Image description

Jubayer Faisal (জুবায়ের ফয়সাল)


প্রথমেই বলে নেই, লেখাটা একটু বড় হবে। আমাকে অনেকেই গালি দিতে পারেন, বকা দিতে পারেন, কথা বলা বন্ধ করে দিতে পারেন, সংক্ষুব্ধ হলে আইনী ব্যবস্থাও নিতে পারেন.. কোন সমস্যা নাই, শুধু অনুরোধ পুরো লেখাটা না পড়ে আমাকে জাজ করবেন না। আজ এই দীর্ঘ লেখার প্রেক্ষাপট “কোন অজুহাতে দিগন্ত টেলিভিশন বন্ধ করা হয়েছিলো” তা নিয়ে বৈশাখী টেলিভিশনে প্রচারিত ১০ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের একটা প্রতিবেদন। যদিও প্রতিবেদনে অজুহাতটা আর দেখা যায়নি। আমি এই লেখায় দিগন্ত টিভি বন্ধের পূর্বাপর নিয়ে কিছু সত্যি তুলে ধরবো যা বৈশাখী টেলিভিশনের ঐ প্রতিবেদনে বেমালুম চেপে যাওয়া হয়েছে অথবা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। চলুন শুরুতেই আলোচিত প্রতিবেদনটি বিশ্লেষণ করি।
 
 গণমাধ্যমে গণমানুষের ঠাঁই নাই !
আমি বৈশাখীর এই অসম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি দেখে খুবই মর্মাহত হয়েছি। এই প্রতিবেদন যিনি তৈরি করেছেন তিনি আমার বড়ভাই Zunaid Ali Saqee যিনি নিজেও একসময় কাজ করেছেন দিগন্ত টিভিতে।
আলোচিত প্রতিবেদনটি ১০ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের। যেখানে শুরুর দিকে প্রতিবেদক বলছেন, “কোন অজুহাতে দিগন্ত টেলিভিশন বন্ধ করা হয়েছিলো, তা জানবো আজকের প্রতিবেদনে“ আবার ভয়েস ওভারের পরের প্যারায় তিনি বলছেন, “হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ তুলনামূলক ভালো কাভারেজ দেয় দিগন্ত টিভি ও ইসলামিক টিভি। তাই শাপলা চত্বরে হেফাজত গণহত্যার পাশাপাশি সুস্পষ্ট কোন কারণ ছাড়াই বন্ধ করে দেয়া হয় চ্যানেল দুটি”
একদিকে বলছেন কোন অজুহাত তা জানাবো অন্যদিকে বলছেন সুস্পষ্ট কোন কারণ ছাড়াই বন্ধ করে দেয়া হয়। দুইটা তো প্রচন্ড সাংঘর্ষিক। রিপোর্ট টা আসলে এখানেই ইন্তেকাল করেছে।
 
এরপর আমরা দেখলাম মুজিবুর রহমান মঞ্জু ভাইয়ের ইন্টারভিউ। উনি বললেন, ইসলামিক টিভি বন্ধের খবর পান রাত দুইটার দিকে, উনি তখনো বুঝতে পারেননি দিগন্ত বন্ধ করবে বা এদিকে আসবে। এইটা সর্বৈব মিথ্যা। কেন মিথ্যা সেইটা লেখার নীচের দিকে আমি ডিটেইল ব্যাখ্যা করবো। মঞ্জু ভাই দিগন্তের শাটার ভাঙচুরের কথা বলেছেন, এটাও ঠিক না। সেদিন পুলিশ দিগন্তে কোন অ্যাকশনে যায়নি। সবাই শান্ত ছিলো। যদিও মোল্লা নজরুল নিউজরুমে দাড়িয়ে একটা হুমকি দিয়েছিলো যে “আপনারা যদি সহযোগিতা না করেন, তাহলে আমাদেরকেও অসহযোগী হতে হবে” কোন ভাঙচুর কাউকে মারধর ছাড়াই ডিবির ২৫/৩০ জনের ঐ টিম বিনা বাধায় প্রবেশ করে দিগন্তের নিউজরুমে।
মঞ্জু ভাই ইন্টারভিউতে, সুমন ভাই এবং হাসান ভাইয়ের দিকে পুলিশ অস্ত্র তাক করেছিলো বলে দাবি করেছেন, এটাও ভুল। ডিবির কোন কর্মকর্তা কারো দিকে অস্ত্র তাক করেনি সে রাতে। তবে প্রায় সবার কাছেই আর্মস ছিলো।
এরপর প্রতিবেদনে ইন্টারভিউ করা হয়েছে দিগন্ত টেলিভিশনের সিএনই Ziaul Kabir Sumon ভাইয়ের। সুমন ভাই একদম টু দ্য পয়েন্টে ফ্যাক্ট তুলে ধরেছেন। উনার আকুতি আর সহকর্মীদের দুর্দশা নিয়ে বলা কথাগুলো আমাকে প্রচন্ড নাড়া দিয়েছে। কিন্তু এই লেখার পরের অংশে আমরা দেখবো সিএনই হিসেবে টেলিভিশন বন্ধের দায় তো উনিও এড়াতে পারেন না।
 
প্রতিবেদনে তিনজন নারীর ইন্টারভিউ করা হয়েছে। তাজকিয়া, ফারজানা আপু এবং রুবিনা আপার। আগের দুজন সিনিয়র কর্মকর্তাসহ পরের তিনজনের কেউই আসলে টেলিভিশন বন্ধের পেছনে টেলিভিশনের সহকর্মীদেরও যে কিছু দায় ছিলো সেইটা স্বযত্নে এড়িয়ে গেছেন। বাস্তবতার এপিটাফে উনারা শুধু আবেগটাকেই প্রাইয়োরিটি দিলেন।
দিগন্ত টিভির সাবেক রিপোর্টার এবং এখন একজন দর্শক হিসেবে আমি বৈশাখী টেলিভিশনের ঐ প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করছি। কেন করছি চলুন ব্যাখ্যা দেই….
 
লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশনঃ জীবন এক অন্য বাঁকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র প্রথম বর্ষ পার করছি, এমন সময়েই আমি মাকে হারাই। মা’র মৃত্যুর পর কয়েক মাসের মধ্যেই কিছু অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতিতে পড়ে যাই। বাড়ি থেকে টাকা পাঠানো বন্ধ করে দেন আব্বা। নিজের খরচ নিজে চালানোর নির্দেশ দেন। তো ঐ অবস্থায় অথৈ সাগরে পড়ার দশা আমার। তবে শাকিল ভাই এবং শিশির ভাই আমাকে সেই ধাক্কার প্রভাবটা এক প্রকার বুঝতেই দেননি। কিন্তু নিজে কিছু করার একটা তাগিদ অনুভব করতে থাকি। দুইটা টিউশনিও শুরু করি, আমার দুজন টিচারের ছেলে আর মেয়েকে পড়াতে যাই। সর্বসাকূল্যে তিনদিন পড়াতে পেরেছি। ধৈর্যে কুলায় না। এরপর এ ঘাট সে ঘাট পেরিয়ে একদিন উপস্থিত হই আল রাজী কমপ্লেক্সে, ইন্টারভিউ দিতে দিগন্ত টিভিতে। ইন্টারভিউতে টিকে যাই, পরে একটা ভাইভা হয় সেখানেও টিকে যাই। শুরু হলো আলো ঝলমলে টিভি পর্দায় আমার অপ্রত্যাশিত যাত্রার প্রথম ধাপ। আমার সঙ্গে আরো ১২জন রিপোর্টার জয়েন করেছিলেন সেদিন। তার মাসখানেক পর জয়েন করেছিলেন আরেকজন রিপোর্টার, মাহমুদ রাকিব। আজকের এই লেখায় তিনি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।
 
 হাউস পলিসিঃ ওঠানো আর নামানোর খেলা।
আমি শুরু থেকেই মোটামুটি ভালো স্ক্রিপ্ট লিখতে পারতাম। ভয়েসও মোটামুটি ভালো ছিলো (অন্যরা বলতো আর কি) সুতরাং সাংবাদিকতায় ভালো করার একটা তাড়না অনুভব করতাম। কিন্তু সেরকম প্লট পাচ্ছিলাম না। আমাকে রিপোর্টিংয়ের সুযোগ দেয়া হচ্ছিলো না খুব একটা। মাঝে মাঝে দেয়া হতো বাজার ফলো, আর নিত্যদিনের অ্যাসাইনমেন্ট ছিলো পিএম ফলো, কিন্তু ইনহাউজ। কারণ শেখ হাসিনার কোন প্রোগ্রাম সরাসরি কাভার করার অনুমতি দিগন্ত টিভির ছিলো না। এজন্য নিউজরুমে বসে বসে তার কথা শুনে রিপোর্ট বানাতে হতো। কয়েকমাস এভাবে চলার পর অনেকটা বিরক্ত হয়ে যাই। এরপর ২০১৩’র ফেব্রুয়ারিতে আমি বাংলা বানান ভুলের ছড়াছড়ি নিয়ে একটা রিপোর্ট করি। যেইটা খুবই প্রশংসিত হয় তখন। তো একদিন নিউজরুমে তখনকার হেড অব নিউজ মারুফ ভাই সবার সামনে আমাকে দেখিয়ে বললেন “নতুন যে কয়টা মুরগী আসছে তার মধ্যে এইটা বেশ সম্ভাবনাময়” এরপর কোন এক অজানা কারণে আমাকে আরো বেশি বন্দী করে ফেলা হয় নিউজরুমে। একদিন হলের বড়ভাই তখন একটা পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার Galib ভাইকে আল রাজী ভবনের নীচে শেয়ার করলাম সব। উনি সব শুনে বললেন তুমি তো থাকবা না মিডিয়ায়, বাদ দাও এসব নিয়ে টেনশন করো না। কিন্তু আমি উনাকে সেদিন জোর গলায় বলেছিলাম ভাই আমি মিডিয়া ছাড়বো না। তারপর প্রায় ১০/১১ বছর কাজ করেছি, পরে আর পারিনি। এভাবেই দিন পার হতে থাকলো। আমি একটা বিশাল আক্ষেপের পাহাড় নিয়ে পড়ে থাকলাম নিউজরুমে আর আমার পরে জয়েন করা কিন্তু ততোদিনে তৌহিদী জনতার পক্ষের রিপোর্টার হিসেবে পরিচিত হয়ে যাওয়া মাহমুদ রাকিব তখন বিশাল বিশাল সব অ্যাসাইনমেন্ট কাভার করার সুযোগ পাচ্ছেন। উনি আসলেই অনেক বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন ছিলেন, কারণ উনি দেশের গণমাধ্যমে এখনো বীরদর্পে কাজ করছেন আর আমি ড্রপ আউট !
 
 ৫ মে ২০১৩ঃ শাপলার সাদায় অস্ত লাল সূর্য
 
সেদিন ভোর থেকেই আমি আর নয়ন মুরাদ ভাই কাঁচপুর ব্রীজ থেকে ডিউটি শুরু করি। দুপুর ১২টা পর্যন্ত মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবেই চলছিলো হেফাজত নেতাকর্মীদের ঢাকায় প্রবেশ ও শাপলা চত্বরের সমাবেশ। কিন্তু পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করে দুপুর সাড়ে ১২টার পর থেকে। মূলত ছাত্রলীগ যুবলীগ কয়েকজায়গায় হেফাজত নেতাকর্মীদের উপর হামলা করায় সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
সেদিন ঢাকার সবচেয়ে সেনসিটিভ স্পট ছিলো লালবাগ মাদ্রাসা। যেখানে আল্লামা আহমদ শফিসহ হেফাজতের শীর্ষ নেতারা অবস্থান করছিলেন। তো সেখানে সেদিন অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হয়েছিলো মাত্র কয়েকমাসের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন টিভি রিপোর্টার মাহমুদ রাকিবকে। যিনি দুপুর দুইটার বুলেটিনে মাথায় ইট লেগে আহত হওয়া একটা বাচ্চাকে লাইভে এনে বলেছিলেন “পুলিশের গুলি লেগেছে ঐ বাচ্চার মাথায়” শুধু এইটা না, বরং পেশাগত শিষ্ঠাচার বহির্ভূত বহু শব্দ উচ্চারণ করা ঐ লাইভ নিয়ে তখন মারাত্মক অসম্তোষ তৈরি হয় সরকারে।
 
দুপুর সোয়া তিনটায় আমার ফোনে একটা কল আসে। তখনকার তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর এপিএস কালাম ভাইয়ের কল। আমি রিসিভ করতেই কালাম ভাই বললেন “ফয়সাল ভাই আপনারা কি শুরু করেছেন? মিথ্যা তথ্য কেন দিচ্ছেন? বাচ্চার মাথায় লাগলো ইট আপনারা বানায়ে দিলেন গুলি, এইটা হইলো ভাই? এরপর উনি রোমহর্ষক এক তথ্য দিলেন, বললেন “ভাই মিনিস্ট্রিতে কথাবার্তা হচ্ছে, আপনাদের টিভি বন্ধ করে দেবে” আপনারা সিনিয়রদের বলেন।
কালাম ভাই ফোন কাটার সঙ্গেই আমি নিউজরুমে ঢুকেই সিএনই সুমন ভাইয়ের রুমে গেলাম, পাশেই ক্রাইম চীফ Hasan Mahmud ভাই বসা। আমি সুমন ভাইকে বললাম ভাই টেলিভিশন কিন্তু সরকার বন্ধ করে দেবে, এরকম কানাঘুষা চলছে। আমাদের বোধহয় একটু পরিস্থিতি বোঝা দরকার। ভাই বললেন আচ্ছা তুমি যাও। আমি বের হয়ে আরো কয়েকজনকে বিষয়টা জানালাম নয়ন ভাই Baten ভাই, বাদশা ভাই আর প্রেজেন্টার এহসান ভাইকে। আমি ছোট মানুষ তো এজন্য সেদিন পাত্তা দেননি কেউ। এই ইনফরমেশন আরো অনেক জায়গা থেকে আরো রিপোর্টারদের কাছেও আসতে থাকে বিকেল চারটার পর থেকে।
সুতরাং “বৈশাখীর রিপোর্টে মঞ্জু ভাই যে দাবি করেছেন তিনি বুঝতেই পারেননি টিভি বন্ধ করে দেবে” এইটা ঠিক না। উনারা এসব ইনফরমেশন দুপুর থেকেই পাচ্ছিলেন।
কিন্তু বিকেল পাঁচটার পর শুরু হলো আরো নিয়ন্ত্রণহীন কাভারেজ। দিগন্ত টিভির অফিস ভবনের ছাদ থেকে শুরু হলো লাইভ টেলিকাস্ট। সামনের সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্মরণী তখন যুদ্ধক্ষেত্র। আমরা টেলিভিশনের লাইভে তখন দেখতেছি কিভাবে ধারাবিবরণী চলছে, তৌহিদী জনতা অত্যাচারীর মসনদ গুড়িয়ে চুড়ান্ত বিজয় আনার দ্বারপ্রান্তে চলে গেছে এমন সব বাক্য আমাদের কানে আসতে লাগলো। নিরপেক্ষতা তো দুরের কথা ন্যূনতম পেশাদারিত্বের ছিঁটেফোটাও ছিলো না সেসব সরাসরি সম্প্রচারের ধারাবিবরণীতে।
এরপর সন্ধ্যায় তথ্যসচিবের ফোন আসে আমাদের আরেক রিপোর্টারের ফোনে, তিনি একদম সরাসরি বলেন তোমাদের চ্যানেল বন্ধ করে দেবো। তখনও দিগন্ত কর্তৃপক্ষ সরকারকে ম্যানেজ করা কিংবা নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণ করার কোন চেষ্টা করেনি। আমি আজো বিশ্বাস করি তখনো তৎপর হলে বাঁচানো যেতো টেলিভিশনটাকে। সিএনই হিসেবে দুপুরে আভাস পাওয়ার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সরকারের চ্যানেল বন্ধ করা ঠেকানোর জন্য সুমন ভাই কি কি করেছিলেন সেইটা আজো জানার খুব ইচ্ছা আমার মতো অনেকের। সিএনইর কাছ থেকে আবেগাক্রান্ত বর্ণনা না, আমরা জানতে চাই চ্যানেল বাঁচাতে কোন উদ্যোগ কি আসলেই নেয়া হয়েছিলো নাকি রাজনীতির স্বার্থে জলাঞ্জলি দেয়া হয়েছিলো কয়েকশো কর্মীর সুন্দর ভবিষ্যৎ?
 
সত্য আর সুন্দরের একযোগে ইন্তেকাল…
গভীর রাতে সাময়িকের নামে মোল্লা নজরুল এসে চেপে ধরলেন সত্য আর সুন্দরের পক্ষে কথা বলা দিগন্তের গলা। বাংলাদেশের কোটি মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে ওঠা টেলিভিশনটা থেমে গেলো সেই রাতে। কিন্তু ঐ যে ইটকে গুলি বানানো মাহমুদ রাকিবের কিন্তু কিছুই হয়নি। আমরা প্রায় সবাই বেকার জীবন কাটাতে থাকলাম। দিগন্ত কর্তৃপক্ষ জুলাই পর্যন্ত বেতন দিলো কর্মীদের তারপর আর পারলো না। কিন্তু রাকিবকে তার তৌহিদী ভাইয়েরা ঠিকই চ্যানেল ২৪ এ নিয়ে গেলো। একটা বড় গ্রুপের চাকরি হলো নতুন আসা এসএ টিভিতে। আমি তখন পুরোপুরি বেকার। একদিন চ্যানেল ২৪ এ ইন্টারভিউ দিতে গেলাম, আমাকে সূচী ভাই বললেন ১০ হাজার টাকায় জয়েন করবা? আমি চুপ হয়ে গেলাম একদম। পরে আবার উনি বললেন না তোমার ঢাকায় কাজ করতে হবে না, তুমি যশোরে যাও, জেলা প্রতিনিধি হও। না জয়েন করিনি সেদিন। পরে এক মাস কাজ করলাম নতুনবার্তায়, নিজের গাটের পয়সা খরচ করে অ্যাসাইনমেন্ট কাভার করলাম, অনেকগুলো রিপোর্ট করলাম। সরদার ফরিদ ভাই আমাকে এক মাস কাজ করালো কোন টাকা দিলো না। এরপর একদিন নয়ন মুরাদ ভাই ডাকলেন মিরপুরে, গেলাম। কামাল মজুমদারের ছেলে জুয়েল ভাই ইন্টারভিউ নিলেন। আমাকে জয়েন করতে বললেন ক্রাইম বিটে। আবার শুরু হলো টেলিভিশন যাত্রা। ৪ মাস ১২ দিন কাজ করেছিলাম মোহনা টিভিতে। কিন্তু মজুমদার সাহেব আমাকে ১ মাস ১২ দিনের স্যালারি দেননি। তারপর একদিন আমাকে ঠাঁই দিলো সময় টেলিভিশন, আমার ভালোবাসার ঘর। যে ঘরেই আমার আমি হয়ে ওঠা। কি সৌভাগ্য দেখেন, আমি সময় টেলিভিশনে জয়েন করার কিছুদিন পরই সেই যে ইটকে গুলি বানানো মাহমুদ রাকিবও জয়েন করলেন এখানে। এরপর তার উত্থান ঘটলো চোখে পড়ার মতো। একই সঙ্গে তৌহিদী আর প্রগতিশীল প্লাটফর্মকে নিজের স্বার্থে এতো অপূর্ব কৌশলে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে আর কেউ কখনো ব্যবহার করতে পেরেছে কি না আমার ডাউট আছে। উনি আসলেই প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য।
 
 এতোকাল দিগন্ত বন্ধ হওয়া নিয়ে কেউ কোন রিপোর্ট তো দুরের কথা, মিডিয়াপাড়ায় আলাপ ই করার সাহস করেনি। এখন পরিবর্তন আসছে, রিপোর্ট হচ্ছে কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি সেই সময়ের মতোই আজো ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করার গাটস মিডিয়া দেখাতে পারলো না। দিগন্ত টিভি বন্ধের জন্য সরকার অজুহাত খুঁজছিলো, আর দিগন্ত নিজেই সরকারের হাতে সেই অজুহাত তুলে দিছিলো। শহীদ মীর কাশেম আলী স্যার তো কখনোই চাননি “অপেশাদারিত্বের কালিমা লাগুক দিগন্তের বুকে”