Image description

ষাটোর্ধ্ব জামায়াত নেতা মাওলানা শাখাওয়াত হোসেন শাহাদাত গত বছরের ৫ আগস্ট লাখো ছাত্র-জনতার সঙ্গে অন্দোলনে যুক্ত হয়ে হেঁটে যান গাজীপুরের টঙ্গী থেকে রাজধানীর মহাখালী। এরই মধ্যে শুনতে পান স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পালিয়েছে। কল করে পরিবার ও নেতাকর্মীদের কাছে বিজয়ের বার্তা দিয়ে শুকরিয়ার নামাজ আদায় করতে বলেন। বিজয় উদযাপন করতে করতে ফিরছিলেন বাড়ি। পথিমধ্যে উত্তরায় এসে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন মাওলানা শাহাদাত।

এসব তথ্য আমার দেশকে জানিয়েছেন শহীদের সহযোদ্ধা জামায়াতকর্মী মোহাম্মদ হুমায়ুন ও শহীদের সন্তান মাওলানা আবু নাসের হামজা।

জানা যায়, জামায়াতের গাজীপুর সিটির ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের আমির ছিলেন মাওলানা শাহাদাত। সেদিনের বিষয়ে মাওলানা শাহাদাতের সহযোদ্ধা মোহাম্মদ হুমায়ুন বলেন, আমরা হেঁটে আন্দোলন নিয়ে কথা বলতে বলতে এগিয়ে যাচ্ছিলাম ঢাকা অভিমুখে। পথে লাখো জনতার উপস্থিতি আমাদের মনে আরো সাহস জোগায়। প্রথমে উত্তরা গিয়ে দেখতে পাই ঢাকামুখী লাখ লাখ মানুষ। মনে হচ্ছিল বাসায় যেন কোনো মানুষই নেই। সব মানুষ হাসিনার পতন আন্দোলনে নেমেছে। সঙ্গে থাকা অন্য সহযোদ্ধাদের তুলনায় আমরা একটু বয়স্ক হওয়ায় পেছনে পড়ে যাই। সবাই সামনের দিকে এগোতে থাকে। আমরাও ধীরে ধীরে এগোচ্ছিলাম। পথিমধ্যে আমরা দুজন একসঙ্গে জোহরের নামাজ আদায় করি। নামাজ শেষে আবারও আন্দোলনে যুক্ত হই। আন্দোলনরত অবস্থায় অজু ধরে রাখার চেষ্টা ছিল আমাদের। তখনও জানতাম না সামনে কী অপেক্ষা করছে।

মাওলানা শাহাদাতরা যখন জানতে পারেন ফ্যাসিবাদী শক্তির পতন হয়েছে এবং হাসিনা পালিয়েছেন, তখনই ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ রূপ নিয়েছে বিজয় মিছিলে। বিজয় মিছিলের সঙ্গে গণভবনের দিকে যাওয়ার আগ্রহ থাকলেও তখন ফেরার সিদ্ধান্ত নেন তারা। ভাড়া নেন একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। নানা আলাপচারিতার মধ্যে তারা উত্তরায় এসে পৌঁছান। এসে দেখেন বিজয় উদযাপন করা মানুষের ওপর গুলিবর্ষণ চলছে। উত্তরার সড়ক তখনও রণক্ষেত্র। এক পাশ দিয়ে আসার চেষ্টা করতেই হেলমেট ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিহিত এক লোক পুলিশের মাঝ থেকে বেরিয়ে এসে রিকশাচালককে কলার ধরে মারপিট করে রিকশা ঘোরাতে বলে। রিকশা ঘুরিয়ে সামনে গিয়ে নামার চেষ্টা করছিলেন তারা। ঠিক তখনই পেছন থেকে ছোড়া গুলি এসে লাগে মাওলানা শাহাদাতের মাথায়। গুলিবিদ্ধ হয়ে দুই কদম ফেলতেই আবারও গুলি এসে লাগে পিঠে। এতে ঘটনাস্থলেই পড়ে যান তিনি।

সহযোদ্ধা হুমায়ুন বলেন, মাওলানা শাহাদাতকে দ্রুত জাহানারা মেডিকেলে নিয়ে যাই। কিন্তু চিকিৎসা পাচ্ছিলাম না সেখানে। এরপর আমার দিকে তাকানো অবস্থায়ই শাহাদাতবরণ করেন তিনি।

শহীদের একমাত্র ছেলে মাওলানা আবু নাসের হামজা বলেন, ‘আব্বু বাসায় কল করে বলেছিলেন বিজয় নিশ্চিত হয়েছে। সবাইকে নিয়ে শুকরিয়ার নামাজ আদায় করো। সবাই তখন আনন্দিত। অপেক্ষা করছিল আব্বুর ফেরার। এদিকে আর আমি তো উত্তরায়। হঠাৎ আম্মু আমাকে কল করে জানান আব্বু গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। কিন্তু আমি খুব কাছে থেকেও কোনোভাবেই জাহানারা মেডিকেলে যেতে পারছিলাম না। ওদিকটায় যাওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। কয়েক মিনিট পরই আবার আমাকে কল করে বলা হয় বাসায় চলে আসার জন্য। তখনই আমার জানা হয়ে যায় আল্লাহ হয়তো আমার বাবাকে শহীদি মিছিলে যুক্ত করেছেন।

 

আবু নাসের আরো বলেন, শহীদ বাবার হত্যাকাণ্ডের বিচার যেমন চাই, তেমনি ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য একটি নিরাপদ রাষ্ট্রব্যবস্থা চাই। শহীদ বাবার স্বপ্নের সেই দেশ চাই, যেখানে ইসলামি হুকুমত কায়েম হবে।