Image description

চট্টগ্রামে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আগমনে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ও জেলা পুলিশ। সার্কিট হাউস এবং সমাবর্তন অনুষ্ঠানস্থলে সোয়াট টিম ও ডগ স্কোয়াড থাকবে। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তায় গোয়েন্দা সংস্থাও মাঠে থাকবেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

জানা যায়, প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তায় কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব, ডিটেকটিভ ব্রান্স, যৌথবাহিনী, সিআইডি, এনএসআই, ডিএসবি, এসবি, ডিজিএফআই ও এএসএফের সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তায় মাঠ থাকবেন। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকধারী পুলিশ মোতায়েন থাকবে বলে জানিয়েছে নগর পুলিশ ও জেলা পুলিশ। নাশকতা এড়াতে শহরের প্রবেশ মুখে তল্লাশি চৌকি বসানো হয়েছে। সব মিলিয়ে জেলা পুলিশ ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পলিশের ৩ হাজারের বেশি সদস্য মোতায়ান থাকবে।

জেলা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার রাসেল কালবেলাক জানান, প্রধান উপদেষ্টার আগমনে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে জেলা পুলিশ। এদিন জেলা পুলিশের প্রায় দেড় হাজারের বেশি সদস্য মোতায়ন থাকবে। এরইমধ্যে যারা দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন তাদের নির্দেশনা প্রদান শেষ হয়েছে। আমাদের এসপি চবি’র সমাবর্তনস্থল সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। সমাবর্তনস্থলে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকধারী পুলিশ মোতায়েন থাকবে। একইসঙ্গে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও জেলা ট্রাফিক পুলিশও দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত থাকবেন।

আগামী ১৪ মে বুধবার প্রধান উপদেষ্টা চট্টগ্রামে আসছেন। তার আগমনে নগরী এবং হাটহাজারী উপজেলা সেজেছে ভিন্ন সাজে। মানুষের মধ্যেও উৎসাহ, উদ্দীপনার কমতি নেই। বিকেলে তিনি হাজি মোহাম্মদ নজু মিঞা সওদাগর বাড়ির অদূরে নুরালী বাড়ি উপ-ডাকঘর সংলগ্ন কবরস্থানে শায়িত তার দাদা-দাদির কবর জেয়ারত করবেন। পাশের মাঠে আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কুশল বিনিময় করবেন।

হাটহাজারীর ইউএনও এ বি এম মশিউজ্জামান বলেন, ১৪ মে বিকেলে প্রধান উপদেষ্টা গ্রামের বাড়ি সংলগ্ন দাদা-দাদির কবর জেয়ারত করবেন এবং আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কুশলাদি বিনিময়ের কথা রয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার সফরসূচি অনুসারে, তিনি সকালে চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে এনসিটি-৫ প্রাঙ্গণে এক সভায় যোগ দেবেন। সেখানে বন্দর ও জাহাজ চলাচল খাতের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি ও বাণিজ্য সংস্থার নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। বন্দর থেকে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে আসবেন। সেখানে তিনি কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচন করবেন। প্রধান উপদেষ্টা চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালের দলিল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করবেন। এরপর দুপুরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের উদ্দেশে সার্কিট হাউস ত্যাগ করবেন।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মাহমুদা বেগম কালবেলাকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টার আগমনে সিএমপির পক্ষ থেকে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সিএমপির সোয়াট টিম ও ডগ স্কোয়াড মাঠে মোতায়ন করা হবে। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকধারী পুলিশও থাকবে। এ ছাড়া গোয়েন্দা পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশ মাঠে দায়িত্ব পালন করবেন।

এদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠান ঘিরে চলছে সাজরব। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে তৈরি করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন সমাবর্তন প্যান্ডেল। প্রায় ২৩ হাজার স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীরা এতে অংশগ্রহণ করবেন। এ সমাবর্তনে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ডি লিট ডিগ্রি প্রদান করা হবে। শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট প্রদানের জন্য উপাচার্য এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের স্বাক্ষরসহ সনদ প্রস্তুতির কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে। বিভাগ বা ইনস্টিটিউটগুলোতে সার্টিফিকেট পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অতিথিসহ প্রায় ২৫ হাজার লোকের বসার জন্য মূল প্যান্ডেল তৈরি হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা যাতে অনুষ্ঠান দেখতে পারেন সেজন্য লাইভে অনুষ্ঠান সম্প্রচারের ব্যবস্থা হচ্ছে এবং ক্যাম্পাসে চারটি পয়েন্টে এলইডি স্ক্রিনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, ৫ম সমাবর্তনে ৪২ জন পিএইচডি, এবং ৩৩ জন এম.ফিল. ডিগ্রিসহ মোট ২২ হাজার ৫৮৬ জন শিক্ষার্থীকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করা হবে। কলা ও মানববিদ্যা ৪ হাজার ৯৮৮ জন, বিজ্ঞান ২ হাজার ৭৬৬ জন, ব্যবসায় প্রশাসন ৪ হাজার ৫৬৩ জন, সমাজ বিজ্ঞান ৪ হাজার ১৫৮ জন, জীববিদ্যা ১ হাজার ৬৮৫ জন, ইঞ্জিনিয়ারিং ৭৯৬ জন, আইন ৭০৩ জন, শিক্ষা ৩১৭ জন, মেরিন সায়েন্স ২৮৪ জন, চিকিৎসা ২ হাজার ২৯৬ জন বিভিন্ন ডিগ্রি অর্জন করেছেন। সমাবর্তন অনুষ্ঠানের দিন গ্র্যাজুয়েটদের ব্যক্তিগত কোন গাড়ি ১ নম্বর মূল গেট (হাটহাজারী রোড) থেকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না।

ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়ার জন্য ১ নম্বর গেট থেকে বাসের ব্যবস্থা থাকবে। গ্র্যাজুয়েটদের যাতায়াতের সুবিধার্থে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন পয়েন্টন্ট যথা- ষোলশহর শপিং কমপ্লেক্স, নিউ মার্কেট, জমিয়াতুল ফালাহ, পলিটেকনিক মোড় (ফ্লাইওভার থেকে নেমে) থেকে বাসের ব্যবস্থা থাকবে। সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত বাসগুলো শহর থেকে ক্যাম্পাসে যাতায়াত করবে এবং ক্যাম্পাস থেকে ফিরতি বাসগুলো বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে শুরু হয়ে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত চলবে।

বটতলী স্টেশন থেকে ৭টা ৫ মিনিট ও ৭টা ৪০ মিনিট, ষোলশহর স্টেশন থেকে সাড়ে ৯টা, ১০টা ৫মিনিট, সাড়ে ১১টা এবং ফিরতি ট্রেন ক্যাম্পাস থেকে ৪টা ৪০ মিনিট, ৬টা ২০মিনিট এবং ৯টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত চলাচল করবে। এছাড়া আইডি কার্ড ছাড়া নিরাপত্তাবাহিনী কাউকে সমাবর্তন অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশের অনুমতি দেবে না।

নিরাপত্তার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানান, সরকারি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সাথে আমাদের প্রক্টরিয়াল বডি এবং প্রশাসনের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার মতামত অনুযায়ী সমাবর্তীদের কাছে ফোন যাচ্ছে। কনভোকেশন কার্ড পেলে সে স্বাভাবিকভাবে অনুষ্ঠানে যেতে পারবেন, যদি না পুলিশ বা সংস্থা থেকে কাউকে বিশেষভাবে নিষেধ করা না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ কালবেলাকে বলেন, সমাবর্তনে প্রধান উপদেষ্টা অংশ নেবেন। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার দায়িত্ব স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) গ্রহণ করেছে। অতিরিক্ত পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা সাদা পোশাকে কাজ করছে।