
দীর্ঘদিন ধরে জনবলসংকটে ধুঁকছে নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা । চার ভাগের এক ভাগ কর্মচারী দিয়ে চলছে কার্যক্রম । জনবলের অভাবে পড়ে আছে দেশের বৃহত্তম এ রেলওয়ে কারখানার ১৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে আমদানি করা যন্ত্রপাতি । নষ্ট হচ্ছে সেগুলো । প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না থাকায় রয়েছে কাঁচামালেরও তীব্র সংকট । এসব কারণে কারখানাটিতে উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে ।
কারখানা সূত্র বলেছে , আসাম- বেঙ্গল রেলপথ ঘিরে ১৮৭০ সালে স্থাপিত হয় সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা । ১১০ দশমিক ২৯ একর জায়গায় প্রতিষ্ঠিত কারখানাটিতে রয়েছে ২৭ টি শপ ( উপকারখানা ) । এখানে ব্রডগেজ ও মিটারগেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ ও মালবাহী যানের ( ওয়াগন ) মেরামতের কাজ করা হয় । পাশাপাশি রেলের স্টিম রিলিফ ক্রেন ও দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্যারেজ এবং ওয়াগন মেরামতের কাজও হয় । এ ছাড়া ক্যারেজ , ওয়াগন ও লোকোমোটিভের ১ হাজার ২০০ রকমের খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরি হয় এ কারখানায় ।
সূত্র জানায় , ক্ষমতা ও গুণগতমান বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৭ সালে ১৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে কারখানাটি আধুনিকায়ন করা হয় । ওই আধুনিকায়ন প্রকল্পের আওতায় ব্রডগেজ ও মিটারগেজ যাত্রীবাহী বগি এবং ওয়াগন মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে ১৭ টি ওয়ার্কশপ মেরামত করা হয় । ৪৩ ধরনের মেকানিক্যাল ও ১৩ ধরনের ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপন করা হয় । এ ছাড়া ডিপ টিউবওয়েল স্থাপনসহ একটি ওভারহেড পানির ট্যাংক নির্মাণ করা হয় । কিন্তু দক্ষ জনবল না থাকায় আধুনিকায়নের কোনো সুফলই মিলছে না ।
সূত্রটি আরও বলেছে , বর্তমানে কারখানাটিতে কর্মকর্তা ও শ্রমিক- কর্মচারীর পদ ২ হাজার ৮৫৯ টি । এর মধ্যে আছেন ৭১৬ জন । অর্থাৎ ২ হাজার ১৪৩ টি পদই শূন্য । জনবলসংকটের কারণে কারখানায় প্রতিদিনের মেরামতের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হচ্ছে না । প্রতিদিন তিনটি কোচ মেরামতের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও হচ্ছে দুটি করে কোচ । ২৭ টি শপে ৭৪০ টি মেশিন পরিচালনায় নেই প্রয়োজনীয় দক্ষ শ্রমিক । এদিকে কারখানায় নেই পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দও । এতে চাহিদা ও সময়মতো কাঁচামালের সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না ।
কারখানা কর্তৃপক্ষ বলছে , বেশির ভাগ সময়ই মালপত্র কেনার দরপত্রে জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতা হয় । ফলে কোচ ও ওয়াগন মেরামতের প্রয়োজনীয় কাঁচামালের জোগান সময়মতো আসে না । অনেক সময় নিম্নমানের মালামালও চলে আসে । সেগুলো ঠিক করতে গিয়ে অতিরিক্ত জনবল , কর্মঘণ্টা ও বিদ্যুতের অপচয় হয় । অথচ কারখানাটি রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের হলেও সারা দেশের রেলওয়ের চাহিদা পূরণ করে । ক্যারেজ শপের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী মমিনুল ইসলাম বলেন , ক্যারেজ শপে ৩৯৫ টি পদের বিপরীতে কাজ করছেন মাত্র ৮৫ জন । জনবলসংকটে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদনসহ সার্বিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে । এতে মেইনটেন্যান্সে শিডিউল বিপর্যয় দেখা দিয়েছে । বিশেষ ট্রেনের রেক মেরামত ও বিদেশ থেকে আনা নতুন ট্রেনের অ্যাসেম্বলিংয়ে বিঘ্ন ঘটছে ।
রেলওয়ে শ্রমিক ইউনিয়নের কারখানা শাখার সম্পাদক শেখ রোবায়তুর রহমান বলেন , রেলওয়ের নিয়ম অনুযায়ী একটি ক্যারেজে চার বছর অন্তর সাময়িক সংস্কার ( পিওএইচ ) এবং ১২ বছর অন্তর সাধারণ সংস্কার ( জিওএইচ ) করার কথা । কিন্তু জনবলসংকট ও কাঁচামালের অভাবে বহু ক্যারেজ এখন মেরামত ছাড়াই বছরের পর বছর পড়ে আছে । তিনি আরও বলেন , জনবলসংকট দূর করতে শূন্য পদগুলোয় দ্রুত নিয়োগ দিতে হবে । সময়মতো কাঁচামালের সরবরাহ করতে হবে । তবেই এই কারখানার উৎপাদন আগের অবস্থায় ফেরানো সম্ভব ।
জানতে রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক ( ডিএস ) শাহ সুফী নুর মোহাম্মদ বলেন , সর্বশেষ ২০২৩ সালে ২৮৯ জনকে খালাসি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে । এরপরও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পদ শূন্য রয়েছে । বর্তমানে নির্ধারিত কর্মঘণ্টার বাইরে শ্রমিকেরা অতিরিক্ত সময় কাজ করে উৎপাদন অব্যাহত রেখেছেন । জনবলসংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে । শূন্যপদগুলো পূরণ হলে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ পেলে আবার এ কারখানা কর্মমুখর হবে ।