Image description
 

মাদারীপুরে কথিত শতবর্ষী বটগাছ কাটা নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড ঘটেছে। বাড়ি করার জন্য গাছটি বিক্রি করলে ক্রেতারা গাছটি কাটা শুরু করায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপজেলা প্রশাসন, বন বিভাগ, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাভিশ্বাস ওঠার অবস্থা। করা হয়েছে ৩ সদস্যের কমিটি।

 

যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বন বিভাগ ও জমি এবং গাছের মালিক।

 

 

জানা যায়, মাদারীপুরের সদর উপজেলার শিরখাড়া ইউনিয়নের আলম মীরের কান্দি গ্রামে হান্নান হাওলাদারের পতিত জমিতে একটি বটগাছ হয়। গাছটি বড় হলে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এখানে মাঝে মাঝে পূজা করত। ধীরে ধীরে বটগাছটির অলৌকিক ক্ষমতা আছে বলে প্রচার হয়ে যায়।

 

এই গাছে মোমবাতি জ্বালিয়ে এবং লাল কাপড় বাঁধলে মনের আশা পূরণ হয় বলেও প্রচার হয়। এরপর এখানে হিন্দুদের সঙ্গে সঙ্গে মুসলিম অনেকে মোমবাতি জ্বালাত এবং লাল কাপড় বেঁধে দিত গাছে। গাছটির মালিক হান্নান হাওলাদার বাড়ি করার উদ্দেশ্যে জমিটি পরিষ্কার করার জন্য এই গাছটি স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেন। সেই ব্যক্তি গাছটি কিনে স্থানীয় মাদ্রাসায় দান করে দেন যাতে এই গাছটি কেটে লাকড়ি করে মাদ্রাসার রান্না করতে পারে।

 

৫ এপ্রিল সকালে গাছটি কাটতে যান মাদ্রাসার হুজুর ও ছাত্ররা। তখনই কেউ একজন ভিডিও করে গাছটি শতবর্ষী এবং অলৌকিক ক্ষমতার কথা লিখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেয়। মুহূর্তে ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়। বিষয়টি জানতে পেরে গাছ কাটা বন্ধ করে দেয় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।

 

অন্যদিকে বন বিভাগ, উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। আলোচনা সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠে পুরো জেলা। গণমাধ্যমগুলেতে এ বিষয়ে সংবাদ প্রচার হতে থাকে। পরে বিষয়টি নিয়ে সদর উপজেলা প্রশাসন ৩ সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করে। ৭ এপ্রিল উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, বন বিভাগ ও গাছ ও জমির মালিক উপজেলার হলরুমে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে। ব্যাখ্যা করেন পুরো বিষয়।

 

সংবাদ সম্মেলনে মাদারীপুর জেলা বন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা ঘটনার তদন্ত করে দেখেছি। গাছটিও পর্যালোচনা করা হয়েছে। শতবর্ষী দাবি করা হলেও মূলত গাছটির বয়স ৩৫ থেকে ৪০ বছর। যেহেতু গাছটি ব্যক্তিমালিকানাধীন, তাই মালিক চাইলেই গাছটি বিক্রি বা নিজে কেটে ফেলতে পারেন। এতে আইনি কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না।

 

জমির মালিক হান্নান হাওলাদার বলেন, আমি ওই জমিতে বাড়ি করব। এই গাছটি জমির বেশিরভাগ জায়গা দখল করে আছে। তাই জমিটি ঘর করার উপযুক্ত করতে গাছটি বিক্রি করে দেই।

 

সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সদর সার্কেল চাতক চাকমা বলেন, উপজেলা প্রশাসন যে কমিটি করেছে তার রিপোর্ট আসার পর সেই রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব। অহেতুক মিথ্যা ভিডিও ছড়িয়ে কেউ যদি অরাজকতা সৃষ্টির দুরভিসন্ধি করে, তাহলে যে ভিডিও ছড়িয়েছে তাকেও খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।

 

মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াদিয়া শাবাব বলেন, বাড়ি করার জন্য বা যেকোনো প্রয়োজনে নিজের জমির গাছ জমির মালিক কাটতেই পারেন। এ বিষয়টিকে কেউ ভুলভাবে ব্যাখ্যা দিয়ে যদি ভিডিও করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় সেটাও অন্যায়। আমরা তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।