বাংলাদেশ থেকে সর্বশেষ জাহাজ রপ্তানি হয়েছিল ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে। প্রায় দুই বছর পর আবার জাহাজ রপ্তানি শুরু হচ্ছে। চট্টগ্রামভিত্তিক জাহাজ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ‘রায়ান’ নামের একটি জাহাজ রপ্তানি করবে।
ল্যান্ডিং ক্রাফট ধরনের এই জাহাজের মাধ্যমে ভুলতে বসা জাহাজ রপ্তানির কথা সামনে আনল ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড। প্রতিষ্ঠানটি একই ক্রেতার কাছে পর্যায়ক্রমে আরও সাতটি জাহাজ রপ্তানি করবে বলে জানিয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি সর্বশেষ জাহাজ রপ্তানি করেছে ২০২০ সালের ২৯ জানুয়ারি। এদিন ১ কোটি ১০ লাখ ডলার মূল্যের দুটি জাহাজ ভারতে রপ্তানি করেছিল তারা। এ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি পাঁচ বছর পর রপ্তানিতে ফিরল। অবশ্য এ সময় শিপইয়ার্ডটি দেশীয় বিভিন্ন সংস্থার জন্য জাহাজ তৈরি করেছে।
ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন সোহেল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, জাহাজ রপ্তানিতে যে খরা ছিল, তা দীর্ঘদিন পর কাটতে যাচ্ছে। বৈশ্বিক মন্দা কাটিয়ে জাহাজ নির্মাণের খাতে এখন আবার প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। এতে করে নতুন কার্যাদেশ আসার সম্ভাবনা বেড়েছে।
বাংলাদেশ থেকে প্রথম জাহাজ রপ্তানি করে ঢাকার আনন্দ শিপইয়ার্ড অ্যান্ড স্লিপওয়েজ। ২০০৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ডেনমার্কে জাহাজ রপ্তানির মাধ্যমে এই অভিযাত্রা শুরু হয়। এরপর ২০১০ সালে জাহাজ রপ্তানিতে যুক্ত হয় চট্টগ্রামের ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের নাম। ওই বছরের ৩০ নভেম্বর প্রতিষ্ঠানটি জার্মানিতে একটি সমুদ্রগামী জাহাজ রপ্তানি করে। বাংলাদেশ থেকে জাহাজ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এ দুটিই।
তবে দেড় যুগ আগে জাহাজ রপ্তানিতে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা সম্ভাবনা দেখালেও তা ছিল ক্ষণস্থায়ী। কারণ, ২০১১ সাল থেকে বৈশ্বিক জাহাজ নির্মাণশিল্পের মন্দার মূল প্রভাব পড়তে শুরু করে বাংলাদেশে। অনেকগুলো রপ্তানি আদেশ বাতিল করেন বিদেশি ক্রেতারা। করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আবার ধাক্কা আসে এই খাতে। এই দুই মিলে উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হন। জাহাজ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান দুটির ঋণও অনিয়মিত হয়ে পড়ে। তবে সরকারের বিশেষ নীতিসহায়তা কাজে লাগিয়ে এখন আবার উঠে দাঁড়াচ্ছে তারা।
মন্দার সময় আনন্দ শিপইয়ার্ডের ১০টি জাহাজের নির্মাণকাজের আদেশ বাতিল হয়েছিল। এমন সময় বাতিল হয়, যখন পাঁচটি জাহাজের নির্মাণকাজ এগিয়ে গিয়েছিল। দুই বছর আগে দুটি জাহাজ তারা অন্য ক্রেতার কাছে রপ্তানি করে। এখন নির্মাণাধীন বাকি তিনটি জাহাজের জন্য ক্রেতা খুঁজে পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অর্থায়ন পাওয়া গেলে এই তিন জাহাজের নির্মাণকাজ শেষ করে রপ্তানি করতে চায় তারা।
জানতে চাইলে আনন্দ শিপইয়ার্ড অ্যান্ড স্লিপওয়েজের নির্বাহী পরিচালক তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘দুই সপ্তাহ আগে তুরস্কের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা আমাদের ইয়ার্ড পরিদর্শন করেছেন। সবকিছু ঠিক হলে এই তিন জাহাজের বাকি নির্মাণকাজ শেষ করে রপ্তানি করা সম্ভব হবে।’
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও উদ্যোক্তাদের সূত্রে জানা গেছে, ২০০৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট জাহাজ ও জলযান রপ্তানি হয়েছে ৪৫টি। এর মধ্যে সমুদ্রগামী জাহাজের সংখ্যা ১৯। বাকিগুলো ফেরি ও বিভিন্ন ধরনের সমুদ্রগামী জলযান। এসব জাহাজ ও জলযান রপ্তানির মাধ্যমে আয় হয়েছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার সমমানের বৈদেশিক মুদ্রা।