Image description
জুলাই বিপ্লবে শহীদ ছাত্র-জনতা

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ৫ আগস্ট গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন শরীয়তপুরের বাসিন্দা বাসচালক মনোয়ার হোসেন চৌকিদার। ঘটনার ছয় মাস পর ছেলে লিমন ইসলাম বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেন। ফরিদপুর জেলার বাসিন্দা শরীফ মিঠু ১৯ জুলাই বনশ্রী জামে মসজিদে নামাজ পড়ে বের হয়ে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় হেলিকপ্টার থেকে গুলি তাঁর বুকের কাছ দিয়ে শরীর ভেদ করে পিঠ দিয়ে বের হয়ে যায়। মিঠুকে ফরিদপুরে দাফন করা হয়। গত বছরের ৯ অক্টোবর শেখ হাসিনাসহ ১৪৮ জনের নামোল্লেখ করে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলা করেন মিঠুর স্ত্রী রোহেদুন সেজবা ইভা। শুধু শরীয়তপুরের মনোয়ার ও ফরিদপুরের মিঠুই নন, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ এমন অনেকের ময়নাতদন্ত করতে লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে। এটি করা হচ্ছে মামলার অধিকতর তদন্ত করতে।

শরীয়তপুরের মনোয়ারের বড় ছেলে ইমন হোসেন জানান, শুনেছি ময়নাতদন্তের জন্য লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হবে। আমরা চাই না নতুন করে বাবার লাশ উত্তোলন করে কাটাছেঁড়া করা হোক। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জাকির হোসেন জানান, আমার কাছে এজাহার ছাড়া কোনো তথ্য নেই। সঠিক তদন্ত করতে লাশ কবর থেকে উঠিয়ে ময়নাতদন্তের জন্য আবেদন করেছি। আদালত মঞ্জুর করলে প্রক্রিয়া শুরু করব। মিঠুর স্ত্রী ইভা বলেন, স্বামীর লাশ কবর থেকে উঠিয়ে কাটাছেঁড়া করার বিষয়টি মেনে নেওয়া কষ্টকর। কিন্তু বিচার পেতে হলে অন্য কোনো উপায় ছিল না। তাই সবার অনুরোধে রাজি হই।

মামলার তদন্তের জন্য গত ২২ এপ্রিল বকশীগঞ্জের পানাতিয়া গ্রামে যান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসমা উল হুসনা। কিন্তু রিপনের ভাই (মামলার বাদী) কবর থেকে লাশ ওঠাতে বাধা দেন। তদন্ত কর্মকর্তা এসআই খাইরুল ইসলাম বলেন, জুলাই বিপ্লবে শহীদ রিপনের লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়। আদালতে আবেদন করা হলে ২৯ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট অনুমতি দেন। কিন্তু পরিবার লাশ উত্তোলনে বাধা দিয়েছে। আদালতের বিভিন্ন জিআর শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জুলাই বিপ্লবে শহীদ শত শত ছাত্র-জনতার লাশ উত্তোলনের আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে কিছু আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত। আরও কিছু শুনানির জন্য আছে। সবচেয়ে বেশি আবেদন জমা পড়েছে যাত্রাবাড়ী, সাভার, আশুলিয়া, উত্তরা দক্ষিণ, উত্তরা পশ্চিম ও বাড্ডা থানায়।

জানা গেছে, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের লাশ ওই সময় ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়। বর্তমানে নিহতের স্বজনরা মামলা করায় লাশ কবর থেকে উঠিয়ে ময়নাতন্তের জন্য আবেদন করছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।

ক্রিমিনাল মামলার আইনজীবী মো. রাগিব গালিব জানান, মার্ডার মামলায় ময়নাতদন্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মৃত্যুর কারণ, আঘাতের ধরনসহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ময়নাতদন্ত ছাড়া জানা সম্ভব নয়। এটা করা ছাড়া যেমন তদন্ত কর্মকর্তা সঠিকভাবে চার্জশিট দিতে পারেন না, তেমনি বিচার প্রক্রিয়াও ত্রুটিমুক্ত হয় না। রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ক্ষমতায় টিকে থাকতে শত শত ছাত্র-জনতাকে পুলিশ দিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে। ওই সময় এত লাশের ময়নাতদন্ত করার মতো পরিবেশ ছিল না। অনেক পরিবার ভয়ে আতঙ্কে থাকায় তারা তখন মামলা করেনি। ৫ আগস্টের পর মামলা করায় তদন্ত কর্মকর্তারা লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য আবেদন করছেন। তদন্তের স্বার্থে আদালত তা মঞ্জুর করছেন।