
চলমান গ্যাসসংকটসহ নানা কারণে ক্ষতির মুখে রয়েছে দেশের শিল্প খাত। দীর্ঘদিন ধরেই চাহিদামতো গ্যাস মিলছে না শিল্প-কারখানাগুলোতে। গ্যাসসংকটে তাদের উৎপাদন ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। এতে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে এবং পণ্য রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
গত শনিবার গাজীপুর ও সাভারের আশুলিয়ার বিভিন্ন কারখানায় গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে যান বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
গতকাল রবিবার খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের বাড়তি গ্যাস সরবরাহের পরও গাজীপুর, সাভার ও নরসিংদী শিল্পাঞ্চলে গ্যাসসংকট চলছেই। এতে শিপমেন্ট বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে অনেক কারখানা। শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও ব্যাংকঋণ পরিশোধে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে অনেক কারখানায়।
জ্বালানি উপদেষ্টা এটাও জানান, সব এলাকায়ই অবৈধ গ্যাসের সংযোগ রয়েছে। বড় পরিসরে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার অভিযান চালানো হবে। যাদের অবৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘শিল্প ক্রমাগত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গ্যাসসংকটে উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে। সময়মতো আমরা রপ্তানি করতে পারছি না। সময়মতো রপ্তানি না করার খেসারত কিন্তু অনেক বড়।’
তিনি আরো বলেন, ‘গ্যাস কখন কতটুকু ছিল বা আছে, সেটা তারা (সরকার) চেক করলেই পারে। তাদের কাছে সেই প্রযুক্তি আছে। কতটুকু প্রেসারে তারা গ্যাস দিয়েছে, কী পরিমাণ আছে, সেটা তারা দেখতে পারে। আমরা কেউ কারো প্রতিপক্ষ না। কারো বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য আমরা ইন্ডাস্ট্রি করিনি। বরং সরকারের সঙ্গে থেকেই আমাদের ইন্ডাস্ট্রি চালাতে হবে। তাই সরকারের সঙ্গেই থাকতে চাই।’
গাজীপুর : গাজীপুর মহানগরীর জরুণ এলাকার কেয়া গ্রুপের কমপ্লায়েন্স ম্যানেজার সাবিনা ইয়াসমিন কালের কণ্ঠকে জানান, দেড় মাস আগে শুরু হওয়া গ্যাস সমস্যার উন্নতি হয়নি। কেয়ার ছয়টি কারখানায় প্রতি ঘণ্টায় আড়াই লাখ ঘনমিটার চাহিদার বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে দেড় লাখ ঘনমিটারেরও কম।
কালিয়াকৈরের গোমতি টেক্সটাইলের চিফ অপারেটিং অফিসার জাহিদুর রহমান আনিস বলেন, গ্যাস না পাওয়ায় ডায়িং মেশিন ঘুরছে না। ফ্যাব্রিকস ডায়িং করতে না পারায় প্রতিদিন লোকসান গুনতে হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ লাখ টাকা। তিতাস গ্যাসের গাজীপুর আঞ্চলিক বিপণন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. শাখাওয়াত হোসেন কালের কণ্ঠকে জানান, গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে গ্যাসসংকটের তেমন উন্নতি হয়নি।
সাভার : সাভার-আশুলিয়ায় তীব্র গ্যাসসংকটের কারণে প্রতিনিয়ত শিল্প-কারখানার মালিকদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। বিকল্প পদ্ধতিতে উৎপাদন চালিয়ে নিতে গিয়ে পণ্যের উৎপাদন খরচ কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন শিল্প মালিকরা।
সাভারের পাকিজা গ্রুপের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আল মোস্তাকিম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই অন্যান্য জায়গার মতো আমাদের কারখানায় তীব্র গ্যাসসংকট দেখা দেওয়ায় আমরা ঠিকমতো উৎপাদন কার্যক্রম চালাতে পারছি না।’
নরসিংদী : নরসিংদীতেও চাহিদার তুলনায় সামান্য গ্যাসও মিলছে না শিল্প-কারখানায়। মাধবদী ফুলতলা এলাকার এমআর টেক্স সাইজিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান ইসহাক মামুন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেড় মাস ধরে গ্যাসের সমস্যাটা তীব্র আকার ধারণ করেছে। উৎপাদন নেমে এসেছে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশে। রাত ১১টার পর ১০-১২ শতাংশ চাপ এলেও তাতে মেশিন চালানো যাচ্ছে না। এতে কারখানা একপ্রকার বন্ধই বলা যাচ্ছে।’
ভাটপাড়ার আমানত শাহ ফ্যাব্রিকসের ওভেন কম্পোজিটের নির্বাহী পরিচালক নূরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের প্রায় ১৫ হাজার শ্রমিকের পরিবার। তিন-চার মাস ধরে গ্যাসের তীব্র সংকটে নাজেহাল অবস্থা। গ্যাস একেবারেই পাওয়া যাচ্ছে না। যেটুকু পাচ্ছি, তা কোনো কাজেই আসছে না। ফ্যাক্টরি একপ্রকার বন্ধই বলা যায়।’
[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক (গাজীপুর) এবং সাভার ও প্রতিনিধি (নরসিংদী)]