
সারা দেশে চলছে টপসয়েল (মাটির ওপরের অংশ) কাটার মহোৎসব। এতে জমি হারাচ্ছে উর্বরতা, কমছে ফসল উৎপাদন, আশঙ্কা করা হচ্ছে খাদ্য ঘাটতির। বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ। ফসলি জমির মাটি কেটে ট্রলি-ট্রাকে করে নেওয়া হচ্ছে ইটভাটায়। ভরাট করা হচ্ছে পুকুর ও নিচু জায়গা। কৃষিবিদদের মতে টপসয়েল কেটে নেওয়া জমির উর্বরতা ফিরতে সময় লাগে কমপক্ষে ১০-১২ বছর। কোনোটার উর্বরতা আগের মতো ফেরেও না। এ ছাড়া টপসয়েল বিক্রি বা কাটা আইনত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ ব্যাপারে সচেতনতা ও জনপ্রতিরোধ গড়ে তোলা দরকার বলে মনে করছে সচেতন মহল। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) : ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে অবাধে কাটা হচ্ছে তিন ফসলি ও সরকারি জমির টপসয়েল। ট্রলি, ট্রাক ও ডামপারে করে নেওয়া হচ্ছে ইটভাটায়। এ মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে নিচু জায়গা ও পুকুর। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়নের মুজাহিদনগর পূর্বদি, আবদুল্লাহপুরের করেরগাঁও, পশ্চিম আড়াকুল ও কোন্ডা ইউনিয়নের মঠবাড়ী এলাকায় মাটি কাটার এ চিত্র দেখা গেছে। মাটিবোঝাই গাড়ি চলাচলের কারণে গ্রামীণ সড়কও ধ্বংস হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, অর্ধশতাধিক সন্ত্রাসীর পাহারায় শ্রমিকরা ভেকু দিয়ে মাটি কাটে। ৪ শতাধিক ট্রাক দিয়ে মাটি চুরি করা হচ্ছে। মুজাহিদনগর পূর্বদি এলাকায় ফসলি জমি কেটে পুকুর করা হয়েছে। পশ্চিম আড়াকুলের ২০ ফুট রাস্তার মাথায় এক মাস ধরে চলছে মাটি উত্তোলন। কোন্ডা ইউনিয়নের মঠবাড়ীতেও সরকারি জমির মাটি কাটা হচ্ছে। কেরানীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহুয়া শারমিন মুনমুন বলেন, ‘ফসলি জমির উপরিভাগ কাটার ফলে জমিতে আর ফসল হয় না। উর্বরতা ফিরতে ১০-১২ বছর লাগে। ফসলি জমি রক্ষায় জনপ্রতিরোধ গড়ে তোলা দরকার।’ কেরানীগঞ্জ রাজস্ব সার্কেল (দক্ষিণ) সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শেখ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘তিন ফসলি বা যে কোনো আবাদি জমির উপরিভাগ বিক্রি বা কাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সম্প্রতি দুজনকে আটক করে কারাদ দেওয়া হয়। চারটি ট্রাক জব্দ করা হয়।’
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) : উপজেলার কর্ণগোপ, মাসাবো, মাছিমপুর, ভোলাবো, তারাইল, পাইস্কা, চারিতালুক, আতলাপুর, পুবেরগাঁও, বলাইখা, বেলদি, দেবই, খৈসাইর, কলিঙ্গা, পুটিনা, বাগলা, কামালকাঠী, ডহরগাঁও, হোরগাঁও, গোলাকান্দাইল, সাওঘাটসহ বিভিন্ন এলাকার শত শত বিঘা ফসলি জমির টপসয়েল যাচ্ছে ইটভাটায়। এ মাটি নিচু জায়গা ও পুকুর ভরাটেও ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ। মাটি ব্যবসার কাঁচা টাকা ঘিরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে মাটিসন্ত্রাসী ও সিন্ডিকেট। উপরিভাগের মাটি কেটে নেওয়ায় ফসলি জমি উর্বরতা হারাচ্ছে। দু-তিন বছর ওই জমিতে তেমন ফসল হয় না। কোনো কোনো জমি ১৫-২০ ফুট গভীর করে মাটি কাটা হচ্ছে। এতে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি। ভেঙে পড়ছে পাশের জমিও। মাটি সরবরাহে ব্যবহৃত ভটভটির দাপটে সড়কে সৃষ্টি হচ্ছে খানাখন্দ। ঘটছে দুর্ঘটনা। ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতেও রূপগঞ্জবাসী। রূপগঞ্জ উপজেলায় ১১৪টি ইটভাটা রয়েছে। তারাবো ও কাঞ্চন পৌরসভা, গোলাকান্দাইল, ভোলাবো ও দাউদপুর ইউনিয়নে রয়েছে এসব ইটের ভাটা। ইট তৈরির প্রধান কাঁচামাল মাটি। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩-এর ৫ নম্বর ধারায় বলা আছে, কৃষিজমি, পাহাড় ও টিলার মাটি কেটে ইট তৈরি করা যাবে না। অনুমোদন দেওয়ার সময় কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি ব্যবহার না করার নির্দেশ দেওয়া হয় ভাটামালিকদের। কিন্তু এ আইনের তোয়াক্কা করছেন না কেউ।
নারায়ণগঞ্জ : জেলার বন্দরের বিভিন্ন এলাকায় কৃষিজমির ওপরের উর্বর অংশ কেটে নেওয়া হচ্ছে। সরবরাহ করা হচ্ছে ইটভাটায়। অনেক সময় কৃষক নগদ টাকার লোভে মাটি বিক্রি করছেন। কৃষি অফিস বলছে, প্রতি বছরই বিভিন্ন কারণে কৃষিজমি কমছে। স্থানীয়রা জানান, মাটি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে ভাটামালিকরা কৃষিজমির উর্বর অংশ কেনেন। বন্দর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘টপসয়েল কাটা একেবারেই নিষেধ। এটি পরিবেশ ও কৃষির জন্য ক্ষতিকর।’
ফরিদপুর : ফরিদপুরের ৯ উপজেলায় মাটিখেকোদের দৌরাত্ম্যে কমছে ফসলি জমি। বিরূপ প্রভাব পড়ছে পরিবেশে। সদর উপজেলাসহ নগরকান্দা, সালথা, বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা, সদরপুর, ভাঙ্গা উপজেলায় ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে বিক্রি করা হয়। বর্তমানে নগরকান্দার বিভিন্ন স্থানে মাটি কাটা অব্যাহত রয়েছে। এসব মাটির বেশির ভাগই যাচ্ছে ইটভাটায়। ফসলি জমিতে মাটি কেটে বড় বড় পুকুর তৈরি করা হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ফসলি জমি ধ্বংসের জন্য জমির মালিকরাও দায়ী। নগদ টাকার লোভে তারা ফসলি জমির মাটি বিক্রি করছেন। প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করলেও মাটি কাটা থামছে না। নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কাফী বিন কবির বলেন, ‘জমির মালিকদের সচেতন হতে হবে। তারা লোভে পড়ে মাটি বিক্রি করছেন। ফলে আজ ফসলি জমি ধ্বংসের পথে।’
হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জে থামছেই না টপসয়েল বিক্রি। উর্বরতা হারাচ্ছে কৃষিজমি। নবীগঞ্জ, চুনারুঘাট, শায়েস্তাগঞ্জ, আজমিরীগঞ্জ, বানিয়াচং, বাহুবল, লাখাই, মাধবপুর ও সদর উপজেলায় চলছে কৃষিজমি থেকে মাটি বিক্রি। প্রতিদিন হাওরের বিভিন্ন জমিতে লেগে থাকে ট্রাক ও ট্রাক্টরের দীর্ঘ লাইন। পরিবেশ আইন অমান্য করে যে-যার মতো ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নিচ্ছেন। কৃষিজমি উর্বরতা হারাচ্ছে। হুমকিতে পড়ছে পরিবেশের ভারসাম্য। অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃষকদের লোভ দেখিয়ে ফসলি জমির মাটি কিনে পাচার করছেন ইটভাটা, ভিট তৈরিসহ বিভিন্ন স্থানে।
গাজীপুর : মাটি ব্যবস্থাপনা আইন উপেক্ষা করে ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করছে প্রভাবশালী চক্র। জেলার বিভিন্ন এলাকায় চলছে এ চক্রের দৌরাত্ম্য। জমি হারাচ্ছে উর্বরতা। ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের। মাটিভর্তি ট্রাক চলাচলে ভেঙে যাচ্ছে গ্রামীণ সড়ক। কালিয়াকৈর, কাপাসিয়া ও কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা, সিটি করপোরেশনের ইসলামপুর, কারখানা বাজার, বাইমাইল, কাউলতিয়া, কড্ডা; সদর উপজেলার ভাওয়াল মির্জাপুর; শ্রীপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষিজমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করছেন মাটি ব্যবসায়ীরা। ওই মাটি ইটভাটা, নার্সারি ও নিচু জমি ভরাট কাজে সরবরাহ করা হচ্ছে। গভীর গর্ত করে মাটি কাটায় কমে যাচ্ছে ফসল উৎপাদন। জমির শ্রেণি পাল্টে যাচ্ছে।
মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জের সর্বত্রই কাটা হচ্ছে কৃষিজমির ওপর অংশের মাটি। বিক্রি হচ্ছে বৈধ-অবৈধ ইটভাটায়। মানিকগঞ্জে শতাধিক বৈধ-অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। সদর ও ঘিওর উপজেলায় মাটি কাটা হয় বেশি। অন্যদিকে ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়ায় সে জমি ডোবানালায় পরিণত হচ্ছে। ঘিওর উপজেলার বালিয়াখোড়া ও বানিয়াজুড়ি ইউনিয়নে রাতে তিন ফসলি জমির মাটি কাটার মহোৎসব চলে। মাটির ট্রাক অতিরিক্ত ওজন বহন করায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মহাসড়কসহ স্থানীয় আধাপাকা সড়ক। বানিয়াজুড়ি ও বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের পাচুুরিয়া, রাথুরা, জোকা, বড়টিয়াসহ অন্তত ২০ স্থানে ফসলি জমির মাটি কাটা হচ্ছে। মাটি বহনের জন্য ফসলি জমির ওপর দিয়েই তৈরি করা হয়েছে ট্রাক চলাচলের রাস্তা। ফলে শত শত বিঘা জমিতে চাষাবাদ করা সম্ভব হয় না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, বিভিন্ন কারণে প্রতি দুই বছরে ১ শতাংশ হারে কৃষিজমি কমছে। এভাবে কমতে থাকলে কৃষি উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
নীলফামারী : জেলার ৬ উপজেলায় ফসলি জমির উপরি স্তরের ৬ ইঞ্চি গভীরতায় মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। হুমকির মুখে পড়েছে আবাদি জমি। কমতে শুরু করেছে ফসলের উৎপাদন। ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের।
ফসলি জমির উপরিভাগের মাটিতে যে জিপসাম বা দস্তা থাকে তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মাটিতে যে জীবাণু থাকে এবং অণুজীবের কার্যাবলি আছে তা সীমিত হয়ে যাচ্ছে। এরপর যে মাটি থাকে, তাতে ফলন ভালো হয় না।
বরিশাল : বরিশালে টপসয়েল বিক্রির কারণে কমে যাচ্ছে ফসলের আবাদ ও উৎপাদন। ইটভাটা ও ডোবানালা ভরাটে চলে যাচ্ছে ফসলি জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি। এ ব্যাপারে প্রচার চালিয়ে লাভ হচ্ছে না।
জানা গেছে, বরিশাল জেলায় ২২৫টির মতো ইটভাটা রয়েছে। এর অর্ধেকেরও বৈধ কাগজপত্র নেই। বৈধ-অবৈধ ইটভাটার সিংহভাগ মাটি বিভিন্ন ফসলি জমির।
সাভার : সাভার ও আশুলিয়ার কয়েকটি গ্রামের তিন ফসলি জমি থেকে দেদার কাটা হচ্ছে মাটি। সে মাটি যাচ্ছে ইটের ভাটায়। ৩৫ থেকে ৪৫ ফুট গভীর করে মাটি কাটায় আশপাশের কৃষিজমিও ভেঙে পড়ছে।
পিরোজপুর : জেলার বিভিন্ন স্থানের মাটির ওপরের উর্বর অংশ বিক্রি করছে একটি মহল। ইটের ভাটা, রাস্তার দুই পাশ বাঁধা, মাটির আসবাব তৈরির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। কৃষিজমির টপসয়েল কেটে ফেলায় অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। এ অঞ্চলের কৃষি ফসল উৎপাদন দিনদিন কমে যাচ্ছে।
পিরোজপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শিপন চন্দ্র ঘোষ জানান, টপসয়েল নষ্ট করা বা বিক্রির কারণে কৃষিজমির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। টপসয়েল না থাকলে জমির উর্বরতা এবং ফলন কমে যাবে।
বগুড়া : বগুড়ায় প্রভাবশালীরা উর্বর মাটি কেটে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে কমে যাচ্ছে তিন ফসলি জমি। বিরূপ প্রভাব পড়ছে পরিবেশে। সরেজমিন দেখা গেছে, কাহালু উপজেলার বীরকেদার ইউনিয়নের শীপতলা গ্রামের চারপাশে তিন ফসলি জমির উর্বর অংশ কেটে বিক্রি করছেন প্রভাবশালীরা। এ উপজেলায় আবাদি জমি কমে যাচ্ছে। একই চিত্র বগুড়ার ১২ উপজেলার। জানা যায়, শাজাহানপুর, শেরপুর, সদর, আদমদিঘী, দুপচাঁচিয়া, শিবগঞ্জ, কাহালু, গাবতলী, সোনাতলাসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষিজমির টপসয়েল কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে আশাতীত ফলন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন চাষিরা। চাষিদের আবার নতুন করে সার, জৈবসার দিয়ে জমি তৈরি করতে হচ্ছে। আর বর্ষাকালে এসব জমিতে পানি জমে ফলনে ক্ষতি হচ্ছে। বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান ফরিদ বলেন, ‘কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি খুবই উর্বর। এ অংশ কাটার ফলে ফসল উৎপাদনক্ষমতা হ্রাস পায়।’
চাঁদপুর : চাঁদপুর সদরে মেঘনাপারের ফসলি জমির মাটি কাটা চলছে অবাধে। স্থানীয় কৃষকের অভিযোগ, একটি চক্র রাতের আঁধারে ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করে দিচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে শতাধিক ইটভাটা। এসব ভাটায় ইট তৈরির জন্য কৃষিজমির উপরি অংশের উর্বর মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে ফসলি জমি নষ্টের পাশাপাশি পরিবেশ হারাচ্ছে ভারসাম্য।
রাজশাহী : রাজশাহীতে কৃষকের লোভে উর্বরতা কমছে ফসলি জমির। তানোর-গোদাগাড়ীসহ জেলার সব উপজেলায় কৃষিজমির ওপরের মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে ইটভাটায়। এ ছাড়া গ্রামের ফসলি জমির মাটি কেটে ভরাট হচ্ছে শহরের পুকুর। রাস্তা সংস্কারেও ব্যবহার হচ্ছে এ মাটি।
রাজবাড়ী : জেলার বালিয়াকান্দি, সদর, গোয়ালন্দ ও পাংশা উপজেলার বিভিন্ন মাঠে জমির টপসয়েল কাটার মহোৎসব শুরু হয়েছে। জমির মাটিতে পুকুর খনন, ইটভাটায় মাটি বিক্রিসহ ইটভাটা নির্মাণ করে টপসয়েলের ক্ষতি করছেন ব্যবসায়ীরা। জেলায় ৯০টি ইটভাটা রয়েছে। এখানে প্রচুর ফ্রেশ মাটি লাগে। যেগুলো জমি থেকেই আসে।
নড়াইল : নড়াইলে আবাদি জমির টপসয়েল বিক্রির হিড়িক পড়েছে। গত তিন বছরে ভরাট হয়েছে নড়াইল শহর ও শহরতলির জমিদারবাড়ির ৬০টি ঝিল-পুকুর, ডোবানালাসহ বিভিন্ন জলাশয়। এক দশকে ৭ হাজার একরের অধিক আবাদি জমি কমেছে।
চুয়াডাঙ্গা : চুয়াডাঙ্গায় একের পর এক ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি বা টপসয়েল কাটা হচ্ছে। জমির উর্বরতা কমে যাওয়ায় কমে আসছে ফসলের উৎপাদন। একশ্রেণির মাটি ব্যবসায়ী কৃষকের পুকুর খনন করে মাটি বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে ফসলি জমি নষ্ট করছেন। বাড়তি টাকার লোভে কৃষকও টপসয়েল বিক্রি করছেন।
কক্সবাজার : ঈদগাঁও, জালালাবাদ, ইসলামাবাদ, পোকখালী, ইসলামপুর, রামুর কাউয়ারখোপ, ফতেখারকুল, চাকমারকুল, দক্ষিণ মিঠাছড়ি, চকরিয়ার ফাসিয়াখালী, খুটাখালী, উখিয়া ও টেকনাফে বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে টপসয়েল লুট হচ্ছে। মিনি (ডামপার) ট্রাকের মাধ্যমে রাতের আঁধারে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। প্রশাসন মাঝেমধ্যে অভিযান চালালেও থেমে নেই টপসয়েল লুট।
মেহেরপুর : সবজিভান্ডার খ্যাত মেহেরপুরের বেশির ভাগ জমিই তিন ও চার ফসলি। এসব উর্বর জমির টপসয়েল ট্রাক্টর ও ড্রাম ট্রাক দিয়ে বহন করে ইটভাটাসহ বিক্রি হচ্ছে অন্যত্র। এতে প্রতি বছর আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ যেমন কমছে, তেমন কৃষক দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির মুখে পড়ছেন।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা চায়না পারভিন বলেন, ‘জমির ওপরের অংশেই থাকে মূল জৈবশক্তি। ফসল উৎপাদনের জন্য এ মাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অথচ নগদ টাকার লোভে কৃষক জমির টপসয়েল বিক্রি করে নিজেদের পায়ে নিজেরাই কুড়াল মারছেন।’
মুন্সিগঞ্জ : শ্রীনগর উপজেলার আড়িয়ল বিলজুড়ে চলছে মাটি কাটার মহোৎসব। উপজেলার বাড়ৈখালী, হাসাড়া, ষোলঘর, শ্রীনগর, শ্যামসিদ্দি, রাঢ়ীখাল, ভাগ্যকুল, বাঘড়ার নদীনালা এবং খালবিল ছাড়া আড়িয়ল বিলে প্রায় সাড়ে ২৮ হাজার হেক্টর ফসলি জমি রয়েছে। সে জমির মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করতে সক্রিয় রয়েছে বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট।