
পরিবারের একমাত্র অবলম্বন ছিলেন শাহরিয়ার সোহান। গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুলিতে আহত হন তিনি। এর ৩৯ দিন পর ঢাকার সিএমএইচ হাসপাতালে শহীদ হন। সোহানের চলে যাওয়ার পর দিশাহারা হয়ে পড়েছে তার পরিবার।
জানা যায়, ভার্গো নামে একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতেন মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামের বাসিন্দা সোহান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে তিনি ঢাকার রামপুরা এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দেন। সেখানে ১৯ জুলাই গুলিতে আহত হন তিনি।
সোহানের মা সুফিয়া খাতুন বলেন, বুকে গুলি নিয়ে বহু প্রাইভেট হাসপাতাল ঘুরে আমরা কোনো চিকিৎসা পাইনি। গুলিবিদ্ধ কাউকে কোনো হাসপাতাল ভর্তি করেনি। পাগলের মতো আমরা বিভিন্ন জায়গায় ছুটে শেষ পর্যন্ত ঢাকা সিএমএইচে তাকে ভর্তি করি। অপারেশন দেরিতে করায় মেশিনের সাহায্যে দেহের কোনো স্থানে গুলি খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাই ডাক্তার শেষ পর্যন্ত তার পাঁজর কেটে ফেলেন। তবুও তার গুলি শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তার কোনো উন্নতি হচ্ছিল না বলে ৩৯ দিন পর ওই ডাক্তারই ফের অপারেশন করে দেহের মধ্য থেকে গুলি বের করেন। এরপর আমার সন্তান মারা যায়।
কাঁদতে কাঁদতে সুফিয়া খাতুন বলেন, আমরা কার কাছে বিচার চাইব? কে আমাদের সংসারের হাল ধরবে? সোহানের স্ত্রীর কী হবে?
স্বামী সোহানকে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ স্ত্রী শম্পা বেগম । তিনি বলেন, এ বয়সে কেন আমি বিধবা হলাম? যারা আমার স্বামীকে গুলি করেছে, সরকারের কাছে তাদের বিচার চাই। আমাদের পুরো পরিবারের আয়ের একমাত্র অবলম্বন ছিলেন সোহান। এখন আমাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ল।
সোহানের বাবা শাহ সেকান্দার বলেন, আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে, এখন আমরা কীভাবে বাঁচব? ছেলেকে হারিয়ে আমি দিশাহারা হয়ে পড়েছি। আমাদের পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস ছিল আমার সন্তান। আমার নিজের তেমন কোনো জমিজমা নেই। সোহানকে হারিয়ে তার মা ও স্ত্রী পাগলপ্রায়।
কোনো ধরনের সাহায্য পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে সোহানের বাবা বলেন, ছেলের মৃত্যুর পর জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে পাঁচ লাখ টাকা এবং জামায়াতে ইসলামী থেকে কিছু টাকা পেয়েছিলাম। এগুলো ছেলের বউ ও আমাদের অর্ধেক অর্ধেক করে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। এরপর আর কিছু পাইনি।