Image description

মামলা ও হামলার আশঙ্কায় কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের বরখাস্ত করার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। তাঁদের স্থলে দায়িত্ব পালন করছেন প্যানেল চেয়ারম্যান বা প্রশাসক। কেউ কেউ আইনি লড়াইয়ে জয়ী হয়ে স্বপদে ফিরে এলেও এলাকায় আসছেন না। ফলে সাধারণ মানুষ ন্যায্য সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এরই মধ্যে হত্যা মামলায় অভিযুক্তসহ বিভিন্ন কারণে যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত ছিলেন, তাঁদের বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে মন্ত্রণালয়ের এই আদেশের বিরুদ্ধে অনেকে আইনি লড়াইয়ে জিতে দায়িত্বেও ফিরেছেন। কিন্তু নানা ভয়ভীতির কারণে তাঁরা আত্মগোপনে রয়েছেন। কেবল উপস্থিতি দেখাতে গোপনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করছেন বা মোবাইলে যোগাযোগ রাখছেন। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

যেসব এলাকায় চেয়ারম্যান স্বপদে থেকেও সরেজমিনে অনুপস্থিত, সেখানে দুর্ভোগ আরো তীব্র। নাগরিকত্ব সনদ, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, চারিত্রিক সনদ, জাতীয়তা সনদ, অবিবাহিত/বিবাহিত/বিধবা প্রত্যয়ন এবং আইডি কার্ড সংশোধনের মতো অত্যাবশ্যকীয় কাজগুলো চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরের অভাবে আটকে আছে। দিনের পর দিন ইউনিয়ন পরিষদে ঘুরেও এসব সমস্যার সমাধান পাচ্ছেন না মানুষ। এর ফলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন, অসহায় মানুষের সামাজিক সুরক্ষা এবং জরুরি প্রয়োজনে আইনি সহায়তা পাওয়া ব্যাহত হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় সরকার বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, গত ১২ মে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগপন্থী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। এর ফলে চেয়ারম্যানদের অনুপস্থিতির হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে এর প্রভাব দৃশ্যমান না হলেও, ভবিষ্যতে জনদুর্ভোগ তীব্র আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনুপস্থিত চেয়ারম্যানদের তথ্য সংগ্রহে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে বিভিন্ন উপজেলায় স্থানীয়রা প্রশাসক নিয়োগের দাবিতে আন্দোলন করছেন। প্রশাসক নিয়োগে বিলম্ব হওয়ায় ভোগান্তি বাড়ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।

জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার আয়মারসুলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মামুনুর রশিদ মিল্টন দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত। এই প্রেক্ষাপটে আয়মারসুলপুর ইউনিয়নবাসীর আয়োজনে রবিবার অনুষ্ঠিত এক সভায় বক্তারা অবিলম্বে চেয়ারম্যানকে অপসারণ করে একজন প্রশাসক নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন।

রংপুরে সমপ্রতি এক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য একই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে থানায় মামলা করেছেন। ঘটনার পর থেকে প্রায় দেড় মাস ধরে চেয়ারম্যান অনুপস্থিত। এতে স্থানীয় বাসিন্দারা সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ ফজলে আজিম জানান, জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে চেয়ারম্যানদের উপস্থিতি, অনুপস্থিতি এবং মামলার সার্বিক তথ্য পাঠানোর জন্য নতুন করে চিঠি দেওয়া হয়েছে, যদিও এখনো সবাই তথ্য পাঠায়নি। ফলে মন্ত্রণালয়ের কাছেও পূর্ণ চিত্র নেই।

গত ডিসেম্বরে মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের চার হাজার ৫৮১টি ইউনিয়নের মধ্যে দেড় হাজারের বেশি চেয়ারম্যান অনুপস্থিত ছিলেন। এসব ইউনিয়নে প্রশাসক বা প্যানেল চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করেছেন।

নতুন করে তথ্য সংগ্রহের অংশ হিসেবে জেলা প্রশাসকদের আবারও চিঠি পাঠানো হয়েছে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, শরীয়তপুরের ৬৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ১৫ জন, মানিকগঞ্জের ৬৫টির মধ্যে ৩২ জন এবং রাজশাহীর ৭২টির মধ্যে ৩৯ জন চেয়ারম্যান অনুপস্থিত রয়েছেন। এসব স্থানে প্যানেল চেয়ারম্যান ও প্রশাসকরা দায়িত্ব পালন করছেন।

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আপাতত এভাবেই চলবে। আর নতুন সিদ্ধান্ত কবে আসবে তা মন্ত্রণালয়ের কেউ জানেন না। মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচন ও স্থানীয় নির্বাচনের বিষয় রাজনৈতিক ঐকমত্য না হওয়া পর্যন্ত এভাবেই চলতে পারে। 

স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ কে এম তরিকুল আলম বলেন, এগুলো সব সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বিষয়। স্থানীয় সরকার কমিশনের রিপোর্ট এরই মধ্যে জমা দেওয়া হয়েছে। আমি নিজেও সেখানে কাজ করেছি। তবে এখনো সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি।