Image description

খ্রিষ্টীয় নববর্ষ উদযাপন করতে গিয়ে গত কয়েক বছর একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। ২০২৫ সাল বরণ করতে এবার যেন সেসবের পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য কঠোর অবস্থানে সরকার। থার্টি ফার্স্ট নাইট সামনে রেখে হাই-অ্যালার্টে আছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও রয়েছে কঠোর পদক্ষেপ। উৎসবের নামে কেউ ফানুস আর আতশবাজি ফোটালে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাসহ যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে। এবার রাজধানীতে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত তিন হাজার পুলিশ। পাশাপাশি পরিবেশ অধিদপ্তরের ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। তারা যে কোনো জায়গায় ভ্রাম্যমাণ আদালত চালাবেন।

এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জনজীবন স্বাভাবিক রক্ষার স্বার্থে রাত ৮টা থেকে গুলশান, বনানী ও বারিধারা, বাড্ডা লিংক রোড, ডিওএইচএস বারিধারা ও নতুন বাজার ক্রসিংসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রবেশে কড়াকড়ি করেছে ডিএমপি।

ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা যায়, থার্টি ফার্স্ট নাইটে উন্মুক্ত স্থানে কোনো ধরনের অনুষ্ঠান, সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত, নাচ, গান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, র‍্যালি ও শোভাযাত্রা করা যাবে না। সব ধরনের আতশবাজি, পটকা ফোটানো ও ফানুস ওড়ানো নিষিদ্ধ।

 

সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারিতে র‍্যাব

পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাব গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের মাধ্যমে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়েছে। এছাড়াও নিরাপত্তা টহল বাড়িয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে র‌্যাব। সংস্থাটির সাইবার মনিটরিং টিম অনলাইনে সাইবার নজরদারির মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত অব্যাহত রেখেছে।কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় ঢাকাসহ সারাদেশে সব ফায়ার স্টেশনে হাই-অ্যালার্টের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যাতে থার্টি ফার্স্ট নাইট কেন্দ্র করে কোনো ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়।-ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা মো. শাহজাহান শিকদার

চেকপোস্টে সন্দেহ হলে তল্লাশি

ডিএমপির একটি সূত্র জানিয়েছে, ঢাকার থানাগুলোকে নির্দেশনায় বলা হয়েছে, নিজ নিজ থানায় এলাকায় যেন কোনোভাবে ডিএমপির নির্দেশনা অমান্য করে থার্টি ফার্স্ট নাইটে আতশবাজি কিংবা ফানুস ওড়াতে না পারে।

ডিএমপির আরেকটি সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। এসব এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে কঠোর। পাশাপাশি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় থাকবে নিরাপত্তা চেকপোস্ট। চেকপোস্টে কাউকে সন্দেহ হলে পুলিশ সদস্যরা তল্লাশি করবেন, ব্যাগও সার্চ করা হবে।

 

গুলশান-বনানী-বারিধারা-বাড্ডাসহ যেসব সড়কে প্রবেশ নিষেধ

রাত ৮টা থেকে গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে মহাখালী এলাকা-ফিনিক্স রোড ক্রসিং, বনানী-১১ নম্বর রোড ক্রসিং, চেয়ারম্যানবাড়ি ক্রসিং, ঢাকা গেট, শুটিং ক্লাব, বাড্ডা লিংক রোড, ডিওএইচএস বারিধারা-ইউনাইটেড হাসপাতাল ক্রসিং ও নতুন বাজার ক্রসিং এলাকা প্রবেশের জন্য ব্যবহার করা যাবে না। তবে ওই এলাকা থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে এসব ক্রসিং ব্যবহার করা যাবে।নিরাপত্তা কার্যক্রমে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে র‍্যাবের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। যানবাহন ও পথযাত্রীদের তল্লাশির পর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। র‍্যাবের টহল ও চেকপোস্ট জোরদার করতে ডগ স্কোয়াড মোতায়েন করা হয়েছে।- র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস

৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরদিন ১ জানুয়ারি ভোর ৫টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী ব্যতীত অন্য কোনো ব্যক্তি বা যানবাহন কেবল পুরোনো হাইকোর্ট-দোয়েল চত্বর-শহীদ মিনার-জগন্নাথ হলের দক্ষিণ গেট-পলাশী মোড় দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে। এসব এলাকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে অন্য সব ক্রসিং বন্ধ থাকবে।

নজরদারিতে চিহ্নিত অপরাধীরা

ডিবি সূত্রে জানা যায়, থার্টি ফার্স্ট কেন্দ্র করে কোনো অপরাধী যেন সুযোগ না নিতে পারে সেজন্য দাগী ও চিহ্নিত অপরাধীদের তালিকা করে নজরাদারিতে রাখা হয়েছে। তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

পুলিশের সাইবার ইউনিটগুলো জানিয়েছে, সাইবার জগতে কেউ যাতে গুজব ছড়িয়ে ভিন্ন দিকে ধাবিত না করতে পারে সেজন্য সাইবার মনিটরিং করা হচ্ছে।

আতশবাজি ও পটকায় শব্দদূষণ বন্ধে মাঠে ম্যাজিস্ট্রেট

পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব তপন কুমার বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, ‘শব্দদূষণ নানা ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে। নতুন বছর উদযাপন করতে গিয়ে যেন শব্দদূষণ না হয় সে ব্যাপারে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নানা ধরনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। থার্টি ফাস্ট নাইট কেন্দ্র করে দিনে ও রাতে ঢাকা মহানগরীতে পর্যাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন থাকবে।’

 

তিনি বলেন, ‘কেউ শব্দদূষণ করলে ম্যাজিস্ট্রেটরা যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন। আতশবাজি ও পটকা ফুটিয়ে শব্দদূষণ প্রতিরোধে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং পরিবেশ অধিদপ্তর একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।’

ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘ডিএমপির প্রতিটি থানার ওসিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া আছে। নগরবাসী যাতে শান্তিপূর্ণভাবে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করতে পারে সেজন্য ডিএমপির পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে কেউ যদি উৎসবের নামে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করে এবং আইন অমান্য করে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না।’থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে রাজধানীর সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে অতিরিক্ত তিন হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আমরা কিছু পয়েন্টকে টার্গেট করেছি। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, গুলশান, ৩০০ ফিট, উত্তরা দিয়াবাড়ী এলাকায় বেশি পুলিশ মোতায়েন থাকবে।- ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী

থার্টি ফার্স্ট নাইট সামনে রেখে হাই-অ্যালার্টে রয়েছে ফায়ার সার্ভিস। সারাদেশে ফায়ার স্টেশনগুলোতে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা মো. শাহজাহান শিকদার বলেন, কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় ঢাকাসহ সারাদেশে সব ফায়ার স্টেশনে হাই-অ্যালার্টের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যাতে থার্টি ফার্স্ট নাইট কেন্দ্র করে কোনো ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়।’

তিনি দেশবাসীকে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, কেউ আপনারা ফানুস ওড়াবেন না। এতে অগ্নিদুর্ঘটনা সৃষ্টি হয়।

র‍্যাবের চেকপোস্টে ডগ স্কোয়াড

র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস জাগো নিউজকে বলেন, ‘থার্টি ফার্স্ট উদযাপন উপলক্ষে যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সমগ্র দেশে র‍্যাবের গোয়েন্দা ও আভিযানিক দল প্রস্তুত। ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, অভিজাত হোটেল ও ক্লাব এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এছাড়াও কক্সবাজার, কুয়াকাটাসহ সব পর্যটন এলাকায় লোক সমাগম নিয়ন্ত্রণ করা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে র‍্যাব।’

তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা কার্যক্রমে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে র‍্যাবের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। যানবাহন ও পথযাত্রীদের তল্লাশির পর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। র‍্যাবের টহল ও চেকপোস্ট জোরদার করতে ডগ স্কোয়াড মোতায়েন করা হয়েছে।’

লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস আরও বলেন, ‘ভিআইপি/ভিআইপি, বিদেশি কূটনৈতিক মিশনের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন মেগা প্রজেক্টে কর্মরত ও বাংলাদেশে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকদের এলাকায় গুরুত্বের সঙ্গে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।’

যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে র‍্যাব কন্ট্রোল রুমের হটলাইন নম্বরে (০১৭৭৭৭২০০২৯) জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

গুলশান, ৩০০ ফিট, উত্তরা-দিয়াবাড়ী থাকবে বেশি পুলিশ

ঢাকায় সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে রাজধানীর সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে অতিরিক্ত তিন হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আমরা কিছু পয়েন্টকে টার্গেট করেছি। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, গুলশান, ৩০০ ফিট, উত্তরা দিয়াবাড়ী এলাকায় বেশি পুলিশ মোতায়েন থাকবে।’