Image description

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) ছাত্র আবিদুর রহমানকে ছাত্রদলের কর্মী সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় ১২ আসামিকে বেকসুর খালাস দিয়ে রায় ঘোষণা করেছিলেন বিচারিক আদালত। ওই ১২ আসামির সবাইকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

আদেশের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন অ্যাডভোকেট আজিমুদ্দিন পাটোয়ারি।

আসামিরা হলেন, ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রিত ছাত্রসংসদের সাবেক সহ-সভাপতি (ভিপি) মফিজুর রহমান জুম্মা, ছাত্রলীগ শাখার সভাপতি সোহেল পারভেজ, সাধারণ সম্পাদক বিজয় সরকার, সহ-সাধারণ সম্পাদক হিমেল চাকমা, ফেরদৌস রাসেল, শান্ত দেবনাথ, মাহাফুজুর রহমান, নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, দেবাশীষ চক্রবর্তী, মোস্তফা কামাল, রাশেদুর রহমান সানি ও সালমান মাহমুদ রাফসান।

এ সংক্রান্ত বিষয়ে দায়ের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি সৈয়দ জাহেদ মুনসুরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

 

আদালতে আজ শুনানি করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শিশির মনির, অ্যাডভোকেট ওজি উল্লাহ্। তার সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট আজিমুদ্দিন পাটোয়ারি, অ্যাডভোকেট ইয়াছিন আলফাজ ও অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম।

২০১৯ সালের ১০ জুলাই রায় ঘোষণা করেন পঞ্চম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ (ইনচার্জ) জান্নাতুল ফেরদেীস চৌধুরী। ওই রায়ের বিরুদ্ধে গত ১৬ এপ্রিল ক্রিমিনাল রিভিশন আবেদন করেন। ২০৪৭ দিন পরে ক্রিমিনাল রিভিশন করায় এই আদেশ দেন উচ্চ আদালত।

২০১১ সালের অক্টোবর মাসে দফায় দফায় পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল চমেকের ৫১তম ব্যাচের বিডিএস তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আবিদুর রহমান আবিদকে। ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামি ছাত্রলীগের ভিপিসহ ১২ নেতাকর্মীর সবাই দুই মাস আগে আদালতের রায়ে বেকসুর খালাস পান।

 

আবিদ হত্যা মামলার এজাহার ও চমেক শিক্ষার্থীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আবিদকে ছাত্রদল কর্মী বলে সন্দেহ করতেন চমেক ছাত্রলীগের নেতারা। শিক্ষার্থীদের মধ্যে আবিদের জনপ্রিয়তা ছিল। এ কারণে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর দুপুর ২টা, সন্ধ্যা ৭টা ও রাত ১০টায় তিন দফা পিটুনির পর চিকিৎসার সুযোগ না দিয়ে আবিদকে তার বোনের বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এমনকি বোনের বাসা থেকে চিকিৎসার জন্য চমেক হাসপাতালে আনা হলে সেখানেও বাধা দেন ছাত্রলীগে নেতাকর্মীরা। শেষে ওই বছরের ২১ অক্টোবর রাত সাড়ে ৮টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আবিদ। নিহত আবিদ ছিলেন কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার উত্তর বড়ইতলী গ্রামের মৃত নরুল কবির চৌধুরীর ছেলে।

হত্যাকাণ্ডের পর আবিদের মামা নেয়ামত উল্লাহ বাদী হয়ে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় ছাত্রলীগের তৎকালীন ২২ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার তদন্ত শেষে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পুলিশ ১২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। তারা হলেন ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রিত ছাত্রসংসদের সাবেক সহসভাপতি (ভিপি) মফিজুর রহমান জুম্মা, চমেক ছাত্রলীগ শাখার সভাপতি সোহেল পারভেজ, সাধারণ সম্পাদক বিজয় সরকার, সহসাধারণ সম্পাদক হিমেল চাকমা, ফেরদৌস রাসেল, শান্ত দেবনাথ, মাহাফুজুর রহমান, নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, দেবাশীষ চক্রবর্তী, মোস্তফা কামাল, রাশেদুর রহমান সানি ও সালমান মাহমুদ রাফসান। এজাহারভুক্ত বাকি ১০ আসামি অভিযোগপত্র থেকেই অব্যাহতি পেয়ে যান। আসামিরা সবাই ছাত্রলীগ ও ছাত্রসংসদের নেতাকর্মী। তাদের মধ্যে সালমান মাহমুদ রাফসান পরবর্তী সময়ে ছাত্রলীগের ভিপি ছিলেন।

এর পর ২০১৯ সালের ১০ জুলাই চট্টগ্রাম পঞ্চম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জান্নাতুল ফেরদৌস মামলার বিচার শেষে রায় ঘোষণা করেন। রায়ে লেখা হয়, ‘মফিজুর রহমান গংদের অত্র মামলার দায় হইতে খালাস প্রদান করা হইল। ’ ওই হত্যা মামলার আসামিদের অনেকেই পরে আওয়ামী লীগ সরকার ও বর্তমান সময়ে চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত।