চব্বিশের ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা ধরনের আলোচনা চলছে। দেশের বুদ্ধিজীবী, কবি, লেখক, কলমিস্টরা রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সংস্কার ও বিগত সরকারের অনিয়ম নিয়ে সোচ্চার রয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন হলেন কলামিস্ট ও গবেষক ফরহাদ মজহার। তিনি একদিকে যেমন বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও ইসকনের ‘সাবেক’ নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মুক্তি দাবি করেছেন তেমনি জামায়াতে ইসলামীর নাম পরিবর্তনের কথাও বলেছেন। একই সঙ্গে তিনি আরও বলেছেন, গত ১৫ বছরে জামায়াতের ১১ জন নেতাকে ফাঁসি দেওয়ার বিষয়টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে তুলনা করেছেন। যুগান্তরের সঙ্গে একান্ত সাক্ষৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াত নেতাদের ফাঁসি দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ফরহাদ মজহার বলেন, প্রথম কথা ন্যায়বিচার হয়নি- খুব পরিষ্কার কথা। কারণ যেভাবে বিচারটা হয়েছে সেটা আন্তর্জাতিক- যেটাকে আমরা বলি স্ট্যান্ডার্ড; মানে বিচার করবার যে স্ট্যান্ডার্ডটা আছে এটা তো অনেকেই বলেছেন- আসলে সেটা স্ট্যান্ডার্ডের মধ্যে পড়ে নাই। অনেক ক্ষেত্রে অত্যন্ত অন্যায় হয়েছে।
তিনি বলেন, আপনি যখন একজনকে একটা রায় দেন বা রায় দেওয়া হয়েছে গিয়েছে; তারপরে আপনি আবার আইন বদলিয়ে তাকে ফাঁসি দেওয়ার জন্য আইন বদলান এবং তাকে ফাঁসির কাষ্টে ঝুলান- এটা কোনো আইনে পৃথিবীর কোনো আইনে এটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ফলে আমি মনে করি যে অবশ্যই যে তথাকথিত আন্তর্জাতিক আদালতে যে বিচারটা হয়েছে এটা ন্যায়বিচারের স্বার্থে আমাদেরকে আবার রিভিউ করা উচিত। ন্যায়বিচারের স্বার্থে আমাদের আরও রিভিউ করা উচিত।
সেখানে আইনের যে সকল জিনিসটা আইনের দিক থেকে তার যে নিয়মনীতি এবং বিধি-বিধান তা লঙ্ঘন করে এখানে বিচার করা হয়েছে। ফলে আমি মনে করি তাদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে এবং সেই অবিচারটা আমাদেরকে অবশ্যই আগামী দিনে সংশোধন করতে হবে যদি আমরা জাতিকে এই ক্ষত থেকে মুক্ত করতে চাই এবং যারা সত্যিকার অর্থে যে অপরাধটা করে নাই কেমন- সে অপরাধের দায় যেন তাদের ওপর আমাদের চাপাতে না হয়।
এই লেখক বলেন, পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামী তো বলে নাই- তোমরা আমাদের যে নীতি এটা অনুসরণ কর। তারপরে তারা বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীকে বলেছে- তোমরা স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ কর; কিন্তু স্বাধীনভাবে তো তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে নাই। তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো উঠেছে- এখানে বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে, তারা জড়িত আর অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে ও গণহত্যার সঙ্গে তারা জড়িত- জামায়াতে ইসলামী তো এই অপরাধ থেকে তো মুক্তি পাতে পারে না- ইতিহাসের দিক থেকে; আইনের দিক থেকে সেটা ভিন্ন প্রশ্ন। দ্বিতীয়ত হচ্ছে- এখনো জামায়াতে ইসলামী এই লিজেসিটা বহন করছে; আমি একটা কথা খুব পরিষ্কার বলতে চাই- এই দেশে বাঙালি জাতিবাদী ফ্যাসিজম গড়ে উঠেছে যেহেতু জামায়াতে ইসলামী ছিল বলে; এটা বুঝতে হবে আপনাকে।
ফরহাদ বলেন, জামায়াতে ইসলামীর বিপরীতেই কিন্তু বাঙালি জাতিবাদটা বলিষ্ঠ হয়েছে বাংলাদেশে এবং ফ্যাসিস্ট শক্তি হাজির হয়েছে। তাহলে এখন আবার যদি রাজনীতির মাঠে জামায়াতে ইসলামী থাকে; আবারো কিন্তু বাঙালি জাতিবাদী আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে- এটা কিন্তু খুব ভালো করে মনে রাখতে হবে। ফলে আমি মনে করি জামায়াতে ইসলামী যদি সত্যিকার অর্থে না চায় আবার আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা ফিরে আসুক- তাদের উচিত হবে অবিলম্বে তাদের নাম পরিবর্তন করা।