Image description

সরকারের অংশীদারিত্ব থাকা বহুজাতিক কোম্পানি ও বড় বড় কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি শেয়ারবাজার নিয়ে পাঁচটি নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে হবে, যাতে এটি লুটেরাদের আড্ডাখানা না হয়ে মানুষের আস্থার জায়গা হয়ে ওঠে।

পুঁজিবাজার উন্নয়ন ও শক্তিশালীকরণের লক্ষ্যে রবিবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ নির্দেশনা দেন তিনি। বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (অর্থ মন্ত্রণালয়) আনিসুজ্জামান চৌধুরী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ উপস্থিত ছিলেন।
প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, আজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মিটিং হয়েছে। বিএসইসির চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদ পুরো মিটিংয়ে ব্রিফি করেন- মার্কেটের কী অবস্থা। গত ৯ মাসে কী ধরনের রিফর্ম করা হয়েছে, কোথায় কোথায় এখনো রিফর্ম চলমান; সেগুলো নিয়ে উনি বিস্তারিত একটা পিকচার দেন এবং তার আলোকে খুবই প্রাণবন্ত আলোচনা হয়েছে। সেই আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা পাঁচটি প্রধান নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রথম নির্দেশনা হলোÑ বাংলাদেশে যেসব বিদেশী কোম্পানিতে সরকারের স্টেক (অংশীদারিত্ব) আছে যেমন ইউনিলিভারÑ তাদের দ্রুত শেয়ারবাজারে আইপিওতে আনা।
দ্বিতীয়ত- বেসরকারি খাতের ভালো ও বড় বড় কোম্পানিকে প্রণোদনা দিয়ে বাজারে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশে অনেক প্রাইভেট কোম্পানি আছে যাদের টার্নওভার বিলিয়ন ডলার। বড় বড় এসব কোম্পানিকে স্টক মার্কেটে আনার জন্য বলা হয়েছে। যেমন সিটি, মেঘনা আরও অনেক কোম্পানি আছে, তাদের কীভাবে আনা যায়।
তৃতীয়ত- পুঁজিবাজার সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করতে বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ দল এনে তিন মাসের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া। স্টক মার্কেটে ভেস্টেড ইন্টারেস্টেড লোক অনেক। অনেক ধরনের ভেস্টেড ইন্টারেস্টেড আছে। ফলে দেখা যায় রিফর্ম নিলেও, অনেক সময় ঠিকমতো কাজ করতে চায় না বা এরা রিফর্মগুলোর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যায়। এ জন্য স্টক মার্কেটে ডিপ রিফর্ম যাতে ক্যারি আউট করা যায়, সে উদ্যোগ নিতে হবে।
চতুর্থত- পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন- যাদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ আছে দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। যাতে পুরো স্টক মার্কেটে এক ধরনের বার্তা পৌঁছায় কোনো ধরনের কোনো অনিয়ম বরদাশত করা হবে না।
পঞ্চমত- বড় বড় কোম্পানি যাতে ব্যাংক ঋণের বদলে শেয়ারবাজারের মাধ্যমে বন্ড বা শেয়ার ছেড়ে পুঁজি সংগ্রহে আগ্রহী হয়, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে প্র্রেস সচিব বলেন, বাংলাদেশে যেসব বড় বড় কোম্পানি আছে তারা ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নেয়। অনেক সময় সিন্ডিকেট ঋণ দেয়, অনেকগুলো ব্যাংক থেকে এক হাজার দুই হাজার কোটি টাকা ঋণ নেন বড় ফান্ড সেটআপের জন্য। এটার জন্য বলা হয়েছেÑ এই ঋণটা কীভাবে নিরুৎসাহিত করে, কীভাবে তারা বন্ড ইস্যু করে বা স্টক মার্কেটের মাধ্যমে তাদের ফান্ড সংগ্রহ করতে পারেন।
তিনি বলেন, খুবই প্রাণবন্ত আলোচনা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা পুরোটা শুনেছেন, শোনার পর উনি নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা আশা করছি দ্রুত স্টক মার্কেটে ক্লিয়ার ও মিনিংফুল রিফর্ম দেখতে পারব।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের অফিসিয়াল মিটিং। আপনারা দেখবেন আমাদের কাজগুলো হলে যারা স্টেকহোল্ডার সবাই বেনিফিটেড হবেন। সবাই একটা ভাইব্রেন্ট স্টক মার্কেট দেখতে পারবেন।
সরকার কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া আশা করে না ॥ আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া কেমন হবে জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, এই সিদ্ধান্তে সরকার আন্তর্জাতিকভাবে কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া আশা করে না।  তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক বিশ্বের কোথাও এমন একটি খুনি, গণতন্ত্রবিরোধী ও দুর্নীতিগ্রস্ত দলের পক্ষে কেউ কথা বলবে না।

তাই, আমরা আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তে আন্তর্জাতিকভাবে কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া আশা করি না। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা নিয়ে বিশ্ব শোক প্রকাশ করবে বলে আমি মনে করি না।
প্রসঙ্গত, শনিবার রাতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ ও এর নেতাদের বিচারকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেসসহ দলটির যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এ বিষয়ে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিপত্র পরবর্তী কর্মদিবসে প্রকাশ করা হবে।
আইন উপদেষ্টার কথার পুনরাবৃত্তি করে প্রেস সচিব বলেন, ‘পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলোতেও মানবতাবিরোধী অপরাধ বা জাতীয় স্বার্থবিরোধী কার্যকলাপের জন্য কেবল কোনো দলের কার্যক্রম নয়, পুরো রাজনৈতিক দলকেই নিষিদ্ধ করতে দেখেছি।’
উদাহরণস্বরূপ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি ও ইতালিতে নাৎসি ও ফ্যাসিস্ট দলগুলো নিষিদ্ধ করার কথা উল্লেখ করেন শফিকুল আলম। এ ছাড়াও স্পেন ও বেলজিয়ামে কিছু দল বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যক্রমের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রেস সচিব আরও বলেন, ‘জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনারের (ইউএনএইচসিএইচআর) প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগ, দলটির নেতাকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিল বলে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।’
তা ছাড়া এই দলটি বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ব্যাপকভাবে ধ্বংস করেছে, নেতাকর্মীরা বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।