Image description

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থী নাহিদ হাসানের পরিবারের আর্থিক সংকট মোকাবিলায় ও কৃষিকাজে সহায়তা দিতে বিজিবি দুটি হালের মহিষ দিয়েছে। আজ সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) নওগাঁর ১৬ বিজিবি সদর দপ্তরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মহিষ দুটি নাহিদের বাবা সাইদুর আলমের হাতে তুলে দেন ১৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহম্মদ সাদিকুর রহমান।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ২০ জুলাই ঢাকার রামপুরা এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকালে গুলিবিদ্ধ হন নাহিদ হাসান (২৮)। এ সময় পুলিশের ছোড়া গুলি তাঁর পিঠ দিয়ে প্রবেশ করে বুক দিয়ে বেরিয়ে যায়। পরে তাঁর বন্ধুদের সহায়তায় স্থানীয় একটি হাসপাতালে নাহিদকে ভর্তি করানো হয়। এরপর তার উন্নত চিকিৎসার জন্য নাহিদকে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বর্তমানে এখানেই চিকিৎসাধীন তিনি।

নাহিদ ঢাকায় একটি পার্ট টাইম চাকরি করতেন। এছাড়া তিনি রাজশাহীর এক কলেজে পড়াশোনা করতেন।

নাহিদের পরিবার জানায়, আন্দোলনে আহত হবার পর তার পরিবারের আর্থিক ও মানসিক বিপর্যয় বেড়ে যায়। তার বাবা সাইদুর আলম একজন কৃষক। পরিবারটি নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার পিড়াকৈর গ্রামে বসবাস করে। বিজিবির এই উদ্যোগে খুশি পুরো পরিবার।

এদিকে মহিষ দুটি গ্রহণের সময় নাহিদের বাবা সাইদুর আলম বলেন, ‘আমি কখনও ভাবিনি যে আমাদের পরিবারের জন্য কেউ এত বড় সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসবে। নাহিদ যখন আহত হলো, তখন থেকেই আমাদের সংসারে অন্ধকার নেমে এসেছে। কৃষিকাজই ছিল আমাদের জীবিকার প্রধান মাধ্যম, কিন্তু পরিস্থিতি এত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল যে সেটাও চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছিল। বিজিবি যে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, তা আমাদের জীবনে আশার আলো জ্বালিয়েছে।’

নাহিদের বাবা সাইদুর আলম বলেন, ‘মহিষ দুটি পেয়ে আমি আবার নতুন করে শুরু করার সাহস পাচ্ছি। এই সহায়তা আমার পরিবারের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। আমরা বিজিবির এই মহৎ উদ্যোগের জন্য চিরকৃতজ্ঞ।’

তিনি আরও বলেন, ‘নাহিদ তার নিজের ভবিষ্যতের কথা না ভেবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল। বিজিবির এই সহায়তা আমাদের থমকে যাওয়া জীবনকে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ দিচ্ছে। আমি প্রার্থনা করি, নাহিদ যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে এবং আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে। যারা আমাদের এই কঠিন সময়ে সাহায্য করেছে, তাদের প্রতি আমার হৃদয়ের গভীর থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’

এ ব্যাপারে ১৬ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহম্মদ সাদিকুর রহমান জানান, নাহিদের ঘটনাটি বিজিবির নজরে আসার পর তার পরিবারের আর্থিক সংকটের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। বিজিবির মহাপরিচালকের নির্দেশনায় ১৬ বিজিবির পুনর্বাসন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কৃষিকাজে সহায়তার জন্য দুটি হালের মহিষ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করি, মহিষ দুটি দিয়ে চাষাবাদ করে নাহিদের পরিবার আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে। বিজিবি সবসময় দেশের মানুষের পাশে থেকে তাদের সহযোগিতা করে যাবে।’