
Saiyed Abdullah ( সাইয়েদ আবদুল্লাহ)
রোহিঙ্গা এবং মিয়ানমার ইস্যুতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুইটা খবর আছে। রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক পাড়ায় এই ইস্যুগুলো নিয়ে খুবই গুরুত্বের সাথে আলোচনা হওয়া উচিৎ ছিলো, কারণ এগুলো স্টেট সিকিউরিটির সাথে জড়িত। কিন্তু কেন যেন সেই আলোচনাগুলো ঠিকমতো হচ্ছে না, যা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং একইসাথে কিছুটা রহস্যজনকও বটে।
যাইহোক ঘটনা দুইটা বলি—
১.
দৈনিক সমকাল আজকে প্রকাশ করেছে —
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে গত শনিবার পর্যন্ত নতুন করে ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে। এদের নিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মোট রোহিঙ্গার সংখ্যা দাঁড়াল অন্তত ১৩ লাখ ১৩ হাজারে। নতুন আসা রোহিঙ্গাদের আবাসস্থলের ব্যবস্থা করতে বাংলাদেশকে চিঠি দিয়েছে জাতিসংঘে শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর।
সমকালের সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে এই শনিবার পর্যন্ত দেড় বছরে আসা রোহিঙ্গাদেরকে 'নতুন' হিসাবে শনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসেছে গত বছরের(২০২৪) মে-জুনের পর (সেই হিসাবে বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে বেশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটেছে)। সমকাল তাদের ওই রিপোর্টে আরও উল্লেখ করেছে—চলতি বছরে প্রায় প্রতিদিন রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
শুধু গত সপ্তাহতেই রাখাইন থেকে এসেছে ১ হাজার ৪৪৮টি পরিবার। এ ছাড়া আলাদাভাবে এসেছে আরও ৫ হাজার ৯৩০ জন। তারমানে শুধু গত সপ্তাহতেই বিশাল বড় সংখ্যক রোহিঙ্গারা দেশে প্রবেশ করেছে।
২.
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা গতকাল রবিবার প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন,
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের জন্য করিডর সুবিধা দেওয়ার জন্য জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতরেস গতমার্চে এসে যেই প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিছুটা শর্তসাপেক্ষে সেই করিডর সুবিধা দেওয়ার জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
এই হলো দুইটা ঘটনা।
ওপরে বর্ণিত দুইটা ইস্যু নিয়ে অবশ্যই রাজনৈতিক মহলে ক্রিস্টাল ক্লিয়ার আলোচনার দরকার আছে।
রাখাইনে করিডর দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার যে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলো, সেটা কি রাজনৈতিক সকল স্টেকহোল্ডার এবং নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ যারা আছেন, তাদের সাথে প্রোপার আলাপ আলোচনার মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে? মিয়ানমারে এখন একটা ফুলস্কেল গৃহযুদ্ধ চলমান। বাংলাদেশের সিকিউরিটি ইস্যু যথার্থভাবে বিশ্লেষণ না করে হুটহাট কোন সিদ্ধান্ত নিলে বাংলাদেশ যে ওই যুদ্ধের প্রভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক ইস্যুতে জড়িতে যেতে পারে— এই রিস্ক এসেসমেন্ট ঠিকমতো কি করা হয়েছে? আর কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে সেটা ট্যাকেল করার মত সামরিক এবং স্ট্র্যাটেজিক সক্ষমতা বাংলাদেশের এই মুহুর্তে আছে কি? দেশের ইন্টার্নাল ল' এন্ড অর্ডার সিচুয়েশন নিয়েই যেখানে বাংলাদেশকে স্ট্রাগল করতে হচ্ছে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে, সেখানে হুটহাট করে এত বড় ডিসিশন সরকার কীভাবে নিচ্ছে? এই ব্যাপারে দেশের পলিসি লেভেলে সিরিয়াস আলোচনার দাবি রাখে।
আর নতুনকরে এইযে ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করলো এবং স্রেফ গত সপ্তাহতেই ১ হাজার ৪৪৮ টি পরিবার এবং আলাদাভাবে আরও ৫ হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশ করলো —এই তথ্যগুলো কেন গোপন রাখা হলো?
কিছুদিন আগে তো প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা বিষয়ক বিশেষ সহকারী এবং পরবর্তীতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদে নিয়োগ পাওয়া খলিলুর রহমান এমন একটা হাইপ তৈরী করে ফেললেন যেন ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা ফেরত নিবে মিয়ানমার।
রিফিউজি ইস্যু নিয়ে যাদের জানাশোনা আছে, তারা তখনই এর প্রতিবাদ জানায় এজন্য যে এটা একদমই ইম্প্যাকটিক্যাল একটা ব্যাপার। (ইন্টারন্যাশনাল রিফিউজি ল' আমার নিজেরও একাডেমিক পড়াশোনার একটা সাবজেক্ট ছিলো, সেই ক্ষুদ্র জ্ঞানে এটা মেলানোটা খুব কষ্টকর ছিলো না যে বর্তমান গৃহযুদ্ধকালীন অবস্থায় ওইভাবে রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরানো সম্ভব না)। কিন্তু এমনভাবেই সরকার হাইপ তৈরী করেছিলো যে বহু মানুষ মনেই করেছিলো প্রায় পৌনে দুই লক্ষ রোহিঙ্গাকে হয়ত এই সরকার দ্রুততার সাথে ফেরত পাঠিয়ে দিলো বলে! কিন্তু বাস্তবতা ছিলো টোটালি আলাদা। পরবর্তীতে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এবং স্বয়ং নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানও জানান বিদ্যমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের ফেরানো সম্ভব নয়। তাহলে কি খলিলুর রহমান যেইভাবে রোহিঙ্গাদের ফেরানোর ব্যাপারে আওয়াজ তুলেছিলেন, সেটা ছিলো স্রেফ স্টান্টবাজি?
যখন উনি এই মিথ্যা হাইপ তৈরী করছিলেন, তখনও দেশে ঝাঁকে ঝাঁকে নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটেছে। রোহিঙ্গা বিষয়ক দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি ব্যক্তি হিসাবে এটা কি উনার অজানা থাকবার কথা ছিলো? এই ব্যাপারগুলো কেন গোপন রাখলেন তিনি? উনি যখন ফেরত নেওয়ার হাইপ তুললেন, উল্টো ততোদিনে নতুন করে লক্ষাধিক রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটেছে!
অথচ ওই স্ট্যান্টবাজির খবর মিডিয়ায় যতোটা দেখতে পেয়েছেন সবাই, তখন কি নতুন করে অনুপ্রবেশের খবর সেভাবে জানতে পেরেছিলেন সবাই? এই প্রশ্নগুলোর জবাব কি খলিলুর রহমান সাহেবের কাছে চাওয়া উচিৎ নয়?
মিয়ানমার এবং রোহিঙ্গা ইস্যু দেশের সিকিউরিটির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। অথচ সেই ইস্যু নিয়ে এত ধোঁয়াশা কেন তৈরী করা হচ্ছে?
দেশের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে দায়িত্বশীল সবারই উচিৎ হবে এই ইস্যুগুলোতে সজাগ দৃষ্টি রাখা। দল-মত একেকজনের একেকরকম হতে পারে, কিন্তু দেশের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট ইস্যু সবকিছুর ওপরে স্থান পাওয়া উচিৎ।