Image description
 

ইসলামের ইতিহাসে প্রথম জুমায় রাসূলুল্লাহ (সা.) যে ভাষণ দিয়েছিলেন তার প্রতিটা শব্দ, বাক্যে রয়েছে বিপদগামী মুসলিম উম্মাহর জন্য অমূল্য দিকনির্দেশনা। চিন্তাশীল মানুষের জীবন পথের পাথেয়। অসুস্থ-দুর্বল আত্মার জন্য মহৌষধ আর মৃত আত্মার জন্য সঞ্জীবনী সুধা। বাংলা অনুবাদ তুলে ধরেছেন-মোহাম্মাদ মাকছুদ উল্লাহ

আমি আল্লাহর প্রশংসা করছি, তাঁর সাহায্য চাচ্ছি, তাঁর কাছে ক্ষমা ও হেদায়াত প্রার্থনা করছি, আমি তাঁর প্রতি সুদৃঢ় বিশ্বাস করি এবং তাঁর কুফরি করি না। বরং যে তাঁর কুফরি করে আমি তার সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করি।

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি এক, তাঁর কোনো শরিক নেই এবং মুহাম্মাদ (সা.)-তাঁর বান্দা ও রাসূল। যাকে তিনি হেদায়াত, আলোকবর্তিকা ও উপদেশসহ প্রেরণ করেছেন, এমন সময় যখন নবি ও রাসূলদের আগমন ধারা বন্ধ হয়ে গেছে, ধরাপৃষ্ঠে সত্যজ্ঞানের চর্চা অপ্রতুল হয়ে উঠেছে, মানুষ পথভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। আর মহাকালের ব্যাপ্তির শেষ পর্যায়ে কিয়ামত নিকটবর্তী হয়ে পড়েছে।

যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে, সে হেদায়াত লাভ করবে। আর যে তাঁদের অবাধ্য হবে, সে বিপথগামী হবে, সীমালঙ্ঘন করবে এবং মারাত্মকভাবে পথভ্রষ্ট হবে। আমি তোমাদের তাকওয়া অর্জনের উপদেশ দিচ্ছি। কারণ একজন মুসলমানের জন্য অপর মুসলমানের সর্বোত্তম উপদেশ হলো-সে তাকে পরকালের বিষয়ে উৎসাহিত করবে এবং তাকে তাকওয়ার গুণ অর্জন করতে বলবে। অতএব, তোমরা ওইসব বিষয় থেকে আত্মরক্ষা করো, যে বিষয়ে আল্লাহ তোমাদের সতর্ক করেছেন। আর তাকওয়ার চেয়ে উত্তম উপদেশ ও তাকওয়ার চেয়ে কল্যাণকামিতা অন্য কিছু আর হতে পারে না। নিশ্চয়ই নিজের রবের প্রতি যথার্থ ভীতির মাধ্যমে যারা সত্যিকার তাকওয়া অর্জন করতে সক্ষম হবে, পরকালের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে এটা তাদের জন্য পূর্ণসহায়ক হবে।

 

আর যে ব্যক্তি কোনো বৈষয়িক স্বার্থ ছাড়া সম্পূর্ণ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে নিজ জীবনের প্রকাশ্য ও গোপন সব বিষয়কে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী সংশোধন করে নেবে, এটা তার জন্য পার্থিব জীবনে মর্যাদা ও সুনামের কারণ হবে এবং মৃত্যুর পরের জীবনের জন্য হবে মহামূল্যবান সম্পদ, যখন মানুষ শুধুই আগে প্রেরিত সৎকর্মের মুখাপেক্ষী হবে। আর সে একান্তভাবে কামনা করবে যে, তার জীবনের সৎকর্ম ছাড়া অন্য সবকিছু থেকে তার দূরত্ব যেন সীমাহীন হয়।

আল্লাহ মানুষকে নিজের সম্পর্কে সতর্ক করেছেন এবং আল্লাহ বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত দয়াশীল। মহান আল্লাহ সব ক্ষেত্রে সত্য বলেছেন, সব অঙ্গীকার অবশ্যই পূরণ করবেন। আর এতে কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না। কেননা মহান পরাক্রশালী আল্লাহ নিজেই বলেছেন, ‘আমার কাছে কোনো কথার (অঙ্গীকারের) পরিবর্তন নেই আর আমি বান্দার ওপর জুলুমকারী নই’। অতএব, তোমরা তোমাদের পারিপার্শ্বিক ও পারলৌকিক, প্রকাশ্য ও গোপন সব কাজে একমাত্র আল্লাহকে ভয় করো কেননা যে তাকওয়া অর্জন করে, আল্লাহ তার সব গুনাহ মাফ করে দেন এবং তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। যে তাকওয়া অর্জন করে সে মহাসাফল্য লাভ করে। নিশ্চয়ই আল্লাহর ভয় (তাকওয়া) মানুষকে আল্লাহর ক্রোধ, শাস্তি ও অসন্তোষ থেকে রক্ষা করে। নিশ্চয়ই তাকওয়া চেহারাকে আকর্ষণীয় করে, রবকে সন্তুষ্ট করে এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করে। তোমরা তাকওয়ার যতটুকু অংশ দখল করতে পার, দখল করে নাও। আল্লাহর অধিকতর নিকটবর্তী হতে কোনো ত্রুটি করো না।

নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের তাঁর কিতাবের জ্ঞান দান করেছেন এবং তাঁর নিকটবর্তী হওয়ার পথ দেখিয়েছেন যাতে, কে সত্যাশ্রয়ী আর কে মিথ্যাবাদী তা স্পষ্ট হয়ে যায়। অতএব, মহান আল্লাহ তোমাদের ওপর যেভাবে অনুগ্রহ করেছেন, তোমরা তাঁর একনিষ্ঠ আনুগত্যের মাধ্যমে নিজেদের উপযুক্ততা প্রমাণ করো। আর আল্লাহর দুশমনদের প্রতি শত্রুতা পোষণ করো। তিনি তোমাদের নির্বাচিত করেছেন এবং তোমাদের মুসলমান নামকরণ করেছেন। আল্লাহ চান, যে ধ্বংস হওয়ার সে যেন প্রকাশ্যে ধ্বংস হয়ে যায়। আর যে টিকে থাকার সে যেন দৃঢ়তার সঙ্গে টিকে থাকে। আর আল্লাহর শক্তি ছাড়া কোনো শক্তি নেই। অতএব, আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করো এবং মৃত্যুর পরের জীবনের জন্য আমল করো। নিশ্চয়ই যে, নিজের ও আল্লাহর মধ্যকার বিষয়কে মিটমাট করে নেয়, আল্লাহ তাঁর ও মানুষের মধ্যকার বিষয়ে তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। কেননা আল্লাহ মানুষের ওপর যাবতীয় সিদ্ধান্ত কার্যকর করেন, কিন্তু মানুষ আল্লাহর কোনো ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না। আল্লাহই মানুষের সর্ববিধ মালিক কিন্তু আল্লাহর কোনো কিছুর ওপরই মানুষের কোনো কর্তৃত্ব নেই। আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ, মহান আল্লাহর ক্ষমতা ছাড়া কোনো কিছুরই সাধ্য মানুষের নেই। (সিরাতুল মুস্তাফা, আল্লামাহ ইদ্রীস কান্ধলভী)।

 

লেখক : পেশ ইমাম ও খতিব, রাজশাহী কলেজ কেন্দ্রীয় মসজিদ।