Image description

কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল ২২ এপ্রিল। সে সময় সৌদি আরবে থাকা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সফর কাটছাঁট করে তড়িঘড়ি দেশে ফেরেন। ফিরেই বললেন, সন্ত্রাসীদের পৃথিবীর শেষপ্রান্তর পর্যন্ত তাড়া করে হলেও শাস্তি দেবেন। তার এ ঘোষণার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একের পর এক পদক্ষেপ নেয় দিল্লি। কিন্তু সে অর্থে সামরিক কোনো পদক্ষেপ ছিল না। ঘটনার ঠিক ১৫ দিন পর পাকিস্তানে অপারেশন চালায় ভারত। যার নাম অপারেশন সিঁদুর। এর সরকারি ব্রিফিং নিয়েও ভিন্ন বার্তা দিয়েছে সরকার। নারী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দুই সদস্যকে সামনে আনার মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িকতার বার্তা দিল তারা। এসব নিয়ে এখন সর্বত্র চলছে এক অন্যরকম আলোচনা।

কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার বদলায় ভারতের অভিযানের যে নাম দেওয়া হয়েছে, তা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিই বেছে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা।

‘অপারেশন সিঁদুর’ নামটি ব্যাপক অর্থে প্রতীকী। হিন্দু নারীরা বিয়ের চিহ্ন হিসেবে মাথায় সিঁদুর দেয়। ২২ এপ্রিল পেহেলগামে বৈসরনে সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ২৬ জনের প্রাণ গেছে।

হামলাকারীরা সেদিন পর্যটকদের এক জায়গায় জড়ো করে, ধর্ম-পরিচয় জিজ্ঞেস করার পর স্ত্রী-সন্তানদের সামনে তাদের গুলি করে হত্যা করেছে; সেদিনের ঘটনাকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যেই পাল্টা অভিযানের নাম রাখা হয় ‘সিঁদুর’। ভারতীয় সেনাবাহিনী অভিযানের যে ছবি পোস্ট করেছে, তাতে ইংরেজিতে ‘অপারেশন সিঁদুর’ লেখা হয়েছে বড় হাতের অক্ষরে। এর মধ্যে একটি ‘ও’-কে দেখানো হয়েছে সিঁদুরের কৌটা হিসেবে, যেখান থেকে খানিকটা সিঁদুর আরেকটা ‘ও’ এর ওপর ছড়িয়েও পড়েছে। এর মাধ্যমে ২৫ নারীর জীবনসঙ্গীকে কেড়ে নেওয়ার চিত্র প্রতীকীভাবে হাজির করা হয়েছে। ছবির সঙ্গে যে শিরোনাম, তাতে লেখা—‘জাস্টিস ইজ সার্ভড। জয় হিন্দ।’

হামলার পর গণমাধ্যমে আসা ছবিতে নিহত ভারতীয় নৌ-কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট ভিনয় নারওয়ালের মৃতদেহের পাশে তার সদ্য বিবাহিত হিমানশি নারওয়ালের ছবি ভারতজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে ছিল, ওই ছবিতে তখনো হিমানশির হাতে ছিল বিয়ের চুড়ি। ছবিটি ভারতীয়দের শোকের সাগরে ভাসিয়েছিল। সেদিনের হামলায় জীবনসঙ্গী হারানো প্রতিটি নারীর কান্না ভারতকে কাঁদিয়েছে, ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামকরণের ক্ষেত্রে এ চিত্রই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা হয়েছে।

মঙ্গলবার মধ্যরাতের পর পাকিস্তানে ও তাদের নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে হামলাকে সমর্থন জানিয়েছেন পেহেলগামে হামলায় নিহতদের পরিবারের সদস্যরা। এর মাধ্যমে দেশবাসীর সমর্থন আদায় করে নেয় মোদি সরকার।

যেমনটা বলেছেন পুনেতে কৌস্তভ গানবোটের স্ত্রী সঙ্গীতা গানবোটে। তিনি বলেন, অভিযানের নাম সিঁদুর রেখে সরকার আমাদের মতো স্বামীহারা নারীদের সম্মান দেখিয়েছে। আর প্রগতি জাগদালে বলেছেন, ওই সন্ত্রাসীরা যেভাবে সিঁদুর মুছে দিয়েছিল, তার উপযুক্ত জবাব এই অভিযান।

যখন পাকিস্তানে ভারতের হামলা নিয়ে বিশ্বজুড়ে হৈচৈ পড়ে গেল, ঠিক তখনই অর্থাৎ হামলার পরদিন বুধবার সকাল ১০টায় সরকারি ব্রিফিং করে তার সরকার। সেখানে অভিযানের বর্ণনা দেন দুই নারী সামরিক কর্মকর্তা। তারা দুই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। এদিন সংঘাতের খবর ছাপিয়ে আসে এই দুই নারী। তারা হলেন কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ও উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং। তাদের পরিচয় জানতে আগ্রহ দেখা যায় সর্বত্র, সৃষ্টি হয় কৌতূহলের। ওইদিন ইন্টারনেটে সবচেয়ে বেশি খোঁজা হয়েছে যে নারীকে, তিনিই হলেন কর্নেল সোফিয়া।

এর মাধ্যমে সরকার এক ঢিলে দুই পাখি মারে— একদিকে নারীদের সামনে এনে সম্মান দেখাল, অন্যদিকে সংখ্যালঘুদের প্রাধান্য দেওয়ার মাধ্যমে সম্প্রীতির বার্তা দিল সবাইকে।