও আনোয়ারুল ইসলাম সরকার।
বৈঠক শেষে একজন নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, বুধবার (আজ) এ বিষয়ে কথা হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সাংবাদিকরা সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও তিনি কথা বলতে রাজি হননি। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, বিদ্যমান নির্বাচন বিধিমালায় জামায়াতের প্রতীক সংরক্ষণ নেই। তাই ইসি চাইলে শুধু নিবন্ধন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। কিন্তু প্রতীকসহ নিবন্ধন দিতে হলে আগে নির্বাচনি বিধিমালা সংশোধন করে জামায়াতের প্রতীক সংযোজন করতে হবে। এরপরেই ইসি চাইলে জামায়াতের নিবন্ধন ও প্রতীকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারবে।
সূত্র জানিয়েছে, বিধিমালা সংশোধনের জন্য খসড়া প্রস্তুত করা হচ্ছে। সেই খসড়া নির্বাচন কমিশন অনুমোদন করলে তা ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এরপরে বিধিমালা সংশোধন হলে জামায়াতের প্রতীকসহ নিবন্ধন ফিরিয়ে দিতে পারবে।
ইসির একটি সূত্র জানিয়েছে, জামায়াতের প্রতীক ফিরিয়ে দেওয়া নিয়ে বেশ কিছু জটিলতা রয়েছে। সব জটিলতা কেটে গেলেই ইসি আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেবে। গতকাল নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে ইশরাকের ইস্যু নিয়েও আলোচনা হয়েছে। আদালতের রায়ের ভিত্তিতে প্রতীকসহ ‘দ্রুত’ নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এ ক্ষেত্রে ‘একটু সময়’ নিতে চায় নির্বাচন কমিশন।
রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে এক যুগ আগে হাই কোর্টের দেওয়া রায় গত রবিবার বাতিল করেন আপিল বিভাগ। সর্বোচ্চ আদালত বলেছেন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এখন নির্বাচন কমিশন জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও প্রতীকের বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের পর সোমবার নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে পেতে ইসির সঙ্গে বৈঠক করে জামায়াত। বৈঠক শেষে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি ড. এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘আদালতের আদেশে নিবন্ধন ও দলীয় প্রতীক ফিরে পাব। ইসিও পজিটিভ। তৎকালীন ফুলকোর্ট সভা কোনো আদালত নয়। প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত মানার সুযোগ নেই।’ ২০১৩ সালের ১ আগস্ট সংবিধানের সঙ্গে গঠনতন্ত্র ‘সাংঘর্ষিক’ হওয়ার কারণ দেখিয়ে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হয়। ২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ‘দাঁড়িপাল্লা’ ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের মনোগ্রামে ব্যবহৃত হবে এবং কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও দলের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। ওই সিদ্ধান্ত ইসি সচিবালয়ে পাঠানোর পর নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা থেকে জামায়াতের জন্য বরাদ্দ প্রতীক দাঁড়িপাল্লা নির্বাচনি প্রতীকের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে ২০১৭ সালের ৮ মার্চ গেজেট জারি করে ইসি। জামায়াতের নিবন্ধন ও প্রতীকের বিষয়ে তাড়াহুড়ো করার পক্ষে নয় ইসি। ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, ৭ জুন ঈদুল আজহা উদ্যাপন হবে। ১০ দিনের সরকারি ছুটি শুরু হবে বৃহস্পতিবার (৫ জুন) থেকে। মাঝে কর্মদিবস আছে আজ ও কাল। এই সময়ের মধ্যে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে আদালতের রায় বাস্তবায়নে গড়িমসির কোনো কারণ না থাকলেও কিছুটা সময়ের প্রয়োজন বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনের বিধিমালা সংশোধন করে ইতোপূর্বে সংরক্ষিত প্রতীকের তালিকা থেকে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকটি বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে এখন নিবন্ধন ফিরে পেলেও প্রতীক পেতে বিলম্ব হতে পারে। কেননা বিধিমালা সংশোধন করে ফের দাঁড়িপাল্লা প্রতীকটি যোগ করতে হবে। এ জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের প্রয়োজনও হতে পারে।