Image description
আহত রাতুল ও তার অভিভাবককে বৃহস্পতিবার সকালে পিলখানায় আমন্ত্রণ জানিয়ে এক লাখ টাকার একটি চেক হস্তান্তর করে বিজিবি। ছবি: যুগান্তর

মসজিদ থেকে বের হতেই পুলিশ তাকে ঘিরে ধরে। এরপর টেনেহিঁচড়ে মাটিতে ফেলে পেটে বন্দুক ঠেকিয়ে দুবার গুলি করে পুলিশ। যদিও মৃত্যুর পথ থেকে ফিরে এসেছেন দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র রাইসুল রহমান রাতুল। এখন ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন। রাজধানীর উত্তরা হাইস্কুলের কাছে ফুটপাতে একটি খাবারের দোকান দিয়েছেন তিনি। সেই রাতুলকে ১ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি।

রাতুল জানান, গত বছরের ১৯ জুলাই শুক্রবার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একপর্যায়ে তিনি দুপুরে মসজিদে যান জুমার নামাজ পড়তে। নামাজ শেষে বের হতেই পড়ে যান পুলিশের সামনে।

রাতুলের ধারণা, পুলিশ হয়তো আগে থেকেই তাকে টার্গেট করেছিল। কারণ সেদিন সকাল থেকেই তিনি আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সাহায্য করছিলেন। এদিন মসজিদ থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কয়েকজন পুলিশ এসে রাতুলকে ধরে ফেলে। তার কোমরের বেল্ট ধরে একজন পুলিশ সদস্য বলে সাইডে চলো, তোমার সঙ্গে কথা আছে। ঝুঁকি বুঝতে পেরে রাতুল যেতে চাননি। ফলে সেখানেই তাকে পেটে বন্দুক ঠেকিয়ে দুটি ‘গুলি করা হয়’। 

রাতুল বলেন, কেন যাব এই প্রশ্ন করতেই একজন পুলিশ বলে যে তুমি যাবা না? আচ্ছা ঠিক আছে, বলেই সে ডিরেক্ট আমার পেটে বন্দুক ঠেকিয়ে ফায়ার করে। একদম তলপেটে শটগানের গুলি লেগে আমার ভুঁড়ি বের হয়ে যায়। আমি নিজ হাতে আমার ভুঁড়ি ধরে রেখেছিলাম।

রাতুলের চিকিৎসা হয়েছে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। পুরো খরচ বহন করেছে তার পরিবার। চিকিৎসা খরচ বহন করে পরিবার এখন ফতুর। প্রায় ৪ লাখ টাকা দেনা হয়েছে। এই অবস্থায় রাতুল উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের ২৮ নম্বর রোডে ফুটপাতে একটি খাবারের দোকান দেন। ছোট দোকান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর বড় স্বপ্ন তার। রাতুল দোকান দেওয়ার পর তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে লোকজন রাতুলের দোকানে আসতে শুরু করেন। 

বিষয়টি বিজিবি কর্তৃপক্ষের নজরে এলে আহত রাতুল ও তার অভিভাবককে পিলখানায় বিজিবি সদরদপ্তরে বৃহস্পতিবার সকালে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেখানে বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. ইয়াসির জাহান হোসেন আহত রাতুল ও তার অভিভাবকের হাতে ১ লাখ টাকার একটি চেক হস্তান্তর করেন। 

বিজিবি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে ছাত্র-জনতার পাশে থেকে সহযোগিতা করেছে। বিজিবির নিজস্ব উদ্যোগে আন্দোলনে আহত ৪২ ছাত্র-জনতাকে বর্ডার গার্ড হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে। 

গত বছরের ৮ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বিজিবি সদরদপ্তরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত সাত অসহায় ছাত্র-জনতাকে আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তা করেন। 

এ সময় বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বিজিবির পক্ষ থেকে সারা দেশে ১০০ আহত ছাত্র-জনতাকে পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দেন।