
খোসপাঁচড়া, যাকে চিকিৎসার পরিভাষায় ‘স্ক্যাবিস’ বলা হয়। এটি এক ধরনের সংক্রামক চর্মরোগ, সারকোপ্টেস স্ক্যাবিই নামক এক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পরজীবীর মাধ্যমে হয়ে থাকে। চোখে দেখা না গেলেও এই পরজীবী আমাদের ত্বকের নিচে গর্ত করে বাসা বাঁধে ও ডিম পাড়ে। ফলে তীব্র চুলকানি ও ত্বকে দানা বা ফুসকুড়ি দেখা দেয়।
খোসপাঁচড়া কেন হয়, এর লক্ষণ, চিকিৎসা ও অন্যান্য বিষয়ে চ্যানেল 24 অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন রাজধানীর উত্তরার শিন শিন জাপান হাসপাতালের চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সালমা আক্তার। এ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এবার তাহলে খোসপাঁচড়ার চিকিৎসা সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
স্ক্যাবিস কেন হয়: এটি একটি সংক্রমণযোগ্য রোগ, অর্থাৎ একজনের থেকে আরেকজনের শরীরে ছড়ায়। সাধারণত— ১. একই বিছানা, তোয়ালে বা জামাকাপড় ব্যবহার, ২. ঘনিষ্ঠ শারীরিক সংস্পর্শ (যেমন স্বামী-স্ত্রী, মা-সন্তান) ও ৩. শিশুদের মধ্যে স্কুল বা মাদরাসায় ঘন বসবাসের পরিবেশের মাধ্যমে সহজেই ছড়িয়ে পড়ে।
লক্ষণসমূহ: চুলকানি (রাতে বেশি হয়), হাতের আঙুলের ফাঁকে, কনুই, কুঁচকি, কোমর, বগল, স্তনের নিচে ছোট দানা বা ফুসকুড়ি এবং অনেক সময় চুলকানোর কারণে ঘা ও ইনফেকশন হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে মুখ, মাথা বা পায়ের তালুতেও হতে পারে।
চিকিৎসা: খোসপাঁচড়া সম্পূর্ণভাবে নিরাময়যোগ্য, তবে সঠিক নিয়মে ও পরিবারের সবাইকে একসঙ্গে এর চিকিৎসা করতে হবে।
চিকিৎসার ধাপ:
মলম বা লোশন: রাতে ঘুমানোর আগে গলা থেকে পায়ের আঙুল পর্যন্ত লাগিয়ে সকালে তা ধুয়ে ফেলতে হবে। সাতদিন পর আবার পুনরায় ব্যবহার করতে হবে।
খাওয়ার ওষুধ: আইভারমেকটিন (Ivermectin, শরীরের ওজন অনুযায়ী)।
চুলকানির জন্য: অ্যান্টিহিস্টামিন, Calamine lotion লাগালে আরাম পাওয়া যায়।
ঘা থাকলে: ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঠেকাতে অ্যান্টিবায়োটিক লাগতে পারেন।
সতর্কর্তা: পরিবারের সব সদস্যকে একসঙ্গে চিকিৎসা নিতে হবে। এমনকি যাদের কোনো উপসর্গ নেই, তাদেরও চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। ব্যবহৃত চাদর, বালিশ, জামাকাপড় গরম পানিতে ধুয়ে রোদে ভালো করে শুকিয়ে নিতে হবে। বিছানা, তোয়ালে ও জামাকাপড় আলাদা করে ব্যবহার করতে হবে। চিকিৎসার পরও চুলকানি ২–৩ সপ্তাহ থাকতে পারে। তবে ধৈর্য ধরে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।
পরামর্শ: খোসপাঁচড়া কোনো লজ্জার বিষয় নয়, এটি একটি সাধারণ সমস্যা এবং দ্রুত ছড়ায় এমন রোগ, যা সঠিক চিকিৎসায় সম্পূর্ণ ভালো হওয়া সম্ভব। একে অবহেলা করলে পরিবারের সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং ত্বকের স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে। এ জন্য কালক্ষেপণ না করে উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীসহ পরিবারের সবাইকে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।