Image description

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকার পরিবর্তনের ৯ মাস অতিবাহিত হলেও দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতির কোনো উন্নতি ঘটেনি। এমনকি গত মাসে ঢাকঢোল পিটিয়ে বিনিয়োগ সম্মেলন করা হলেও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তেমন কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি। বরং গত কয়েক মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে কমেছে বিনিয়োগ। যদিও বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বিনিয়োগ সামিট করায় প্রশংসায় ভাসছেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বিনিয়োগ পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি।

অবশ্য বিডার চেয়ারম্যান বলেছেন, বিনিয়োগ তো একদিনেই বাড়ে না। সময় প্রয়োজন। সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বাংলাদেশ সম্পর্কে একটা ধারণা দিতে চেষ্টা করেছি। এদিকে বিশ্বব্যাংক ঢাকার সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেছেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না ফেরা পর্যন্ত বিনিয়োগ বাড়ার সম্ভাবনা নেই। তবে গত কয়েক মাসে বিডা কিছু কাজ করেছে, যেগুলো বেশ ইতিবাচক। কিন্তু রাজনৈতিক পরিবেশ স্থিতিশীল না হলে কেউই এখানে নতুন করে বিনিয়োগ করার মতো ঝুঁকি নেবেন না এটাই স্বাভাবিক।

তারা মূলত এখন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। অন্তর্বর্তী সরকার বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য ইনভেস্টমেন্ট সামিট আয়োজন, স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবার পরিধি বৃদ্ধি করতে উদ্যোগ নেয়। একই সঙ্গে সব বিনিয়োগ প্রচারণা সংস্থাকে একই ছাদের নিচে নিয়ে আসার কার্যক্রমও হাতে নেয়। চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বে-টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ডিপিপি অনুমোদন করে গত মাসের শেষ দিকে। এরপর এখন পর্যন্ত বিনিয়োগ বৃদ্ধির মতো কোনো লক্ষণ দৃশ্যমান হয়নি। এর ফলাফল, বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের সূচক হিসেবে বিডায় নিবন্ধিত বিনিয়োগ প্রস্তাবের সংখ্যা এখনো নিম্নমুখী। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) নিট প্রবাহও কমেছে। অন্যদিকে শিল্পের মূলধনি যন্ত্র আমদানিও নিম্নমুখী প্রবণতাতেই রয়েছে। সব মিলিয়ে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো চেষ্টারই বাস্তব প্রতিফলন এখনো দেখা যায়নি। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাস জুলাই থেকে মার্চে মূলধনি যন্ত্র আমদানির ঋণপত্র নিষ্পত্তি বা আমদানি বাবদ অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে ১৫২ কোটি ১৫ লাখ ৫০ হাজার ডলারের। গত অর্থবছরের একই সময়ে ঋণপত্র নিষ্পত্তি হয়েছিল ২১৩ কোটি ৩৩ লাখ ডলারের। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে মূলধনি যন্ত্র আমদানি কমেছে ২৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ। গত মাসে অনুষ্ঠিত ইনভেস্টমেন্ট সামিটে অংশ নেওয়া বিদেশি এবং স্থানীয় বিনিয়োগকারীরা জানিয়েছিলেন, এখানে বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু সেই চূড়ান্ত বিনিয়োগ করাতে হলে এর উপযুক্ত পরিবেশ ও সুযোগ-সুবিধার উন্নতি হতে হবে, যা এখনো অনুপস্থিত। তারা ঢাকার বাইরে নারায়ণগঞ্জ এবং চট্টগ্রামের ইকোনমিক জোনগুলোও পরিদর্শন করেছেন। কিন্তু চূড়ান্ত কোনো বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি এখনো দেননি।

বিডার তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে নিবন্ধিত বিনিয়োগ প্রকল্প সংখ্যা ছিল ১ হাজার ১১৩। এসব প্রকল্পে প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৮৯ হাজার ১২৭ কোটি ২২ লাখ ২৩ হাজার টাকা। চলতি অর্থবছরের ১০ মাস জুলাই থেকে এপ্রিলে দেশি-বিদেশি নিবন্ধিত বিনিয়োগ প্রকল্পের সংখ্যা ৮১৪। এসব প্রকল্পে প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ ২৭ হাজার ৯৩৬ কোটি ৮৮ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। এ হিসাবে চলতি অর্থবছরের দুই মাস বাকি থাকলেও গত অর্থবছরের চেয়ে নিবন্ধিত বিনিয়োগ প্রকল্প পরিস্থিতি এখনো নেতিবাচক পর্যায়েই রয়েছে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা চেম্বারের সাবেক প্রেসিডেন্ট আবুল কাসেম খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা খুবই জরুরি। আমরা আগে একটা অচলাবস্থার মধ্যে ছিলাম। তখন নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা-বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হয়েছেন। আর এখন রাজনৈতিক পরিবেশ স্থিতিশীল নয়, ফলে নতুন করে বিনিয়োগ করার মতো আস্থার জায়গা এখনো তৈরি হয়নি।