
বর্তমানে প্রশাসনে সহকারী সচিব থেকে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে ছয় হাজার ৫৬০ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। এর মধ্যে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওএসডি) সংখ্যাই সাড়ে পাঁচ শর বেশি। এর মধ্যে সচিব ও সচিব পদমর্যাদার ১৪ জন, অতিরিক্ত সচিব ৩৬ জন, যুগ্ম সচিব ১৫৮ জন, উপসচিব ১১৭ জন, সিনিয়র সহকারী সচিব ১৪৪ জন ও সহকারী সচিব রয়েছেন ৮৮ জন। তাদের মধ্যে আবার রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে ওএসডি করা হয়েছে দেড় শতাধিক।
পাশাপাশি ছুটি ও প্রেষণের কারণে ২৫০ জন এবং পদোন্নতির কারণে ওএসডি আছেন ১৪৫ জন। এদের বেতন-ভাতা বাবদ প্রতি মাসে সরকারের খরচ অন্তত পাঁচ কোটি ১৭ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
বিষয়টি নিয়ে নাম প্রকাশ করে কথা বলতে রাজি হননি জনপ্রশাসন সচিবসহ দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা।
৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের ওএসডি করার পাশাপাশি অনেককে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
বর্তমানে তিনজন সিনিয়র সচিব, ৯ জন সচিব এবং সচিব পদমর্যাদার গ্রেড-১ পদের দুজনসহ ৫৫০ জন কর্মকর্তা ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) রয়েছেন। এর মধ্যে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে ওএসডি করা কর্মকর্তার সংখ্যা দেড় শতাধিক। আর ছুটি ও প্রেষণের কারণে ২৫০ জন এবং পদোন্নতির কারণে ওএসডি ১৪৫ জন। এ ছাড়া সরকার পরিবর্তনের পর ১৭ জন সচিব ও গ্রেড-১ কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের শতাধিক কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
ওএসডি থাকা এই বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা কোনো কাজ না করেই শুয়ে-বসে প্রতি মাসে বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা মিলিয়ে সরকারের কয়েক কোটি টাকা পকেটে পুরছেন।
শুধু যে শাস্তি হিসেবে ওএসডি করা হয়, তা নয়। চাকরির পদোন্নতির পর নতুন পদায়নের আগে অথবা এলপিআরে যাওয়ার আগেও ওএসডি করা হয়। ওএসডি কর্মকর্তারা বেতন-ভাতা, গাড়িসহ সব ধরনের সরকারি সুবিধাই পেয়ে থাকেন। শুধু কোনো দায়িত্ব থাকে না।
এর আগে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরপরই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। বিএনপি-জামায়াত ঘরানার শত শত কর্মকর্তাকে বছরের পর বছর ওএসডি করে রাখা হয়েছিল। অনেকে দীর্ঘদিন ওএসডি থাকাবস্থায় অবসরে গেছেন। আবার অনেককে পাঠানো হয়েছিল বাধ্যতামূলক অবসরে।
জনপ্রশাসন সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগের সময়ে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ২০২৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ডিসিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে ওএসডির তালিকা আরো লম্বা হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সিনিয়র সচিব, সচিব ও সমমর্যাদার পদে কর্মকর্তা রয়েছেন ৯৬ জন। এর মধ্যে ওএসডি ১৪ জন। ওএসডি সিনিয়র সচিবদের মধ্যে রয়েছেন মো. মোস্তফা কামাল, মো. মশিউর রহমান ও মো. মনজুর হোসেন। সচিব হিসেবে ওএসডি মো. সামসুল আরেফিন, মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন, মো. আজিজুর রহমান, মো. নুরুল আলম, মো. খায়রুল আলম শেখ, ফরিদ উদ্দিন আহমদ, রেহানা পারভীন, শফিউল আজিম এবং এ কে এম মতিউর রহমান। অন্যদিকে মন্ত্রিপরিষদসচিব ও প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিবসহ সিনিয়র সচিব ও সচিব পদে ১৭ জন কর্মকর্তা চুক্তিতে রয়েছেন।
প্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, ‘নিয়ম-কানুন মেনে জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী পদোন্নতি ও পদায়ন দিলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতো না। এ কারণে সরকার পরিবর্তনের পর একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় প্রশাসনে ওএসডির সংখ্যাটা বেড়েছে। কাজ না করেই বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তাকে বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিতে হচ্ছে সরকারকে। এতে সরকার বা জনগণের কোনো লাভ নেই।’