Image description

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারের পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সৈকত সংলগ্ন ৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকার সি-বিচ সড়ক লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) দুপুরে দুই ঘণ্টার জোয়ারে ১৩০০ মিটার সড়কের এক- তৃতীয়াংশ বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। অভিযোগ উঠেছে এটি একটি ‘বাণিজ্যিক প্রকল্প’। অপরিকল্পিতভাবে প্রকল্প নির্বাচন, অনিয়ম ও নিন্মমানের কাজ হওয়ায় সড়কের এমন দশা হয়েছে।

সৌন্দর্য বর্ধনসহ সৈকতে পর্যটকদের চলাচলের সুবিধায় হোটেল সিভিউ থেকে জাতীয় উদ্যান (ঝাউবন) পর্যন্ত ১৩০০ মিটার রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নেয় কুয়াকাটা পৌরসভা। ৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ের এই সড়কটি কোনো ধরনের ফিজিবিলিটি স্টাডি ছাড়াই সাগরের ওয়াটার লেভেলে নির্মাণ করা হয়েছে। কাজটি পায় পৌরসভার তৎকালীন মেয়র আনোয়ার হাওলাদারের ঘনিষ্ঠ তিন সহযোগী-কুয়াকাটা পৌর শ্রমিক লীগের সদস্য সচিব সগীর মোল্লার- মোল্লা ট্রেডার্স, পৌর শ্রমিকলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক বেলাল হোসেনের আবরার ট্রেডার্স ও সাদ্দাম মালের এস এম ট্রেডার্স। এরইমধ্যে প্রকল্পটির বিপরীতে প্রতিষ্ঠান তিনটি ১ কোটি ৫০ লাখ টাকার বিল উত্তোলন করেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ এটি কুয়াকাটার সাবেক মেয়র আনোয়ার হাওলাদারের একটি ‘বাণিজ্যিক প্রকল্প’।

ভেঙে যাওয়া রাস্তা। ছবি: সারাবাংলা

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, কাজের শুরু থেকেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন ক্ষমতার দাপটে নিম্নমানের ইট, বালু দিয়ে সড়ক নির্মাণ করা হয়। ঠিকাদাররা তৎকালীন পৌর মেয়রের ঘনিষ্ঠজন হওয়ায়, ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাননি। এনিয়ে তখন অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। প্রায় ৫ কোটি টাকার এমন প্রকল্পে দায়িত্বহীনতা, স্বজনপ্রীতি ও পরিকল্পনাহীনতার সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তারা।

স্থানীয় ব্যবসায়ী হোসাইন আমিরের অভিযোগ, অপরিকল্পিতভাবে গাইড ওয়াল ছাড়া কাজ করার কারণেই রাস্তা ভেঙে পড়েছে। তিনি বলেন, এমন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় রাস্তা নির্মাণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। পরিকল্পনা ছাড়া সরকারের কোটি কোটি টাকার প্রকল্প এভাবে ধ্বংস হওয়া দুঃখজনক।

এসএম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী সাদ্দাম মাল দাবি করেন, তিনি সরাসরি কাজটি করেননি, রুহুল আমিন নামে একজনকে সাব-কন্ট্রাক্টে দিয়েছেন।

অপর দুই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারীদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভাব হয়নি।

কুয়াকাটা পৌরসভার প্রকৌশলী সুজন বলেন, তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট তফসিল অনুযায়ী কাজ দেওয়া হয়েছে। কাজ এখনো চলমান রয়েছে। ইতিমধ্যে তারা দেড় কোটি টাকা উত্তোলন করেছে। অনিয়ম প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্বজনপ্রীতির অভিযোগ অস্বীকার করে সাবেক মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, ‘টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই কাজ দেওয়া হয়েছে। অনিয়মের দায়দায়িত্ব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে নিতে হবে।’

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রবিউল ইসলাম বলেন, আমরা যখনই দেখেছি কাজ খারাপ হচ্ছে তখন টাকা দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে। নিম্ন মানের কাজ হয়েছে কিনা এ ব্যাপারে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সারাবাংলা