
চামড়া খাতে খেলাপি হওয়ার ভয়ে ঋণ দিতে রীতিমতো অনীহা দেখাচ্ছে ব্যাংকগুলো। প্রতিবছরই কমছে ঋণের পরিমাণ। এ বছর যে পরিমাণ ঋণ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৩৮ কোটি টাকা কম। আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর চামড়া ক্রয় ও কাঁচা চামড়া সংরক্ষণে ২৩২ কোটি টাকা ঋণ দেবে ব্যাংকগুলো। ২০২৪ সালে চামড়া কেনার জন্য ২৭০ কোটি টাকা ঋণ দেয় ব্যাংকগুলো। তবে এবার ব্যবসায়ীদের সাড়ে ৪০০ কোটি টাকার ঋণ চাহিদা ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
প্রতিবছরই রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের সোনালী, জনতা, রূপালী ও অগ্রণী সবচেয়ে বেশি ঋণ দিয়ে থাকে। এ বছরও এসব ব্যাংকই বেশি ঋণ দেবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ২০২২ সালে চামড়া খাতে ব্যাংকগুলো ঋণ দেওয়ার লক্ষ্য ছিল ৪৪৩ কোটি টাকা। আর ২০২৩ সালে ছিল ২৫৯ কোটি টাকা।
বিগত বছরগুলোর মতো এবারও বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) গত বছরের চেয়ে বেশি ঋণ সহায়তা চেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে। বিটিএ সভাপতি মো. শাহীন আহমেদ আমার দেশকে বলেন, ২৩২ কোটি টাকার ঋণে কিছুই হবে না। যেখানে বাজার হলো দেড় থেকে দুই হাজার কোটি টাকার। আর যে পরিমাণ ঋণ দিচ্ছে, সেটাও কাগজে-কলমে। কারণ, ঋণ যারা পরিশোধ করছে, তাদের ঋণ পুনঃতফসিল করে দিচ্ছে।
শাহীন আহমেদ বলেন, আগে যেটা সাড়ে ৪০০ কোটি টাকার ওপরে ছিল, এখন অনেক ফ্যাক্টরি খেলাপি হয়ে যাওয়ার কারণে আস্তে আস্তে পরিমাণ কমে গেছে। আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে মিটিং করে বলেছি, আগের ঋণটা বন্ধ করে নতুন করে ৪৫০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার জন্য।
কজন ব্যাংকার জানান, চামড়া খাতের জন্য প্রতি বছর ট্যানারিগুলো ঋণ নিয়ে থাকে, কিন্তু তা যথাসময়ে পরিশোধ করে না। যথাসময়ে ঋণ পরিশোধ না করার কারণে এ খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। ব্যাংকগুলো এখন ভালো গ্রাহক পেলে এ খাতে ঋণ দেয়। ভালো গ্রাহক না পেলে ঋণ দেয় না। দেখা যায়, অধিকাংশ গ্রাহক আগের ঋণ পরিশোধ করেন না, তারাই নতুন ঋণ নিতে আসেন। এসব গ্রাহককে ঋণ দিতে ব্যাংক অনীহা দেখায়। তাই এ খাতে ঋণের পরিমাণ কমেছে।
২০২২ সালের জুলাই মাসে চামড়া খাতে ঋণ দিতে বড় ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ খাতের খেলাপি ব্যবসায়ীদের ২ শতাংশ টাকা জমা দিয়েই ঋণ নিয়মিত করার পাশাপাশি নতুন ঋণ নেওয়ারও সুযোগ দেওয়া হয়। তবে নতুন ঋণের টাকা দিয়ে আগের ঋণ শোধ করা যাবে না, যাতে চামড়া কিনতে নগদ অর্থের সংকট দেখা না যায়।
এদিকে আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণে এতিমখানা, লিল্লাহ বোর্ডিংসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে ৩০ হাজার টন লবণ দেবে সরকার। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত কোরবানি–সম্পর্কিত বিষয়াদির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ কমিটির প্রথম সভা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, অনেক সময় লবণের অভাবে চামড়া নষ্ট হয়ে যায়। সে কারণে অনেকে তাড়াহুড়ো করে কম দামে চামড়া বিক্রি করে দেন। এবার তাই সঠিকভাবে চামড়া সংরক্ষণে বিনামূল্যে লবণ সরবরাহ করবে সরকার। তিনি আরো বলেন, সরকার এতিমের হক নিশ্চিত করতে চায়। এ ছাড়া হাসিলের মূল্য ৫ শতাংশ থেকে কিছুটা কমানোর চিন্তা করা হচ্ছে বলে জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা। আজ বৃহস্পতিবার কোরবানির পশুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হবে বলেও জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা।