মধ্যরাতে প্রতিবেশী ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিশোধ হিসেবে দুটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। ভারতীয় হামলাগুলো পাকিস্তানের কোটলি, বাহাওয়ালপুর, মুরিদকে, বাগ এবং মুজাফফরাবাদ এলাকায় চালানো হয় বলে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়।
পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেন, ‘কাপুরুষোচিত’ ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কোটলি, বাহাওয়ালপুর, মুরিদকে, বাগ ও মুজাফফরাবাদে তিনজন পাকিস্তানি শহীদ হয়েছেন এবং আরও ১২ জন আহত হয়েছেন। তিনি জানান, এর উপযুক্ত প্রতিশোধ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম পিটিভি নিউজ নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্রের বরাতে জানায়, ‘পাকিস্তানি বাহিনী ভারতীয় আগ্রাসনের উপযুক্ত জবাব দিচ্ছে। প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাকিস্তানের বিমান বাহিনী দুটি শত্রু বিমান ভূপাতিত করেছে। সব পাকিস্তানি বিমান নিরাপদে রয়েছে। ’
পিটিভি আরও জানায়, পাকিস্তান একটি ভারতীয় ব্রিগেড সদর দপ্তর ধ্বংস করেছে প্রতিশোধমূলক হামলায়, যদিও কোথায় এই হামলা চালানো হয়েছে, তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার)-এ একটি পোস্টে পিটিভি জানায়, ভারতকে একাধিক স্থানে ‘উপযুক্ত জবাব’ দেওয়া হচ্ছে।
পিটিভি আরও জানায়, নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর দুধনিয়াল সেক্টরে একটি ভারতীয় চৌকি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ধ্বংস করা হয়েছে।
‘শত্রুর নগ্ন আগ্রাসনের জবাবে পাকিস্তানি বাহিনী পাল্টা হামলা চালাচ্ছে’, নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে পিটিভি।
এআরওয়াই নিউজকে মঙ্গলবার (০৬ মে) দিবাগত রাত ১টা ৬ মিনিটে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের আইএসপিআরের ডিজি বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে, কাপুরুষোচিতভাবে ভারত বাহাওয়ালপুরের আহমদ ইস্ট এলাকার সুভানুল্লাহ মসজিদ, কোটলি ও মুজাফফরাবাদে আকাশপথে হামলা চালিয়েছে। ’
তিনি আরও করেন, ‘আমাদের সমস্ত যুদ্ধবিমান আকাশে রয়েছে। এই কাপুরুষোচিত ও লজ্জাজনক হামলাগুলো ভারতের নিজস্ব আকাশসীমা থেকে চালানো হয়েছে। তারা কখনোই পাকিস্তানের আকাশে প্রবেশ করতে পারেনি। ’
তিনি বলেন, ‘আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, পাকিস্তান এর জবাব দেবে—নিজস্ব সময় ও স্থানে। এই জঘন্য উসকানির জবাব অবশ্যই দেওয়া হবে। ’ ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে, ডিজি আইএসপিআর জানান, মূল্যায়ন চলছে এবং পরে বিস্তারিত জানানো হবে।
তিনি বলেন, ‘ভারতের এই ক্ষণিকের আনন্দ, কাপুরুষোচিত হামলার ফলে, চিরস্থায়ী শোকে পরিণত হবে। ’
পরবর্তীতে জিও নিউজে দেওয়া বক্তব্যে প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির খসড়া প্রতিবেদন তুলে ধরে আইএসপিআরের ডিজি বলেন, ‘কোটলি, বাহাওয়ালপুরের আহমেদপুর ইস্ট, বাগ, মুজাফফরাবাদ এবং মুরিদকে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। আহমেদপুর ইস্ট-এ একটি শিশু শহিদ হয়েছে এবং ১২ জন আহত হয়েছেন। কোটলিতে দুই বেসামরিক ব্যক্তি শহীদ হয়েছেন। ’
রয়টার্স-এর একাধিক প্রতিবেদক জানিয়েছেন, মধ্যরাতে আজাদ কাশ্মীরের মুজাফফরাবাদ শহরের পাহাড়ি এলাকায় একাধিক বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এর পরপরই শহরের বিদ্যুৎ চলে যায়।
ভারত সরকার ‘অপারেশন সিন্ধুর’ নামে পাকিস্তান ও আজাদ কাশ্মীরে অবস্থিত ‘সন্ত্রাসী’ অবকাঠামোর ওপর হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তারা দাবি করেছে, ‘এই হামলা লক্ষ্যভিত্তিক, নিয়ন্ত্রিত এবং উত্তেজনা না বাড়ানোর মতো’। তাদের মতে, ‘কোনো পাকিস্তানি সামরিক স্থাপনায় আঘাত হানা হয়নি। ’
গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই ছিল পর্যটক। ভারত এ হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে, যা পাকিস্তান প্রত্যাখ্যান করে নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানায়।
সূত্র: ডন
