
গতকাল বুধবার রাতে প্রাণ, প্রকৃতি, পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা কারিগরের আয়োজনে পঞ্চগড় সরকারি অডিটোরিয়ামে ‘শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক চোতনায় নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা: রাষ্ট্র ও সমাজের ভূমিকা’ শীর্ষক একক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
ফরহাদ মজহার বলেন, ‘সমাজ যখনি কোনো উৎসবে অংশগ্রহণ করে সেটা তখনি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রূপ নেয়। গণতান্ত্রিক উপলব্ধিকে শানিত করে। আর এটা যখনি শানিত হয় তখনি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সত্য হিসেবে সেটা কাজ করে। এই দুটা করতে হলে মতবাদ থেকে আমাদের চিন্তা করতে শিখতে হবে। রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী আকারে ভাবতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘দেশে বাঙালি জাতিবাদ নাই। কিন্তু আরেকটা জাতিবাদ আসছে। সেটা হচ্ছে ইসলামী জাতিবাদ। যারা মনে করে মুসলিম জাতি ছাড়া সকলেই আমার শত্রু। তাই বলব ইসলামী জাতিবাদের কোনো স্থান নেই।’
এই দার্শনিক বলেন, ‘ভাববেন না যে বাংলাদেশ থেকে শেখ হাসিনা এখন নাই। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় নাই- চলে গেছে, তাই আমাদের বাঙালি জাতিবাদ চলে গেছে। এটা ভুল ধারণা। তাই আমাদেরকে কথা বলতে হবে, আমাদের মতবাদ পরিত্যাগ করতে হবে। মতবাদ পরিত্যাগ করে আমাদের বুঝতে হবে যে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির জন্য আমরা লড়াই করেছি।’
তিনি বলেন, ‘এই বাংলা ভাষা এবং সংস্কৃতি সেই লড়াইয়ে যেটা পাকিস্তানি শাসকরা আমাদের শুনেনি। তারা আমাদেরকে ৭১ এ ঘৃণ একটা যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল। একটা হত্যাকাণ্ড করেছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। ৭১ কে যদি আমরা মুছে দিতে চাই এটা মারাত্বক ভুল করব। এবং যদি মুছে দিতে না চাই, তাহলে মনে রাখতে হবে যে বাংলা ভাষা আর সংস্কৃতি এটা আমার সংস্কৃতি। তাই আপনি যে পন্থীর লোক হন না কেন ৭১ নিয়ে কোনো দেনদরবার চলবে না।’
‘৭১ আমার ইতিহাসের অংশ’ উল্লেখ করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আমি বাংলা ভাষী, বাংলা আমার সংস্কৃতি এবং একি সঙ্গে ইসলাম আমার ধর্ম। যেমন আমাকে ইসলাম থেকে আপনারা বঞ্চিত করতে পারবে না। আমার বাংলা ভাষা ও আমার সংস্কৃতি থেকে আমাকে বঞ্চিত করতে পারবেন না। দয়া করে এই বিভাজন আর রাখবেন না।’
তিনি বলেন, ‘এই বিভাজন যদি রাখেন আমরা আরেকবার গৃহযুদ্ধের মধ্যে চলে যাব। এই যুদ্ধে যদি জড়াতে চাই, তাহলে আমাকে শিক্ষা লাগবে স্বাধীনতা লাগবে। যারা অতীতে ভুল করেছে, তাদের ভুলটা যদি তারা স্বীকার করে। তাদের যদি অনুশোচনা আসে। এই ভুল যদি কাটিয়ে উঠতে চাই তাহলে মনে রাখতে হবে ৭১ এ আমরা ভুল করি নাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘২৪ এর আন্দোলনের এই সংগ্রামে আমরা জয়ী হলাম। তবে অল্প একটু বাদ পড়েছে। পূর্ণ বিজয় হয়নি। কারণ আমরা এই বিজয়টাকে ঢুকিয়ে ফেলেছি ফ্যাসিস্ট সংবিধানে। আমরা আবারও ঢুকিয়ে পড়লাম পুরনো সংবিধানে। আমরা একটা নতুন সরকার গঠন করলাম পুরনো ফ্যাসিস্ট সংবিধানের অধীনে। ফলে আওয়ামী লীগ কিন্তু ক্ষমতায়। আমরা আওয়ামী লীগকে উৎখাত করতে পারিনি। আওয়ামী লীগ এখনো সেই ৭২ এর সংবিধানে রয়ে গেছে।’
এই কলামিস্ট বলেন, ‘ছাত্ররা যখন একটি নতুন ঘোষণা দিতে চেয়েছে, সেই নতুন ঘোষণা দিতে দেন নাই ড. ইউনূস। এটা তিনি ঠিক করেন নাই। দেরি হওয়ার আগেই আপনি (ড. ইউনূস) অবশ্যই যে ঘোষণা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি আমাদের দিয়েছেন সেই ঘোষণার প্রতিশ্রুতি আমাদের দিতে হবে।’
আগামী দিনে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে শিক্ষা ও সংস্কৃতির গুরুত্ব রয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন,‘বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে কাজ করলে বিরোধ আর বিভাজন দেশকে একটা গৃহযুদ্ধের দিকে নিয়ে যাবে। তাই অপূর্ণতা আর বিরোধ মীমাংসা করে নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে এগিয়ে যেতে হবে।’
পরে একক বক্তৃতা শেষে উপস্থিত দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন কবি, চিন্তাবিদ ও দার্শনিক ফরহাদ মজহার।
অনুষ্ঠানে সরকার হায়দারের সঞ্চালনায় লেখক গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।এ সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, শিক্ষক- শিক্ষার্থী, পরিবেশ প্রেমী ও সাংস্কৃতিক কর্মীসহ সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
শেষে প্রাণ, প্রকৃতি বিষয়ক ও যুদ্ধ বিরোধী গানের অনুষ্ঠান আয়োজন করে নাট্যদল ভূমিজ ও কারিগর।