Image description
♦ বেপরোয়া চালকরা উঠে যাচ্ছেন ফ্লাইওভারে ♦ বাড়ছে দুর্ঘটনা

দিন নয়, রাত নয়- সর্বত্র সবসময় রাজধানীর সড়ক-মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তিন চাকার ব্যাটারিচালিত রিকশা। বেপরোয়া চালকরা এ ভঙ্গুর বাহনটি নিয়ে উঠে যাচ্ছে ফ্লাইওভারে। এমনকি উল্টো পথেও রয়েছে তাদের দৌরাত্ম্য। তারা মানছে না সড়কে চলার নিয়মনীতি শৃঙ্খলা বা সিগন্যালও। এতে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। পরিস্থিতি এত ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, দ্রুত গতির এই বাহন বাড়াচ্ছে দুর্ঘটনা, বাড়াচ্ছে হতাহতের সংখ্যা, সৃষ্টি করছে যানজট। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিরাপদ সড়কের জন্য এসব ব্যাটারিচালিত রিকশা হুমকি হয়ে উঠেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো হুটহাট করে সড়কের মাঝপথে চলে আসে। সড়কে অন্যান্য যানের সঙ্গে বেপরোয়াভাবে প্রতিযোগিতা করে। আকারে ছোট হলেও চলে রকেটের গতিতে। মহাসড়কে দূরপাল্লার গাড়ির সঙ্গেও পাল্লা দিতে দেখা যায়। ধুমধাম করে সাইড পরিবর্তন। আবার দ্রুত গতির মাঝেই হঠাৎ ব্রেক করে। নাই কোনো সাইডলাইট, ব্রেকলাইট। জানে না বা মানে না রাস্তায় যান চালানোর কোনো নিয়ম-নীতি। ফলে মহাসড়কের সব গাড়ির চালকদের থাকতে দেখা যায় আতঙ্কে। এ ছাড়া এসব ব্যাটারিচালিত যানগুলো তৈরির ক্ষেত্রে মানা হয়নি কোনো নিয়মনীতি। এগুলোকে কখনো ট্রাফিক পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে বা অনেক সময় ম্যানেজ করে চলে সড়কে। এ ছাড়া ব্যাটারিচালিত যানবাহনের ব্যাটারি রিচার্জ করতে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হয়। বাড়তি বিদ্যুৎ ব্যবহারের কারণে দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে লোডশেডিং বাড়ছে। এ বিষয়ে ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, রাজধানীর সড়কে শৃঙ্খলা ফিরতে ও যানজট নিরসনে ঢাকার মূল সড়কে কোনো ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে দেওয়া হবে না সেই সঙ্গে অভ্যন্তরের সড়কে চলবে স্ট্যান্ডার্ড মডেলের অনুমোদিত ব্যাটারিচালিত রিকশার (ই-রিকশা)।

৩২ শতাংশ দুর্ঘটনার শিকার : রোড সেফটি ফাউন্ডেশন চলতি বছরের ৩০ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত রাজধানীর দুটি এবং ঢাকার বাইরে আট বিভাগীয় শহরের বিশেষায়িত আটটি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করে জানায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে ৩২ দশমিক ২৭ শতাংশ, ব্যাটারি অটোরিকশায় ৩২ দশমিক ১০ শতাংশ, চার চাকার যানে ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। তবে হাসপাতালে আসা ২৫ দশমিক ৫০ শতাংশ আহত রোগীর দুর্ঘটনার কারণ নিবন্ধন খাতায় উল্লেখ করা হয়নি। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, এখন মূল সড়কগুলোতে অধিকাংশ সময়ে ব্যাটারিচালিত রিকশা ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটতে দেখা যায়। এতে সড়কে সৃষ্টি হচ্ছে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা। এসব বাহন নিয়ন্ত্রণে না আনলে দুর্ঘটনার হার আরও বাড়বে। আর এসব রিকশা নিরাপদ সড়কের জন্য হুমকিও। গতকাল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন আয়োজিত ব্যাটারিচালিত রিকশার (ই-রিকশা) স্ট্যান্ডার্ড মডেল ও প্রোটোটাইপ নির্মাণের বিষয়ে হালনাগাদ অগ্রগতি এবং ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণ শীর্ষক সভা হয়। সভায় ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, রাজধানীর সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ও যানজট নিরসনে ঢাকা মূলসড়কে কোনো ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে দেওয়া হবে না সেই সঙ্গে অভ্যন্তরের সড়কে চলবে স্ট্যান্ডার্ড মডেলের অনুমোদিত ব্যাটারিচালিত রিকশার (ই-রিকশা)। তিনি আরও বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশার (ই-রিকশা) স্ট্যান্ডার্ড মডেল ও নীতিমালা প্রস্তুতের জন্য অল্পসময়ের মধ্যে একটি উচ্চ পর্যারের কমিটি গঠন করা হবে। সভায় বুয়েটের বিইপিআরসি ইজিবাইক প্রজেক্ট নতুন স্ট্যান্ডার্ডাইজ মডেলের তিন চাকার স্বল্প গতিতে ই-রিকশার টাইপ-অনুমোদন ও রেজিস্ট্রেশন প্রস্তাবনা প্রণয়ন করেন। এ প্রস্তাবনা অনুযায়ী প্রোটোটাইপ প্রস্তুত করতে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আহ্বান জানান।