
অবহেলা আর অদক্ষতা যেন পিছু ছাড়ছে না দেশের শিক্ষা বোর্ডগুলোর। যাদের হাতে দেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থীর জীবন, তাদের কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই নির্ভুল প্রশ্ন তৈরি ও নকলমুক্ত পরীক্ষা গ্রহণে। যার বলি হচ্ছেন মেধাবী শিক্ষার্থীরা। চলমান মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষায় (এসএসসি) যশোর বোর্ডে ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নে ছয়টা ভুল ধরা পড়েছে। ঢাকা বোর্ডে পদার্থবিজ্ঞানের প্রশ্নে ভুল ধরা পড়েছে একটি। নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নে কোনোটির উত্তর নেই, আবার কোনোটির একাধিক উত্তর। এতে বিভ্রান্তিতে পড়ে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হয়েছে লাখো শিক্ষার্থীর। কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া নিয়েও ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকেরা উদ্বিগ্ন। অবশ্য বোর্ড দুটির কর্মকর্তারা বলেন, ভুল প্রশ্নে পরীক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। সবাই নম্বর পাবেন। শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, প্রতিটি প্রশ্ন তৈরি ও পরিমার্জনে জড়িত থাকেন চার জন অভিজ্ঞ শিক্ষক, যারা এ কাজের জন্য সম্মানি পান। যদিও এসব শিক্ষক নির্বাচন করা নিয়ে স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের অভিযোগ আছে। এবার রাজশাহী ও কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের প্রশ্ন অন্যান্য বোর্ডের তুলনায় কঠিন হয়েছে জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, এসএসসি পরীক্ষায় কোনো কোনো বোর্ডের প্রশ্ন সহজ হয়েছে, আবার কোনো কোনো বোর্ডের প্রশ্ন কঠিন হয়েছে, এটা একটা বৈষম্য। সব বোর্ডে একই প্রশ্ন চালু রাখার দাবি জানান তারা।
এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছে গত ১০ এপ্রিল, শেষ হবে আগামী ১৩ মে। গত ২৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পদার্থবিজ্ঞান পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ভুল ধরা পড়েছে। ভুলের দায় স্বীকার করে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রশ্নে ভুলের বিষয়টি আমরাও জেনেছি ইতিমধ্যে। এটা নিয়ে একটা সভা হবে দু-এক দিনে। তবে সিদ্ধান্ত যা-ই হোক, পরীক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। অনুসন্ধানে জানা যায়, বিধান অনুযায়ী এক বোর্ডের প্রশ্ন তৈরি ও মডারেশন করেন অন্য বোর্ডের শিক্ষকরা। সেই হিসেবে ঢাকা বোর্ডের প্রশ্ন করেন ঢাকার বাইরের বোর্ডের অধীনস্থরা। যে কারণে ঢাকা বোর্ডের প্রশ্নে ভুল বেশি থাকে। জানা গেছে, এবারের এসএসসি পরীক্ষায় পদার্থ বিজ্ঞান পরীক্ষার প্রশ্নের ৪ নম্বরের গ-এ ভুলটি চিহ্নিত হয়। গ নম্বরের এই প্রশ্নটি ছিল—‘লোহার দৈর্ঘ্য প্রসারণ সহগ নির্ণয় কর।’ এই প্রশ্নের উত্তর ঋণাত্মক মান পায়। তবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা বলছেন, এটির মান কখনোই ঋণাত্মক হবে না। তাই এই প্রশ্নে পরীক্ষার্থীদের সবাইকে অটো নম্বর দেওয়ার দাবি জানান তারা। তারা বলেন, মূলত উদ্দীপকের কারণে প্রশ্নের গ নম্বরে ভুলটি হয়েছে। এখানে উদ্দীপকের একটি অংশে বলা হয়েছে, ‘তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে 100∘C- এ নিলে বলটির আয়তন হয় 27cm3।’ এখানে 27cm3 সংখ্যাটি ভুল লেখা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এটি হওয়ার কথা ছিল 270cm3। জানা গেছে, এসএসসি পরীক্ষার অষ্টম দিন পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ের পরীক্ষায় মোট পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৭ জনের। এদিন অংশগ্রহণ করেছেন ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬৯২ পরীক্ষার্থী। মোট অনুপস্থিত ছিলেন ৩ হাজার ৯৫৫ জন। এদিন মোট বহিষ্কার হন আট জন পরীক্ষার্থী।
চলমান ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় যশোর শিক্ষা বোর্ডের ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নপত্রে ভুল ধরা পড়েছে। প্রশ্নপত্রের অসংগতি ও ভুলে ক্ষুব্ধ হয়েছেন পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রশ্নপত্রে এমন প্রশ্ন এসেছে, যার কোনো নির্দিষ্ট উত্তর নেই, আবার কোনো প্রশ্নে একাধিক উত্তর সঠিক। গত ১৫ ও ১৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষার পর ২৪ এপ্রিল পরীক্ষার্থী তাহমিনা খাতুন যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। তিনি ইংরেজি প্রশ্নপত্রে অসংখ্য ভুলের কথা উল্লেখ করেন। পরীক্ষার্থীরা দাবি করেন, ইংরেজি প্রথম পত্রের ১ নম্বরের A অংশের চারটি উত্তরই সঠিক ছিল। আবার f অংশে ‘outskirts’ শব্দের প্রশ্নে দুটি সঠিক উত্তর দেওয়া হয়। ৬ নম্বর প্রশ্নের টেবিলে (iv) জায়গায় ভুলভাবে ‘Defends’ লেখা হয়, যেখানে সঠিক উত্তর হওয়া উচিত ছিল ‘Defend’। দ্বিতীয় পত্রেও একই ধরনের সমস্যা ছিল। ১ নম্বর প্রশ্নে ‘Welfare’ ও ‘Flourish’ দুটো শব্দই সঠিক উত্তর হিসেবে দেওয়া হয়েছে এবং h অংশে ‘educations’ শব্দ ব্যবহূত হয়, যেখানে সঠিক হওয়া উচিত ছিল ‘education’। এছাড়া ২ নম্বরের d প্রশ্নে ‘in life’-এর পরিবর্তে ‘in them’ হওয়া উচিত ছিল এবং ৪ নম্বর প্রশ্নের ভাষা উচ্চতর স্তরের ছিল, যা এসএসসি স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য উপযোগী ছিল না বলে অভিযোগ ওঠে। শুধু ইংরেজি নয়, গণিত প্রশ্নপত্রেও ভুলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে এক জন বলেন, ‘ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয়পত্র দুটাতেই ভুল রয়েছে। এছাড়া গণিতের নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নেও অনেকগুলো ভুল আমরা খুঁজে পেয়েছি। প্রশ্নের উত্তর করতে গিয়ে অনেকটা বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। এর জন্য সময়টা অনেক বেশি লেগেছে। এজন্য অনেক পারা জিনিসও রেখে আসতে হয়েছে।’ সিলেবাসের বাইরের ও ভুল প্রশ্নের কথা জানান অভিভাবক ও শিক্ষকরাও। আর দক্ষ শিক্ষক দিয়ে প্রশ্নপত্র প্রণয়নের আহ্বান জানান শিক্ষাবিদরা।