
চট্টগ্রামে ঈদ ঘিরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে রেলওয়ের টিকিট কালোবাজারিরা। ঈদে টিকিটের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে অতিরিক্ত দামে টিকিট বিক্রি করছে চক্রটি। এ চক্রের সঙ্গে রেলওয়ের বিভিন্ন স্তরের কর্মীরা জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশেষ করে টিকিট চেকার, টিটিও, আউটসোর্সিং ও আরএনবির সদস্যরা জড়িত। এ ছাড়াও রেয়াজউদ্দীন বাজার, স্টেশন রোডের বেশ কয়েকটি চক্র মূলত এ টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট কেউ জড়িত নেই। যাত্রীরা নিজের এনআইডি দিয়ে টিকিট সংগ্রহ করছেন। ফলে এখানে কালোবাজারি চক্রের হাতে টিকিট যাওয়ার সুযোগ নেই। অভিযোগ রয়েছে, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ অনলাইনে টিকিট ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেশির ভাগ সময় এসব টিকিট হাওয়া হয়ে যায়। ফলে অনেক যাত্রী অনলাইনে টিকিট কাটার চেষ্টা করেও পারেন না। আবার অনেককে রেলওয়ে স্টেশনে এসেও খালি হাতে ফিরতে হয়। মূলত অ্যাপসে করা যাত্রীদের আইডি ব্যবহার করে বুকিং সহকারীরা নিজেদের ইচ্ছামতো অনলাইনে টিকিট হাতিয়ে নিচ্ছে। আর এসব টিকিট চলে যায় কালোবাজারি চক্রের সদস্যদের কাছে। যার ফলে অনলাইনে টিকিট পাওয়া যায় না। গত ২৮ মে ঈদ উপলক্ষে কালোবাজারে ট্রেনের টিকিট বিক্রি, আর্থিক অনিয়ম, যাত্রী হয়রানিসহ বিভিন্ন অভিযোগে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে অভিযান পরিচালনা করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি টিম। এ সময় টিকিট কালোবাজারি, যাত্রীসেবা ও টিকিট ব্যবস্থাপনাসহ নানা অনিয়মের প্রমাণ পায় তারা। দুদক জানায়, সংস্থার সদস্যরা ছদ্মবেশে টিকিট সংগ্রহের চেষ্টা করে।
এতে দেখা যায়, টিকিট পেতে অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হচ্ছে। টিকিট বুকিং সহকারীরা স্টেশনে দায়িত্বরত রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) সদস্যদের সঙ্গে যোগসাজশে টিকিট কালোবাজারে জড়িত। অভিযানে এ চক্রের কার্যকলাপের সরাসরি প্রমাণ সংগ্রহ করে দুদক টিম। এ ছাড়াও, ঢাকাগামী মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনের বগিগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করে দুদক টিম। সেখানে দেখা যায়, টিকিট ছাড়াই যাত্রীদের বগিতে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। তা-ও অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে। রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর চট্টগ্রাম জেনারেল চৌকির ইনচার্জ আমান উল্লাহ বলেন, গত ২৮ মে দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি দল স্টেশন পরিদর্শনকালে আন্তনগর মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনের একটি টিকিট কাটার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আরএনবির এক সদস্যকে টিকিট কালোবাজারি বলে উপস্থাপন করা হয়েছে। মূলত এতে বড় ধরনের ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। দুদকের কর্মকর্তা নিজেই উনার এনআইডি সরবরাহ করে এবং নিজে উপস্থিত থেকে বুকিং সহকারীর মাধ্যমে টিকিট সংগ্রহ করেছে। আমার একজন সদস্য সহায়তা করেছে মাত্র, যা তার দায়িত্বের অংশ। তিনি আরও বলেন, ওইদিন দুদকের কর্মকর্তা নিজের এনআইডি ব্যবহার করে টিকিট করে ইস্যু করেছেন, যা রেকর্ডে সহজেই যাচাইযোগ্য। চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ওসি এস এম শহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের রেলওয়ে পুলিশের প্রতি নির্দেশনা রয়েছে তারা যেন টিকিট কাউন্টারের দিকে না যান। বরং আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টায় থাকি যাত্রীরা যেন কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয় এবং টিকিট কালোবাজারি যেন না হয়।