Image description
 

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সশস্ত্র হামলার পর অঞ্চলজুড়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ধরপাকড় ও বসতবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ক্রমেই উদ্বেগজনক রূপ নিচ্ছে।

মানবাধিকারকর্মীদের মতে, উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলো এই হামলাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে দেশের সবচেয়ে বড় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়ন আরও জোরদার করছে।

এমন এক ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যে, যেখানে এক মুসলিম কিশোরকে প্রকাশ্যে রাস্তায় পাকিস্তানের পতাকার ওপর মূত্রত্যাগে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে।

 

বুধবার (৩০ এপ্রিল) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

 
 

প্রতিবেদনে বলা হয়, নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক মুসলিম ছাত্র ও তার বন্ধুর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে তারা ‘পাকিস্তানবিরোধী’ একটি পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেছে। যদিও কিশোরটি দাবি করেছে, পোস্টারটি ছিঁড়েছে তার এক বন্ধু, যে ঘটনার পর পালিয়ে যায়।

 

এরপর উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের সামনেই স্থানীয় কট্টর হিন্দুত্ববাদী ডানপন্থি গোষ্ঠীর সদস্যরা কিশোরটিকে কলার ধরে অপমান করে। তাকে জোর করে ‘ভারত মাতা কি জয়’ স্লোগান দিতে বাধ্য করা হয় এবং একপর্যায়ে পাকিস্তানের পতাকার ওপর প্রস্রাব করতে বাধ্য করা হয়।

ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে দেখা যায়, কিশোরটি আতঙ্কিত ভঙ্গিতে বারবার বলছে, সে নির্দোষ এবং পোস্টারটি ছেঁড়েনি। সে অনুরোধ করছে, তাকে যেন ছেড়ে দেওয়া হয়।

একজন ডানপন্থি ব্যক্তি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছিলাম, পোস্টার লাগাচ্ছিলাম, আর ওরা সেটা ছিঁড়ে দিল। যারা ভারতে থেকেও পাকিস্তানের হয়ে কাজ করে, তাদের সঙ্গে যেন পাকিস্তানের মতোই আচরণ করা হয়।

তিনি আরও বলেন, সরকার যেভাবে পাকিস্তানে হামলা করছে, তেমনি দেশের ভেতরে থাকা ‘জিহাদি’ বা ‘দেশদ্রোহী’-দেরও এখানেই ফয়সালা করা উচিত।

এই ঘটনার পাশাপাশি আরও একটি সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষমূলক ঘটনা ঘটেছে উত্তর প্রদেশের আলিগড়ে। অভিযোগ, সেখানে এক মুসলিম ফলের রস বিক্রেতার বিরুদ্ধে গুজব রটে যে তিনি রসে থুথু ও মূত্র মেশান।

এরপর একদল উত্তেজিত লোক, যাদের হাতে গেরুয়া পতাকা ছিল, তার দোকানে হামলা চালায় ও ভাংচুর করে। এই ঘটনার ভিডিও-ও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

আলিগড় পুলিশ জানিয়েছে, ভিডিও দেখে হামলাকারীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে এবং ইতোমধ্যে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনা ভারতের গণতন্ত্র ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য হুমকি। তারা অবিলম্বে নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।