Image description

মফিজুল ইসলাম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট মিরপুরে নিহত হন তাঁর ভাই মহিউদ্দিন। কিন্তু ভিন্ন ব্যক্তি মামলা করায় ভাই হত্যার মামলা করতে পারছেন না মফিজুল। এখন নিখোঁজ সেই বাদীও।

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের ঘটনার প্রায় আড়াই হাজার মামলার মধ্যে অনেক মামলাতেই বাদী চেনেন না আসামিকে আবার আসামিও চেনেন না বাদীকে। অনেক মামলা হয়েছে দখল, বাণিজ্য আর চাঁদাবাজির জন্য। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, মামলা হয়েছে জুলাই-আগস্টে আন্দোলন করা শিক্ষার্থীদের নামেও। 

মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘আমার মামাতো ভাই বলতে কেউ নেই। ভাই হত্যার ঘটনায় যে মামলা করেছেন তাঁকে আমরা কেউ চিনি না। মামলার কাগজে যে আইডি কার্ডের নাম্বার দেওয়া হয়েছে তাও স্পষ্ট না।’

গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশান ও পল্টন থানার আলাদা দুটি মামলার আসামি করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর সাবেক পরিচালক ও নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু ইউসুফ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহকে। পাঁচ মাস পর পল্টন থানায় আর যাত্রাবাড়ী থানাতেও করা হয় আরও দুটি হত্যা মামলা। 
 
আবু ইউসুফ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় দখল করে নিতেই এসব মামলা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের পর আমি ও আমার সন্তানসহ প্রতিষ্ঠানের সহকর্মীদের জড়িয়ে পরিকল্পিতভাবে এই মামলাগুলো দেওয়া হয়েছে। এটি একটি পরিকল্পিত ছক।’

জানা গেছে, আগস্টের পর নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা হয় একাধিকবার। উপাচার্যকে জিম্মি করে চেষ্টা চালানো হয় বিশ্ববিদ্যালয় দখলের। পরে সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে আটক করে দুজনকে।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সামসুল হক বলেন, ‘বোরহানউদ্দিন এবং লুতফুর রহমান সানি তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় দখল করে নিতে অপচেষ্টা চালিয়েছে।’

গুলশান থানার মামলার বাদী আবু জাফর জানান, মামলার আসামি ঠিক করে দিয়েছে অন্য লোক।

এদিকে, এই মামলায় আসামির তালিকায় নাম এসেছে জুলাই-আগস্টে আন্দোলন করা শিক্ষার্থীদেরও।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাফাত হাসান রাজীন বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে মামলার কোনো ভিত্তি নেই। আমরা জুলাই-আগস্টে আন্দোলন করেছি। পরে যখন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর হামলা হয়, তখন আমরা তা প্রতিরোধ করেছি।’

আইনজীবীরা বলছেন, যারাই মামলা বাণিজ্য ও হয়রানির জন্য মামলা দিচ্ছেন সময় এসেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার।

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার ওমর ফারুক বলেন, ‘মিথ্যা মামলার জন্য যদি পাঁচ-দশজনকে সাজা দেওয়া হয় তাহলে এটি কমে আসবে। এবং যারা থানায় বসে এই মামলার ফরমেট তৈরি করছেন, তাঁদের কয়েকজনকে যদি চাকরিচ্যুত করা যায় তাহলেও এই মিথ্যা মামলার হার কমে যাবে।’

মিথ্যা মামলাকে পুঁজি করে দখল বাণিজ্য ও চাঁদাবাজি বন্ধ করা না গেলে জুলাই শহীদদের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে বলে মনে করেন অংশিজনেরা।