
ভারতকে এই জাতির মূল শত্রু বলে মন্তব্য করেছেন লে. কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান। তিনি দাবি করেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকেই ভারত নানা রকম ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে।
শুক্রবার (২৩ মে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মোজাফফর রহমান চৌধুরী অডিটরিয়ামে গবেষণা বিষয়ক হাইব্রিড সংস্থা নেক্সাস ডিফেন্স অ্যান্ড জাস্টিস (এনডিজে) এর উদ্যোগে আয়োজিত ‘জাতীয় নিরাপত্তা নীতিমালা: বাংলাদেশের নিরাপদ ভবিষ্যৎ গঠনে দিকনির্দেশনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন তিনি।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, ভূরাজনীতিতে বাংলাদেশ তথা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের এই জায়গা (বাংলাদেশ, মিয়ানমারের কিছু অংশ) এখন বিশ্ব মোড়লদের উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের পাশের দেশ ভারত দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য বড় হুমকি। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এবং রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা রক্ষায় জাতিগত ঐক্যের বিকল্প নেই।
স্বাগত বক্তব্যে লে. কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান বলেন, আমাদের এই জাতির মূল শত্রু ভারত। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকেই তারা নানা রকম ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে।
দেশের সশস্ত্র বাহিনী থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদদেরও ভারত নিয়ন্ত্রণ করেছে বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে পরাজয় বরণ করেছে ভারত ও তাদের দোসররা। অভ্যুত্থানে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পতন হলেও তাদের ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। বিভিন্নভাবে দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্থিতিশীলতা বিনষ্টে কাজ করছে। দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বিভেদ থেকে বেরিয়ে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ভারতের আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়তে হবে। ঔপনিবেশিক নিয়মকানুন ফেলে আমাদের মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে নতুন নিয়ম গঠন করতে হবে।
এ সময় জুলাই আন্দোলনে আহত একজন শিক্ষক বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে জীবন বাজি রেখে ফ্যাসিবাদের বিপক্ষে লড়েছি। ফ্যাসিবাদী হাসিনার পতনের পর সবচেয়ে বেশি নিগৃহীত হয়েছেন এদেশের জুলাই যোদ্ধারা।
জুলাই যোদ্ধাদের মধ্যে আহতদের সুচিকিৎসা ও নিহতদের পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে আহ্বান জানান তিনি।
বক্তব্যকালে বেশকিছু দাবিদাওয়া পেশ করেন এই শিক্ষক। যেমন: হাসপাতালে আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল গঠন, নির্ভুল তালিকা গঠনে এমআইএস (মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা) নিশ্চিত করা, গুলিবিদ্ধদের দীর্ঘমেয়াদী থেরাপির ব্যবস্থা করা, চিকিৎসা পর্যবেক্ষণ ও নিয়মিত হাসপাতালে ফলোআপ দেওয়া, অবিলম্বে জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়া, উন্নত চিকিৎসার জন্য কাজ করা, জুলাই যোদ্ধাদের জন্য সুরক্ষা আইন পাশ করা, হাত-পা হারানোদের কৃত্রিম হাত-পা দান করা ইত্যাদি।
অনুষ্ঠানে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়াউল আহসান দাবি করেন, বাংলাদেশের নিরাপত্তা ইস্যু অন্যান্য দেশের থেকে ভিন্ন। বিগত রেজিমে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, প্রযুক্তি খাত পুরোপুরিভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। দেশকে ঋণে জর্জরিত করা হয়েছে। বিগত সময়ে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের আওয়ামীকরণ করা হয়েছে। দেশের প্রতিটি সেক্টর ভঙ্গুর করে দেওয়া হয়েছে। সেই জায়গা থেকে উত্তরণের জন্য প্রধান উপদেষ্টা কাজ করছেন। আমাদের উচিত ঐক্য ও বিভেদ ভুলে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিগত সাড়ে ১৫ বছরে যে সরকার ক্ষমতায় ছিল, একটা পেশার লোককেও সৎ থাকতে দেয়নি। তারা নিজেরা অসৎ ছিল না। অসৎ উপায়ে ক্ষমতায় এসে অসৎভাবেই ক্ষমতা ধরে রাখতে চেয়েছিলো। সব মানুষকে সে অসৎ পথের সহযাত্রী করতে চেয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানের চেয়ে ভারতের লোকসংখ্যা অনেক বেশি হওয়া সত্ত্বেও ভারত পাকিস্তানকে আক্রমণ করার সাহস পায় না। কারণ পাকিস্তানের কাছে আধুনিক অস্ত্র আছে। ভারত আমাদের বন্ধু না। ভারত অতীতে বন্ধু ছিল না, এখনো বন্ধু না, ভবিষ্যতেও হবে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ভারত স্বাধীনতা যুদ্ধে সহায়তা করেছিল। কিন্তু এখন তাদের আচরণ দেখে মনে হয় তারা শুধু পাকিস্তানকে বিভক্ত করতেই আমাদের সাহায্য করেছিল। তারা পাকিস্তানকে ভাঙতে চেয়েছিল, তারা বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে চায়নি।