Image description

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আইন অনুষদের একটি অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতির পাশে জুলাই গণহত্যায় সমর্থনকারী আইন বিভাগের আওয়ামীপন্থী শিক্ষক হাসান মুহাম্মদ রোমান শুভ’র উপস্থিতি নিয়ে ক্যাম্পাসজুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। 

রবিবার (৪ মে) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চবির আইন অনুষদ ও একে খান ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সপ্তম একে খান মেমোরিয়াল আইন বক্তৃতা-২০২৫ অনুষ্ঠানে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি উপস্থিত ছিলেন।  

৫ আগস্ট স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতনের পর সাবেক এই সহকারী প্রক্টরের অব্যাহতি চেয়ে কয়েক দফায় আন্দোলন করে আইন বিভাগসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। কিন্তু গণহত্যায় সমর্থনসহ নানাভাবে শিক্ষার্থীদের নির্যাতনকারী এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

অভিযুক্ত শিক্ষক রোমানের বিরুদ্ধে এর আগে বেশকিছু অভিযোগ তুলে তার অব্যাহতি চায় শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে ফ্যাসিস্ট সরকারের কর্মকাণ্ড ও ২৪ এর গণহত্যাকে সমর্থন দেওয়া, ছাত্রদের নিজের বাসায় ডেকে মাদকের আসর বসানো এবং নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছাত্রদের ব্যক্তিগত জীবন ও আইন বিভাগের বিভিন্ন শিক্ষকদের নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা। এমনকি অনেক ছাত্রকে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য ব্যবহার করা, ছাত্রলীগকে মদদ দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের হুমকি দেয়া, উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ট্যাগ দিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা এবং ক্লাসের মধ্যে ছাত্রদের টার্গেট করে হেয় প্রতিপন্ন করার অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়া প্রক্টর থাকাকালীন ক্ষমতার অপব্যবহার করে ক্যাম্পাসে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের মদদ দেওয়ার মাধ্যমে সাধারণ ছাত্রদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে হয়রানিসহ ছাত্রদের রেজাল্ট নিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। 

আজকের অনুষ্ঠানে তার উপস্থিতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং নানাভাবে সমালোচনা করছে শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, কোটা বিরোধী আন্দোলনের বিরোধিতাকারী আইন বিভাগের আঙিনায় শত শত শিক্ষার্থী নিপীড়নে সরাসরি অভিযুক্ত শিক্ষক হাসান রোমান প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছে। এতে আইন বিভাগের শিক্ষকসহ প্রশাসন তার ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের সাথে উদাসীন আচরণ করেই যাচ্ছে। 

ছাত্র অধিকার পরিষদ চবি শাখার সদস্য সচিব মো. রুমান রহমান ফেসবুকে লিখেছেন, এই শিক্ষকের সাথে কোথাও দেখা না হোক। ২০২২ সালে আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জোবায়েরকে শিবির ট্যাগ দিয়ে পুলিশের হাতে  তুলে দিয়েছিলো। জোবায়ের ছাত্র অধিকার পরিষদের মেসেঞ্জার গ্রুপে থাকায় ওই গ্রুপের সবাইকে মানসিক টর্চার করা হয়েছিল। শিবিরের সাথে কোনো সম্পৃক্ততা না থাকায় ছাত্র অধিকার পরিষদের কর্মীকে শাটলে নাশকতার ভুল অভিযোগ এনে বহিষ্কার করেছিলো এই শিক্ষক।

তিনি আরও লেখেন, এখন তাকে গুরুত্বপূর্ণ সভা/সেমিনারে দেখা যায়। সমাবর্তনে সাথে সাথে লীগ পুনর্বাসন ভালোই চলছে এই প্রশাসনের। আইন বিভাগের শিক্ষক ও সাবেক সহকারী প্রক্টর রোমানকে ছাত্র অধিকার পরিষদ ছেড়ে দেবে না।

এ বিষয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান বলেন, যে সকল শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী জুলাই হামলায় জড়িত ছিল তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ এবং চাকরিচ্যুতের জোর দাবি জানিয়ে আসছি। এই দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন সময় আমরা ক্যাম্পাসে কর্মসূচি পালন করেছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। উল্টো পদোন্নতিসহ বিভিন্নভাবে তাদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে। তেমনি আজকে আইন অনুষদের সেমিনারে এই ঘটনা ঘটেছে। 

গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আরেক নেতা রশিদ দিনার বলেন, আইন বিভাগের প্রোগ্রামে স্বৈরাচারের দোসর ও পৃষ্ঠপোষক সাবেক সহকারী প্রক্টর হাসান মোহাম্মদ রোমানের উপস্থিতি নিয়ে সর্ব মহলে প্রতিবাদ দেখা যাচ্ছে। সকলের অভিযোগ প্রশাসনের দিকে, কেন তারা পূর্ণ নিরাপত্তা দিয়ে প্রধান বিচারপতির সাথে স্টেজ শেয়ারের সুযোগ করে দিলে? এখানে আমার বক্তব্য একটু ভিন্ন, এই প্রশাসন স্বৈরাচারের দোসর কোন শিক্ষককেই এখনো চাকরি থেকে বরখাস্ত বা অব্যাহতি দেয়নি। এই প্রশাসন বিপ্লবের চেতনা ধারণ করে না। তাও আমি হাসান মোহাম্মদ রোমানের স্থায়ী বহিষ্কার চাই।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, আমি, উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য স্যার আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে গিয়েছি। ওখানে যাওয়ার পর ওই শিক্ষকের উপস্থিতির বিষয়টি বিভাগের সভাপতিকে জানিয়েছি। এছাড়া তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে তদন্ত কমিটি সেগুলোর কাজ করছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি দেখে আমিও হতভম্ব। এমন অভিযুক্ত একজন শিক্ষক কীভাবে এই প্রোগ্রামে থাকতে পারে? শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা তাকে বেশ কয়েকবার চিঠি পাঠিয়েছি। প্রতিবার তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে চিঠির উত্তর দিয়েছে। পরবর্তী আমরা তার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী এক সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছি। প্রতিবেদন পাওয়ার পর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রকীবা নবীর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

অভিযুক্ত শিক্ষক হাসান মুহাম্মদ রোমান শুভ’র সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও সম্ভব হয়নি।