Image description

সিলেটের আলোচিত লেডি ও পলাতক আওয়ামী লীগ নেত্রী হেলেন আহমদের রোষানলে পড়ে অনেক প্রবাসী দীর্ঘদিন দেশে আসেননি। এরমধ্যে একজন হচ্ছেন লন্ডন প্রবাসী শামীম চৌধুরী। বাড়ি সিলেট শহরতলীর বড়শালায়। তার পিতা জিয়া উদ্দিন চৌধুরী সিলেট বিএনপি’র পরিচিত নেতা। সাবেক মন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের জমানায় জিয়াউদ্দিন চৌধুরী খাদিমনগর এলাকার বিএনপি’র সভাপতি ছিলেন। সালিশ ব্যক্তিত্ব হিসেবে খ্যাতি ছিল তার। বড়শালা এলাকায় বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক তিনি। অপরজন লন্ডনের পরিচিত ব্যবসায়ী কয়সর আহমদ। এই দু’জনের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ ছিল আওয়ামী লীগ নেত্রী হেলেন আহমদের। মূলত ভূমি ব্যবসার নামে-বেনামে সম্পত্তি দখলে রাখতে সব সময় ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতেন হেলেন। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের ঘনিষ্ঠজন ছিলেন তিনি। হেলেনের ক্ষমতাকে পুঁজি করে দাপট দেখিয়েছেন হেলেনের ব্যবসায়িক পার্টনার মিসবাহউল ইসলাম কয়েস। ১২ই এপ্রিল রাতে একাধিক মামলার আসামি হিসেবে কয়েসকে গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। সে এখন কারাগারে। হেলেন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন লন্ডনে। তাদের প্রতারণা, নির্যাতন, মামলার শিকার হওয়ার ব্যক্তিরা অপকর্মের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন।

 সিলেট শহরতলীর বড়শালা এলাকায় রয়েছে হেলেন আহমদের মালিকানাধীন আহমদ হাউজিং। এ হাউজিং উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত। এ হাউজিং ও পাশের জমি নিয়ে লন্ডন প্রবাসী শামীম চৌধুরীর সঙ্গে আগে থেকেই বিরোধ চলে আসছে। সঙ্গে রয়েছেন শামীমের ব্যবসায়িক পার্টনার কয়সর আহমদও। জমি নিয়ে তাদের বিরোধ একাধিকবার সিলেটে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। লন্ডনে অবস্থান করা শামীম চৌধুরী গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন- শুধুমাত্র জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে তিনি ৯ বছর ধরে হেলেন ও কয়েসের নানা নির্যাতনের শিকার। তাদের ক্ষমতার দাপটের কারণে ভয়ে দেশে আসতে পারেননি। ২০১৬ সাল থেকে তিনি দেশে আসছেন না। এই সময়ে তার ও তার ব্যবসায়িক পার্টনারের বিরুদ্ধে ৯-১০টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলার মধ্যে ধর্ষণ মামলাও রয়েছে। দেশে না এসেও তিনি ফৌজদারি অনেক ঘটনার আসামি হয়েছেন। আর এসব মামলার বেশির ভাগেরই তদন্ত রিপোর্টে তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ২০২১ সালে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার স্বপ্না রানী চক্রবর্তী নামের এক মহিলা মিসবাহউল ইসলাম কয়েসের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দায়ের করেছিলেন। ওই মামলা সম্পর্কে কিছু জানতেন না লন্ডনে থাকা শামীম চৌধুরী ও কয়সর আহমদ। পুলিশ ওই মামলা তদন্ত করে কয়েসের পক্ষে ফাইনাল রিপোর্ট দাখিল করে। মিসবাহউল ইসলাম কয়েস পরের বছরের ২২শে জুলাই ৬ জনকে আসামি করে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় তিনি ৩ নম্বর আসামি হিসেবে শামীম চৌধুরী, ৪ নম্বর আসামি হিসেবে তার সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ মা জহুরা জিয়া ও ৫ নম্বর আসামি হিসেবে কয়সর আহমদকে আসামি করেন।

 শামীম আহমদ জানিয়েছেন- সিলেটে জমি নিয়ে হেলেন-কয়েসের সঙ্গে তাদের বিরোধী রয়েছে। কিন্তু ঢাকার মামলায় তো তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এই মামলায় তাদের আসামি করা হয়। মামলা দায়েরের এক মাসের মাথায় হেলেন ও কয়েস ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ঢাকার পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন- পিবিআইকে দিয়ে চার্জশিট প্রদান করেন। ওই চার্জশিটে তিনি ও তার ব্যবসায়িক পার্টনার কয়সর আহমদকে অভিযুক্ত করা হয়। ঘটনাকালীন সময়ে বিদেশে থাকায় পরবর্তীতে কয়সর আহমদ দেশে এসে ঢাকার জজকোর্ট থেকে জামিন পান। আইনজীবীরা জানিয়েছেন- কয়েসের বিরুদ্ধে দায়ের করা ধর্ষণ মামলার রিপোর্ট একপেশে হওয়ায় মামলার বাদী স্বপ্না রানী চক্রবর্তী পরবর্তীতে ওই মামলা উচ্চ আদালতে স্থগিত করে রাখেন। এখন সেটি পুনঃতদন্তের জন্য আবেদন জানানো হতে পারে। একইসঙ্গে কয়েসের দায়ের করা মামলাটিও উচ্চ আদালতে স্থগিত করা হয়েছে। বর্তমানে দুটি মামলাই উচ্চ আদালতে স্থগিত রয়েছে। গত ২৯শে এপ্রিল ঢাকার রমনা থানায় স্বপ্না একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। তিনি ডায়েরিতে তিনি কারান্তরীণ হওয়া কয়েসের কয়েকজনের স্বজনের বিরুদ্ধে হুমকি  দেয়ার অভিযোগ করেছেন। ওই অভিযোগে তিনি জানান-জানু ও মোর্শেদ নামের ধর্ষণসহ প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে। রমনা থানা পুলিশ জিডির তদন্ত করছে। শামীম চৌধুরী ও তার ব্যবসায়িক পার্টনার কয়সর আহমদ জানিয়েছেন- ধর্ষণের মামলা ও পরবর্তীতে হুমকি প্রদানের বিষয়টি স্বপ্না চক্রবর্তী ও কারান্তরীণ কয়েসের বিষয়। সেখানে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কিন্তু স্বপ্না চক্রবর্তীর সঙ্গে তার মাসহ তাদের তিনজনকে আসামি দেখিয়ে চার্জশিট পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া সবই হয়েছে ক্ষমতার জোরে। তারা আইনি লড়াইয়ে রয়েছেন। এখন যেহেতু মুক্ত পরিবেশ। বৃদ্ধ মাসহ তারা দেশে এসে সে লড়াই চালিয়ে যাবেন। তাদের সঙ্গে যা কিছু করা হয়েছে সব হেলেনের ক্ষমতার জোরে করা হয়েছে বলে দাবি করেন তারা।