যুক্তরাষ্ট্রে নতুন বছরটা শুরু হলো রক্তপাত দিয়ে। ঘড়ির কাঁটার হিসাবে ২০২৫ সালের প্রথম ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে তিনটি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলায় নিহত হয়েছেন ১৬ জন। আহত হয়েছেন অনেকে। বছরের শুরুতেই হওয়া এ হামলাগুলোর মধ্যে কোনো যোগসাজশ আছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে মার্কিন কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (এফবিআই) তদন্তকারীদের। এ সন্দেহের সত্যতা যাচাইয়ে এরই মধ্যে কাজও শুরু করেছেন তাঁরা। এফবিআইয়ের পাশাপাশি এ ঘটনা তদন্ত করছে যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ।প্রথম হামলাটি ঘটে স্থানীয় সময় গত বুধবার লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের নিউ অরলিয়েন্স শহরে। সেখানে বর্ষবরণের উৎসবে যোগ দেওয়া লোকজনের ওপর গাড়ি উঠিয়ে দেন এক ব্যক্তি। তিনি মার্কিন সামরিক বাহিনীর সাবেক সদস্য ছিলেন। তাঁর ব্যবহার করা গাড়িতে সন্ত্রাসী সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) পতাকা পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় হামলাকারীসহ ১৫ জন নিহত ও ৩৫ জন আহত হন।
এর কয়েক ঘণ্টা পরে নেভাদার লাস ভেগাসে ট্রাম্প হোটেলের বাইরে টেসলার তৈরি একটি ‘সাইবার ট্রাকে’ বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে নিহত হন ট্রাকের চালক। তিনিও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সদস্য ছিলেন। ওই ঘটনায় আহত হন সাতজন। এ ছাড়া বুধবার রাতে নিউইয়র্কে একটি ক্লাবের বাইরে সর্বশেষ হামলার ঘটনাটি ঘটে। সেখানে কয়েকজন গুলি চালালে আহত হন ১০ জন।
এসব হামলা কোনো বড় পরিকল্পনার অংশ কি না, তা নিয়ে অনেকেই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। যেমন মার্কিন লেখক সেন হেস্টিংস বলেছেন, ‘নিউ অরলিয়েন্সের হামলা এবং লাস ভেগাসে সাইবার ট্রাকে বিস্ফোরণ অবিশ্বাস্য রকমের কাকতালীয় ঘটনা। অথবা আমরা যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী হামলা হতে দেখছি। লাস ভেগাসের হামলায়ও যদি আইএস যুক্ত থাকে, তাহলে আমরা বড় সমস্যায় পড়েছি।’
নিউ অরলিয়েন্সের হামলাকে ‘সন্ত্রাসবাদ’-সংশ্লিষ্ট বলে উল্লেখ করেছে মার্কিন প্রশাসন। এর সঙ্গে সাইবার ট্রাকের বিস্ফোরণের কোনো সংযোগ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে এখন পর্যন্ত এমন কোনো তথ্য সামনে আসেনি বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। আপাতত তদন্তকারীরাও একই কথা বলছেন।
হামলাকারী জব্বার কে, তাঁর সঙ্গে জড়িত ছিলেন ‘একাধিক ব্যক্তি’
দুই হামলায় নানা মিল
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, গত বুধবার ঘটে যাওয়া তিন হামলার মধ্যে যোগসূত্র থাকার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। নিউ অরলিয়েন্স ও লাস ভেগাসে দুই হামলার ঘটনাই খুবই অল্প সময়ের ব্যবধানে ঘটেছে। দুই হামলাকারীই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সদস্য ছিলেন। এমনকি তাঁরা একই সামরিক ঘাঁটিতে অবস্থান করেছেন। এ ছাড়া তাঁরা দুজনই ‘টিউরো অ্যাপ’ নামের একটি অ্যাপলিকেশন থেকে গাড়ি দুটি ভাড়া করেছিলেন।
এদিকে ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় বসতে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর আগে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে পরিকল্পিত হামলা চালানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে বিস্ফোরিত হওয়া সাইবার ট্রাকের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলা ধনকুবের ইলন মাস্কের মালিকানাধীন। আর বিস্ফোরণও হয়েছে ট্রাম্পের হোটেলের সামনে। ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের বড় সমর্থক ছিলেন মাস্ক। এ থেকে দুইয়ে–দুইয়ে চার মেলাচ্ছেন অনেকে।
লাস ভেগাস পুলিশের কর্মকর্তা কেভিন ম্যাকম্যাহিল বলেছেন, সাইবার ট্রাকের ভেতরে বিস্ফোরক ছিল। নিউ অরলিয়েন্সে হামলার ঘটনাস্থলের কাছ থেকেও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। তাই দুই ঘটনার মধ্যে যোগসূত্র আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হামলাগুলো ডোনাল্ড ট্রাম্প–সংশ্লিষ্ট কি না, সে প্রশ্নের জবাবও খোঁজা হচ্ছে।
এদিকে লাস ভেগাসের ঘটনার পেছনে সন্ত্রাসবাদ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে এফবিআই। তারা বলেছে, এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় আইএসের সংশ্লিষ্টতা থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এর সঙ্গে নিউ অরলিয়েন্সের হামলার যোগসূত্রও আপাতত মেলেনি। তবে তদন্ত এখনো শুরুর দিকে রয়েছে। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আসল ঘটনা সামনে আসবে।